নিউজ ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচনের জন্য জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যোগ্য ও শক্তিশালী প্রার্থী খুঁজছে দলটি। আসন্ন নির্বাচনে অন্তত ১০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এর মধ্যে বিজয় সম্ভাবনাময় এলাকা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য আসন সমঝোতার চিন্তাও করছে এনসিপি। দলটি ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে এবং নির্বাচন ও আসন বণ্টন নিয়ে নানা স্তরে আলোচনা চলছে। যদিও এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি, তবে নেতাদের ভাষ্য, রাজনৈতিকভাবে যেদিকে অর্জন বেশি, সেদিকেই জোট বাঁধবে এনসিপি। অন্যদিকে বিএনপিও চাইছে এনসিপিকে নিজেদের নির্বাচনি সমঝোতায় বা জোটে অন্তর্ভুক্ত করতে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সময়ের আলোকে জানান, এনসিপি যদি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়, তবে তাদের প্রায় ২০টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে।
সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুটি সাক্ষাৎকারে বলেন, বিএনপি অন্য দলকে নিয়ে সরকার গঠনে প্রস্তুত। এসব দলের মধ্যে গত বছর অভ্যুত্থানে সামনের কাতারে থাকা ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি নতুন দলও রয়েছে। কম-বেশি সবাইকে নিয়েই আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করতে চায়।
এ প্রসঙ্গে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, আমরা অবশ্যই কারও না কারোর সঙ্গে জোট করব। আমরা দেখছি কার সঙ্গে গেলে রাজনৈতিক অর্জন ভালো হবে। সব দলের সঙ্গে আমরা আলাদাভাবে বসছি। তবে এখনও আসনভিত্তিক কথাবার্তা হয়নি। প্রথম আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সক্ষমতা অর্জন করতে চাই। অন্তত ১০০ আসনে নির্বাচন করতে চাই। তার মধ্যে যতটা সম্ভব আসন সমঝোতার চেষ্টা করব। সেই সংখ্যাটা আরও পরে ঠিক করা হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জানান, বুধবার রাতে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বাসায় নির্বাচনি জোট বিষয়ে এক জরুরি বৈঠক হয়েছে। সেখানে অনেক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে; তবে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। বিএনপি যদি কোনো আসন তালিকা চেয়ে থাকে সেটি হয়তো আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা তো বিভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে যাচ্ছি। এখনও নির্বাচন ও জোট বিষয়ে কংক্রিট সিদ্ধান্ত হয়নি। পরস্পরের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এনসিপির বিষয়ে দল থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আসন তারা চায়নি বা কোনো লিস্ট পাঠায়নি। কতটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে; তাও ঠিক করা হয়নি। ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আলাপ-আলোচনা চলছে। এখনও আসন সমঝোতার বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বশীল নেতারা শরিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে আসন ছাড়লেও স্থানীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা এবার অনেক বেশি। কারণ একেক আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন মাঠে। এ বিষয়ে সেলিমা রহমান বলেন, বিভাগওয়ারি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য দুটি বিভাগের প্রার্থীদের ডেকে কথা বলছেন। নির্বাচন নিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত ও হাইকমান্ডের বার্তা সম্ভাব্য প্রার্থীদের পৌঁছে দিচ্ছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮টি আসন ছাড় দিলেও এবার কত আসনে ছাড় দেবে তা ঠিক করতে পারেনি বিএনপি। দলটির যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ নির্বাচনে তিনশ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রথম দফায় ১৪০ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন জোটের সমন্বয়ক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম। ১৪০ তালিকার মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের ৬টি দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বগুড়া-২ নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-৮ আসনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, লক্ষ্মীপুর-৪-এ জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, ফেনী-৩ আসনে সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম এবং জামালপুর-৫ আসনে ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু।
২০১৮ সালের নির্বাচনে মিত্রদের মধ্যে শুধু জামায়াতকেই বিএনপি ২২টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, এনসিপি বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিলে তাদের ২০টি আসনে ছাড় দেওয়া হতে পারে।