আর্কাইভ  সোমবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ৭ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে সরকার

জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর নজরদারি বাড়াচ্ছে সরকার

বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী নেই

ভোটের হাওয়া
বিএনপি-জামায়াত ছাড়া অন্য দলের প্রার্থী নেই

পাল্টে যাবে রাজনীতির হিসাব

পাল্টে যাবে রাজনীতির হিসাব

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী ছয় নেতা, রাজনীতিতে কীসের ইঙ্গিত

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী ছয় নেতা, রাজনীতিতে কীসের ইঙ্গিত

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী ছয় নেতা, রাজনীতিতে কীসের ইঙ্গিত

রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, রাত ১১:৫৬

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয় নেতাকে নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

সাধারণের মধ্যেও দেখা দিয়েছে কৌতুহল। কেন তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে নিচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক আর বিশ্লেষণ।

প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে ড. ইউনূসের এমন সফরকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অনেকেই বলছেন, বিশ্বকে ঐক্য দেখাতেই প্রধান উপদেষ্টা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবার সরকার প্রধানে সঙ্গে নেতাদের এই সফরকে সরলভাবে দেখতে চান না অনেকেই। তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবিত করার মিশনও হতে পারে এই সফর।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে দেশ চালানোর দায়িত্ব যেহেতু রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকবে, তাই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সফরে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।  

রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, আগে ক্ষমতাসীন দল বিদেশ সফরে গেলে নিজেদের দল বা জোটের কয়েকজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিত। কিন্তু এখন তো কোনো দল ক্ষমতায় নেই। তাই এবার কিছু নির্দিষ্ট দল থেকে প্রতিনিধি নেওয়াকে অনেকে বিশেষ কৌশল মনে করছেন। কেউ বলছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে এখনো সমঝোতা হয়নি, তাই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ হিসেবেও এটি হতে পারে। আবার কেউ মনে করছেন, বিশ্বকে দেখানোর জন্য যে দেশে জাতীয় ঐক্য আছে, সরকার সেই বার্তাও দিতে চাচ্ছে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সেই হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য এটি হতে পারে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার শেষ সুযোগ। তাই তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে চান এবং ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত করাতে চান। এই লক্ষ্যেই তিনি এবার রাজনৈতিক নেতাদের সফরসঙ্গী করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক নেতা নিউইয়র্ক যাচ্ছেন, তারা হলেন— বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা,  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এবং জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ড. নকিবুর রহমান তারেক, যিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকেই প্রতিনিধি দলে যোগ দেবেন।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শীর্ষ নেতাদের এই সফর নিয়ে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ রোববার বাংলানিউজকে বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনায় আসবে, যার জন্য ধারাবাহিকতা জরুরি। সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে হওয়া সেমিনারেও দেশের রাজনৈতিক দলের নেতাদের যুক্ত করা হয়েছিল। যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ত রাখতে চায় সরকার।

সফর সংক্রান্ত প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বাংলানিউজকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যেহেতু বিএনপির নেতারাও যাচ্ছেন, তাই আমরাও একমত হয়েছি।  

তিনি জানান, নেতারা জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নেবেন, যেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতারা উপস্থিত থাকবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গেও মতবিনিময় করবেন। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে।  

জুবায়েরের মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, কারণ সরকারের প্রধান নির্বাহী প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্য ও জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে আমরা যে ঐক্যমত্যে আছি, এ সফরের মধ্য দিয়ে জাতির সামনে সেই বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ এ ব্যপারে বলেন, অতীতে ক্ষমতাসীন দল বিদেশ সফরে গেলে তাদের দলের প্রতিনিধি বা জোটের নেতাদের নেওয়া হতো। কিন্তু এখন কোনো নির্দিষ্ট দল ক্ষমতায় নেই। যারা অন্তর্বর্তী সরকার চালাচ্ছেন, তারা সবার সরকার। তাই তারা এমন নেতাদের নিচ্ছেন, যাদের নিয়ে গেলে কেউ আপত্তি করবে না।  

তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে এখনো পূর্ণ ঐক্যমতে পৌঁছানো যায়নি। এই সফরের মাধ্যমে সেই সমঝোতার পথে এগোনো সম্ভব হতে পারে বলে সরকার মনে করছে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বকে দেখানো হতে পারে যে দেশে জাতীয় ঐক্য রয়েছে। সরকারের ধারণা, এই সফর হয়তো দেশের সংকট থেকে উত্তরণের একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে।

তবে প্রধান উপদেষ্টার সফরে ছয় নেতাকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এক দলের এখনো নিবন্ধন সম্পূর্ণ হয়নি, আরও অনেক রাজনৈতিক দল আছে— তাদের কাউকেই নেওয়া হয়নি। তাছাড়া এ ধরনের সফর রাষ্ট্রের বাড়তি খরচ তৈরি করে, যা মোটেই কাম্য নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের মূল কাজ হচ্ছে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেওয়া। তাই এই সফরে কোন কোন দলের নেতাকে নেওয়া হয়েছে, আমরা সেটিকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না।

সবার সঙ্গে আলোচনা না করে প্রতিনিধি নির্বাচিত করায় জাসদ বিষয়টিকে একপাক্ষিক বলে মনে করছে। বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান জানান, বিষয়টিকে তারা ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। তার মতে, এই উদ্যোগে মনে হচ্ছে যেন সরকার প্রমাণ করতে চাইছে যে এই নির্বাচিত কয়েকটি দলই ভবিষ্যতে ক্ষমতার অংশীদার হবে। তাই তাদেরই রাষ্ট্রীয় সফরে নেওয়া হচ্ছে। এতে বিষয়টি একপাক্ষিক হয়ে গেছে। এমন সফরের জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করে মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।

উল্লেখ্য, রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে পৌঁছবেন। ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এরপর ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘ অধিবেশনে তিনি বিগত এক বছরে দেশে সংঘটিত সংস্কার এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। এছাড়া ৩০ সেপ্টেম্বর ‘হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের সভায়ও অংশ নেবেন, যা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে। সফরের সময় তিনি বিশ্ব নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

মন্তব্য করুন


Link copied