নিউজ ডেস্ক: কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের সদস্যদের হাত-মুখ বেঁধে ডাকাত দলের সদস্যরা ঘরে থাকা স্বর্ণালংকারসহ প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল লুট করে।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে ধর্ষণের ঘটনাটি গোপনের চেষ্টা করা হলেও বুধবার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এ ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। মামলার তিন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরদিয়াড় গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে তারিক রহমান, কায়ামারি এলাকার রসুল মহলদারের ছেলে মেহেদী হাসান লাভলু এবং একই এলাকার রশিদের ছেলে সুবেল।
মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী নারী উল্লেখ করেন, ১৬ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমিসহ আমার স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ি ও দেবর নিজ নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর রাত ২টার দিকে আসামিরা দেশীয় তৈরি ধারালো হাঁসুয়া ও রামদা দিয়ে টিনের গেট খুলে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। এ সময় আমার শ্বশুর ও শাশুড়ি টের পেয়ে ঘর থেকে বের হন। আসামিরা শ্বশুরকে পানি খাওয়ার কথা বলে। শ্বশুর আমার স্বামীকে ডাকাডাকি করলে মেজো দেবর ও ছোট দেবরসহ সবাই নিজ নিজ ঘর থেকে বাইরে বের হয়।
তিনি বলেন, এ সময় আসামিরা বাড়ির সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শ্বশুর ও মেজো দেবরকে ওড়না দিয়ে হাত মুখ বেঁধে ফেলে। পরে ওদের শ্বশুরের ঘরে আটকে রাখে এবং আমার স্বামীকে আমাদের ঘরে ওড়না দিয়ে হাত ও মুখ বেঁধে আটক রাখে।
তিনি আরও বলেন, মেজো দেবরের ঘরে আমাকে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় এক একজনের মুখের গামছা খুলে গেলে আমি তাকে চিনে ফেলি। পরবর্তীতে আসামিরা বাড়ি থেকে স্বর্ণ ও রুপার অলংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। আমি ধর্ষণের ঘটনার বিষয়টি লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলিনি। গত ২১ সেপ্টেম্বর আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ধর্ষণের বিষয়ে স্বামী ও শাশুড়িকে জানাই। পরে সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে মামলা দায়ের করেছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনা জানাজানি হলে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মামলা করতে ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরুৎসাহিত করা হয়। পরে গৃহবধূ ও তার শ্বশুর দৌলতপুর থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, ওই রাতে লাভলু, সুবেল ও তারিকের নেতৃত্বে সাত থেকে আটজনের একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল প্রথমে কলেজপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। ফেরার পথে তারা ভুক্তভোগীর বাড়িতে ঢুকে পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে হাত মুখ বেধে হত্যার হুমকি দিয়ে গৃহবধূকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এরপর তারা ঘরে থাকা স্বর্ণালংকারসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-মুখ বেঁধে একটি ঘরে আটকে রেখে আমাকে দুইজন ধর্ষণ করেছে। পরে স্বর্ণ ও রুপাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানার ওসি সোলাইমান শেখ বলেন, ধর্ষণ ও দস্যুতার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।