আর্কাইভ  বুধবার ● ৮ অক্টোবর ২০২৫ ● ২৩ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ৮ অক্টোবর ২০২৫
‘আইতোত হঠাৎ করে নদীর পানি এক্কেবারে বাড়ি গেইল, ‘কেমন করি খাওয়া দাওয়া করমো, সেই চিন্তা বাহে’

তিস্তাপাড়ে হাহাকার
‘আইতোত হঠাৎ করে নদীর পানি এক্কেবারে বাড়ি গেইল, ‘কেমন করি খাওয়া দাওয়া করমো, সেই চিন্তা বাহে’

নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না শেখ হাসিনা ও কামাল

আইসিটি আইন সংশোধন
নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না শেখ হাসিনা ও কামাল

মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই : সারজিস আলম

মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই : সারজিস আলম

সংসদে নারীদের জন্য আলাদা ৩০০ আসনের প্রস্তাব

সংসদে নারীদের জন্য আলাদা ৩০০ আসনের প্রস্তাব

লালমনিরহাটে বন্যার উন্নতি হলেও কমেনি দুর্ভোগ

মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫, রাত ০৯:৫৬

Advertisement

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় তিস্তাপাড়ের লালমনিরহাটে পানি কমতে শুরু করলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর পানি নেমে গেলে দৃশ্যমান হয়েছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন।

জানা যায়, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। গত রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে জেলায় দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ রক্ষায় সেদিন রাতে ফ্লাড বাইপাস কেটে দেয় কর্তৃপক্ষ। জারি করা হয় রেড অ্যালার্ট, নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় ভাটির বাসিন্দাদের। পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।

বন্যার পানির স্রোতে ধসে গেছে কাঁচা-পাকা সড়ক ও ব্রিজ-কালভার্ট। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তিস্তাপাড়ের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তরা পড়েছেন চরম কষ্টে। রোববার রাতটি কাটে ভয় ও আতঙ্কে। স্রোতের পানিতে অনেকের ঘরবাড়ি ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) পানি কমে গেলে বন্যার উন্নতি হয়, তবে রয়ে গেছে ভয়াবহ ক্ষতির চিত্র। পাকা-কাঁচা সড়ক ধসে পড়েছে, ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে গেছে। নিম্নাঞ্চলের আমন ধানের খেত পানিতে তলিয়ে গেছে, কোথাও আবার বালুর আস্তরণে ঢেকে গেছে ফসল। চরাঞ্চলের অধিকাংশ খেতে ফসল নষ্ট হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

বন্যার পানি নামলেও মঙ্গলবারের প্রচণ্ড রোদে খেতের পানি গরম হয়ে ধানগাছ পচে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রণয়নে কাজ করছেন।

গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক তাহাজুল ইসলাম বলেন, ঋণ করে আগাম আমন ধান লাগিয়েছিলাম। এক রাতের বন্যায় সব ডুবে গেছে, খেতজুড়ে শুধু বালু। এখন ঋণ শোধ তো দূরের কথা, খাবার নিয়েও চিন্তা।

মৎস্য চাষি ডলার বলেন, নেট জাল দিয়েও রক্ষা করা যায়নি, বন্যার স্রোতে ২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

গড্ডিমারীর কৃষক হাফিজুর বলেন, ধানের গাছ পচে যাচ্ছে। ধান না হলে খাব কী? প্রতি বছরই বন্যায় আমাদের কষ্টের ফসল ভেসে যায়। আমরা ত্রাণ নয়, চাই তিস্তা নদীর স্থায়ী সমাধান।

গৃহিণী কোহিনুর বেগম বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলেও কষ্ট কমেনি। ঘরের ভেতরে গর্ত, বেড়া নষ্ট, চুলা ডুবে গেছে। না মেরামত করলে থাকা যাবে না। বন্যা হলেও কষ্ট, পানি কমলেও কষ্ট।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আহমেদ বলেন, বন্যার পানির স্রোতে জেলার পাঁচটি সড়কের ৫-৬ শত মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে যোগাযোগ সচল করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. শাইখুল আরেফিন বলেন, ৯০৫ হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত ছিল, যা এখন মুক্তি পেয়েছে। কিছু খেত বালু ও পলিতে ঢেকে নষ্ট হয়েছে, তবে পরিমাণ খুবই সীমিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, উজানের ঢল ও বৃষ্টিপাতে রোববার রাতে বন্যা হলেও পরদিন পরিস্থিতির উন্নতি হয়। বর্তমানে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, ফ্ল্যাশ ফ্লাডের পানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নেমে গেছে। কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, তাদের তালিকা করে পুনর্বাসনে সহায়তা দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied