মমিনুল ইসলাম রিপন: রংপুরের ৮টি জেলা নিয়ে রংপুরকে পৃথক প্রদেশ হিসেবে ঘোষণার দাবিতে রংপুর প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২৫) সকালে রংপুরের জুলাই চত্বর প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুস সাদেক জিহাদী। উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ছাদেকুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক এবিএম মশিউর রহমান এবং সদস্য সার্জেন্ট (অব.) আতিয়ার রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, “বিগত ২০ বছর ধরে আমরা রংপুরকে প্রদেশ ঘোষণার দাবি করে আসছি। অথচ চিকিৎসা, চাকরি, শিল্পায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রংপুরের মানুষ এখনো চরম বৈষম্যের শিকার। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি, গ্যাস আসেনি, শিল্পকারখানা হয়নি, বেকার সমস্যা রয়ে গেছে—এসব বৈষম্য দূরীকরণে রংপুরকে অবিলম্বে প্রদেশ ঘোষণা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এক কেন্দ্রিক সরকারের বাজেট নীতির কারণে দেশের উন্নয়ন ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। জাতীয় বাজেটের ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় ঢাকায়, ২০ শতাংশ চট্টগ্রামে, আর বাকি মাত্র ১৫ শতাংশ সারাদেশে। এ ধরনের বৈষম্য রোধে ৯টি প্রদেশভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।”
সভায় বক্তারা বলেন, রক্তাক্ত জুলাই গণহত্যা ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনন্য অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। সেই জুলাই বিপ্লবের চেতনায় অনুপ্রাণিত হয়ে “জুলাই সনদ” বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের শাসনব্যবস্থায় অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র (Participatory Democracy) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এতে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, “বর্তমান দলকেন্দ্রিক গণতন্ত্র চর্চা দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শ্রমজীবী, পেশাজীবী ও সমাজশক্তিকে শাসন কাঠামোর অংশীদার করে কার্যকর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে দেশ নতুন ধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে, রংপুরকে অবিলম্বে প্রদেশ ঘোষণা, একজন মুখ্যমন্ত্রীসহ ৯ সদস্যের প্রাদেশিক সরকার গঠন, এক-তৃতীয়াংশ শ্রেণি-পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ ১৫০ সদস্য বিশিষ্ট প্রাদেশিক পরিষদ গঠন, সমাজশক্তির নাগরিক অধিকার ও ক্ষমতা নিশ্চিত করতে এক ব্যক্তির দুই ভোট পদ্ধতি চালু , দেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন এবং
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে সারাদেশে ৯টি প্রদেশ গঠন করার জোর দাবি জানান বক্তারা।
বক্তারা বলেন, “দেশে বিদ্যমান ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন বাংলাদেশের উপযোগী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের দাবি। রংপুরবাসী তাদের অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনের শেষে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান রংপুর প্রদেশ বাস্তবায়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।