আর্কাইভ  শনিবার ● ১৬ আগস্ট ২০২৫ ● ১ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ১৬ আগস্ট ২০২৫

দারিদ্র্য ও বয়স জয় করে বেরোবিতে সামিয়েল, পাশে দাঁড়ালেন ছাত্রদল নেতা জহির

শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement Advertisement

বেরোবি প্রতিনিধি: সামিয়েল সামি। উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী  উপজেলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের দারিদ্র্য আর অভাবের পরিবার থেকে  উঠে এসে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুধু দারিদ্র্যতা নয়। শিক্ষা জীবনেও রয়েছে অনেক গ্যাপ।  ২০১২ সালে এসএসসি পাস করেন। এরপর কলেজে ভর্তি হলেও অভাব আর অনটনে পড়াশোনা চালিয়ে চাওয়া সম্ভব হয়নি। কাজ করতেন রাজমিস্ত্রির। এতে করে তাঁদের সংসার চলত। 
 
ছোট ভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াবেন সেজন্য কুড়িগ্রাম ছেড়ে কাজের উদ্দেশ্য আসেন কুমিল্লায়। এখানে থেকে কাজ করতেন ছোট ভাইকে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু ছোট ভাই আর পড়াশোনা চালিয়ে যায়নি। সামিয়েল হতাশ হন। এর মধ্যে সামিয়েল বিয়েও করেছেন। দুই বছরের সন্তানও আছে৷ তবে অভাবের সংসারে বিয়ে করলেও সামিয়েলকে তার স্ত্রী সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে। 
 
একদিন সামিয়েল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তিনি নিজেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়বেন। এদিকে এসএসসি পাস করার পর পড়াশোনা চালিয়ে না যাওয়ায় তার ৬ বছরের গ্যাপ পড়েছে। তাই পুনরায় ২০১৮ সালে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। চলে এক নতুন যুদ্ধ। আশেপাশে মানুষের কটূক্তি আর বিদ্রুপ তাকে আটকাতে পারেনি। তাকে দেখে অনেকেই হাসতো যে বুড়ো বয়সে আবার পড়াশোনা। তবে থেমে যাননি সামিয়েল সামি।  টাপুর চর বিজি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং রৌমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর প্রস্তুতি নেন ভর্তি পরীক্ষার কিন্তু অভাবের কারণে কোনো বই কিনিতে পারেননি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাইয়ের থেকে তার ভর্তি প্রস্তুতির বই নিয়েই প্রস্তুতি নেন সামিয়েল। একদিকে স্ত্রী অন্য দিকে পরিবার। আবার  নিজে কাজ করতেন রাজমিস্ত্রির। সব মানিয়ে নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেন। তবে তার এই যাত্রা সবচেয়ে বেশি সহযোগী ছিলেন তার স্ত্রী। প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি৷ সেই সময় তার ঘর আলোকিত করে আসে কন্যা সন্তান। তাই পরেরবার ভর্তি পরীক্ষা দেন। 
 
ভর্তি পরীক্ষা দিয়েই বাজিমাত সামিয়েলের।  রাবিতে মেধা তালিকায় ১১৪৫ কুবিতে ৩১৪ এবং জিএসটি ২০৯৩। পরে ভর্তি হন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রাশন বিভাগে। দেরিতে হলেও স্বপ্নপূরণ হলো সামিউলের। তবে স্বপ্ন পূরণ হলেও অভাবের সংসারে কীভাবে চালিয়ে যাবেন সেটা নিয়েও পড়েছিলেন দুশ্চিন্তায়।  ইতিমধ্যে তার পাশে দাঁড়িয়েছে বেরোবি ছাত্রদল নেতা জহির। জহির তার মেসের ভাড়া এবং বইসহ যাবতীয় খরচ জহির বহন করবে। 
 
ছাত্রদলের জহির জানায়, সামিয়েল ভাই একটি অবিশ্বাস্য স্বপ্ন জয় করেছে। এমন পথ পাড়ি দেওয়া খুবই কঠিন। ভাই তা পেরেছে। ভাইয়ের যাত্রায় আমি সবসময় পাশে থাকবো। আমাদের রাজনীতি তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যই। তাদের জন্য কাজ করা। তাদের পাশে থাকা। 
 
সামিয়েলের ইচ্ছে প্রশাসন ক্যাডার হওয়া। সে অনুযায়ী পড়াশোনা করছেন। যদিও পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে। তবে তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। 
 
এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক নিয়াজ মাখদুম বলেন, সামিয়েল সামির মতো শিক্ষার্থীর দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার অভিযাত্রা শুরু করা নিঃসন্দেহে অন্যদের জন্য এক অনুপ্রেরণার বাতিঘর। তার এই যাত্রায় যারা পাশে থেকেছেন, স্বপ্নপূরণের সারথি হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন—বিশেষ করে আমাদের নিজেদের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই যারা এ মহৎ উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন—তাদের অবদান সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কারণ দিন শেষে আমাদের প্রকৃত লক্ষ্যই হলো এমন মানবিক, সহানুভূতিশীল ও সত্যিকারের মানুষ গড়ে তোলা, যারা কেবল নিজেদের জন্য নয়, সমাজের জন্যও আলো ছড়াবে।

মন্তব্য করুন


Link copied