আর্কাইভ  বুধবার ● ২৭ আগস্ট ২০২৫ ● ১২ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৭ আগস্ট ২০২৫
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডিসি ডিবি হারুনের দাপটে ভিন্ন খাতে যায় মামলার তদন্ত

মুনিয়া হত্যারহস্য ফাঁস
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডিসি ডিবি হারুনের দাপটে ভিন্ন খাতে যায় মামলার তদন্ত

ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রাখুন

ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রাখুন

ভোটারদের দ্বারে প্রার্থীরা, তিন স্তরের নিরাপত্তাসহ থাকবে সেনা মোতায়েন

প্রচার শুরু, হাড্ডাহাড্ডির আভাস
ভোটারদের দ্বারে প্রার্থীরা, তিন স্তরের নিরাপত্তাসহ থাকবে সেনা মোতায়েন

চীনের পথে এনসিপির ৮ নেতা

চীনের পথে এনসিপির ৮ নেতা

ড. ইউনূসের ওপর আস্থা রাখুন

বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, রাত ০১:০১

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: গত সোমবার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য দেশ প্রস্তুত।’ আগামী রোজার আগে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিতে আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছিলেন। তিনি এবং তাঁর সরকার সেই সিদ্ধান্তে অবিচল। নির্বাচনের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তিনি কথা দিলে কথা রাখেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের শান্তির প্রতীক। বাংলাদেশে তিনি যতটা সমাদৃত, সম্মানিত তার চেয়ে বিশ্বজুড়ে তাঁর সম্মান সুনাম। সারা বিশ্বে তিনি শান্তির রোল মডেল, তারুণ্যের আইকন। আমাদের সৌভাগ্য যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিকে আমরা সরকার প্রধান হিসেবে পেয়েছি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ আগ্রহ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদ গ্রহণ করেননি, বরং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অভিপ্রায়ে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। সারাজীবন তিনি ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে দূরে থেকে মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছেন। এ কথা সবাইকে স্বীকার করতে হবে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান থাকার জন্য এখনো বাংলাদেশে আশার আলো নিভে যায়নি। এখনো বাংলাদেশ পথ হারায়নি। গত এক বছরে স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিনির্মাণ করার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন ৮৪ বছর বয়সি এই তেজদীপ্ত মানুষটি। তিনি নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। এ কথা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে গত এক বছরে বাংলাদেশের মানুষ যে প্রত্যাশা করেছিল, সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই আশা ভঙ্গের বেদনা আছে। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি বিষয়ে মানুষ একমত সেটা হলো যতক্ষণ পর্যন্ত ড. ইউনূস আছেন ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ সঠিক পথেই চলবে। আমরা যে বৈষম্যমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলাম, সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমাদের অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সারা বিশ্বে সম্মানিত এবং পুরস্কৃত। শুধু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রেসিডেন্ট মেডেল অব ফ্রিডম সম্মানে ভূষিত। তিনি ফিফার শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। অ্যাকটিভিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দুই শতাধিক পুরস্কারে তাকে সম্মানিত করা হয়েছে। সারা বিশ্বের এখন যারা সরকার প্রধান বা রাষ্ট্র প্রধান আছেন, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধার আসনে আসীন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের গর্বের এবং অহংকারের বিষয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস আছেন এজন্যই আমরা গত এক বছরের সব প্রতিবন্ধকতা, নানা ষড়যন্ত্র পার করেছি। সর্বশেষ মার্কিন শুল্কের কথাই ধরা যাক না কেন, মার্কিন শুল্ক নিয়ে সারা বিশ্বে যখন তোলপাড়, তখন বাংলাদেশ অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছে। যখন বাংলাদেশের ওপর অন্যায্য শুল্ক আরোপ করা হলো, তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিচলিত হননি। কোনো কূটনৈতিক বিতর্কে জড়াননি, বরং তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠির ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর শুল্ক প্রথমে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই আগস্ট মাসের শুরুতে বাংলাদেশের ওপর স্বল্প শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। যা অন্যান্য দেশে আরোপিত শুল্কহারের চেয়ে স্বস্তিদায়ক। এটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশাল কূটনৈতিক বিজয়। কাজেই তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত দায়িত্বে আছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশের আশাহত হওয়ার কারণ নেই। বাংলাদেশকে তিনি কাঙ্ক্ষিত বন্দরে নিয়ে যাবেন এই বিশ্বাস আছে দেশবাসীর। তিনি প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন ভেবেচিন্তে, ধীর স্থিরভাবে। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে গণতন্ত্রের বিনির্মাণের পথ তিনি তৈরি করছেন। আর এই কারণেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আমাদের সবাইকে আস্থা রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন।

এটাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈশিষ্ট্য। তিনি যখন একটি বিষয়ে অঙ্গীকার করেন, তখন সেই অঙ্গীকার পূরণ করেন। এ কারণেই তিনি সারা বিশ্বের কাছে আস্থার প্রতীক। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন জোবরা গ্রামে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন যে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচন করবেন। বাস্তবে তাই করেছেন তিনি। আগে বাংলাদেশ ছিল ক্ষুধা দারিদ্র্যের প্রতীক। প্রতিটি গ্রামে অনাহারে অর্ধাহারে মানুষ মৃত্যুবরণ করত। গৃহহীন অনাহারি মানুষের আর্তনাদ ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই ভাগ্যাহত মানুষ কার্তিকের মঙ্গায় বস্ত্রহীন অবস্থায় জাল পেঁচিয়ে লজ্জা নিবারণ করতেন। সেই অবস্থা থেকে ড. ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের মানুষের মুখে হাঁসি ফুটিয়েছেন, তাদেরকে স্বাবলম্বী করেছেন, তাদেরকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। বাংলাদেশের গ্রামে এখন দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এটি ড. ইউনূসের কৃতিত্ব। তাঁর উদ্ভাবিত ‘ক্ষুদ্র ঋণ’ কার্যক্রম গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে বড় অবদান রেখেছে। তিনি যেমন তরুণ সমাজকে বলেছিলেন যে, সবাই যেন চাকরির পেছনে না ছোটে, তারা যেন সকলে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠে। নিজেরাই যেন, চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। তার সামাজিক ব্যবসার ধারণা আজ বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সামাজিক ব্যবসা এখন বিশ্বের বৈষম্য মুক্তির অন্যতম একটি কার্যকর পন্থা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এভাবেই সারাজীবন তিনি প্রমাণ করেছেন, দায়িত্ব নিয়ে তিনি তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। আর এই বিবেচনা থেকেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বলেছেন, তিনি নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে, বাংলাদেশের কল্যাণের জন্যই এই ঘোষণা দিয়েছেন।

আমরা গত এক বছরে নিশ্চয়ই উপলব্ধি করতে পেরেছি যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কোনো ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ নেই। তাঁর ক্ষমতার লোভ নেই। তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চান না। তিনি বারবার বিভিন্ন জাতীয় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, নির্বাচন দিয়ে তিনি মানব সেবার কাজে ফিরে যাবেন। পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার তাঁর কোনো ইচ্ছা নেই। অর্থাৎ সারা দেশের মানুষের তাঁর প্রতি যে আস্থা এবং তাঁর যে নিরপেক্ষ চরিত্র সেটি তিনি ক্ষুণ্ন করতে চান না। আর এ কারণেই সব রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত তাঁর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখা। আমরা লক্ষ্য করছি ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার পরপরই কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে থেকে অনভিপ্রেত এবং অসহিষ্ণু আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনকে অনিশ্চিত করার জন্য নিত্যনতুন দাবি উত্থাপন করছে। যে সব দাবিগুলো শুধু অযৌক্তিক নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন বানচালেরও অশনিসংকেত।

আমরা জানি যে, পতিত ফ্যাসিবাদ দেশের নির্বাচন হতে দিতে চায় না। নির্বাচনের আগে দেশে একটি নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে নানা মহল। আর এ কারণেই এ সময় আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্ব আমাদের মানতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। কাজেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, তখন সব রাজনৈতিক দলকে এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের কারণেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। নিজের লাভবান হওয়ার জন্য কিংবা ভোগবিলাসের জন্য তিনি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেননি।

সব রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত মনে করে যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন যোগ্য ব্যক্তি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সঠিক গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটি যদি তারা স্বীকার করেন তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর আস্থা রাখতে হবে। তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা এখন করা যাবে না। আমরা একটি জটিল সংকটময় সময় পার করছি। এ সময় দেশেবিদেশে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আর সে কারণেই আমরা যদি আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করি, আমরা যদি নিজেদের মধ্যে হানাহানি করি তাহলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় লক্ষ্যচ্যুত হবে। আর সে কারণেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তাঁর রোডম্যাপ অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। তিনি যেহেতু বলেছেন যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, সেই ফেব্রুয়ারিতে শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, আমরা যদি নির্বাচন পিছিয়ে দেই বা রাজনৈতিক অনৈক্যের কারণে যদি নির্বাচন পণ্ড হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের জনগণ। দেশে নতুন করে দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা, হানাহানি। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে বাধ্য। আমরা নিশ্চয়ই চাইব না যে, বিশ্ববরেণ্য একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে আমরা অসম্মানিত করি। তাই নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কেউ পিআর পদ্ধতি চাইতে পারেন, জুলাই সনদ নিয়ে অনেকের অনেক রাজনৈতিক বক্তব্য থাকতে পারে। যার যে বক্তব্যই থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত সকল সমাধান হোক সার্বভৌম সংসদে। বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করুক। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে নানা মত, নানা পথের মধ্যে আলাপ আলোচনা, বিতর্ক হোক। এই বিতর্কের মধ্যে দিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত পথ বেরিয়ে আসবেই। বাংলাদেশের গন্তব্য নির্ধারণ করবে জনগণ। আর এ কারণেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিয়ে সঠিক কাজটি করেছেন। তিনি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর এখন উচিত তাঁর এই সিদ্ধান্তের আলোকে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করা এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্বাচনকে উৎসবে পরিণত করা।

মন্তব্য করুন


Link copied