নিউজ ডেস্ক: রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায় বাল্যবিয়ের হার জাতীয় গড় হারের চেয়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। সেখানে কিশোরীদের গর্ভধারণের হার জাতীয় গড় হারের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ‘জননী’ প্রকল্পের গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
কোইকার অর্থায়নে ও সেভ দ্য চিলড্রেনের কারিগরি সহযোগিতায় রংপুর ও লালমনিরহাট জেলায় জননী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ।
‘মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্য: প্রমাণভিত্তিক তথ্যের ব্যবহার নীতি ও কর্মপর্যায়ন’ শীর্ষক সেমিনারে স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার কমানোর লক্ষ্যে রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার ১৩ উপজেলার ৪০ ইউনিয়নে নেওয়া হয়েছে জননী: মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি, সেভ দ্য চিলড্রেন কোরিয়ার মাধ্যমে পাঁচ বছর মেয়াদী এই উদ্যোগে অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পটি মাতৃমৃত্যু অনুপাত ও নবজাতক মৃত্যুহার কমাতে অবদান রাখছে। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায় বিভিন্ন পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ‘জননী’ প্রকল্পের আওতায় মাতৃ ও শিশু সেবার ঘাটতি চিহ্নিত করতে প্রথম ধাপে ২০২৪ সালের মার্চ থেকে গবেষণা শুরু করা হয়। এই গবেষণার একটি অংশ হলো মাতৃ ও নবজাতক স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিষয়ক।
এরই মধ্যে সম্পন্ন গবেষণায় মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, রংপুরের দুর্গম এলাকাগুলোয় কিশোরীদের গর্ভধারণের হার ১৭.৩ শতাংশ। অথচ এই ক্ষেত্রে জাতীয় হার ৫.৯ শতাংশ। প্রতি ১০ জন কিশোরীর প্রায় ৬ জনের বিয়ে হয় এ জেলায়।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সরকারি সেবার পরিবর্তে বিকল্প সেবার দিকে ঝুঁকেছেন সেবাগ্রহীতারা। তার বড় কারণ সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক সুবিধা ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব।
২০ শতাংশের ক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক সুবিধার অভাব ও ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার রংপুরের এসব স্থানে ৫০.৩ শতাংশ। অথচ তার জাতীয় হার ৩৪.৯ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শেখ ছাইদুল হক বলেন, মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়নের মাইলফলকে পৌঁছাতে আমাদের আরো কাজ করাতে হবে। আরো সামনে এগিয়ে যেতে হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোকে আরো শক্তিশালী ও সমন্বিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক, প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক প্রসব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আমাদের মা ও নবজাতক স্বাস্থ্যসেবার এসডিজি লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। রংপুরে কিশোরীদের গর্ভধারণের বিষয়টি আমাদের জন্য বিশেষ উদ্বেগের বিষয়। এ নিয়ে কাজ করার জন্য জননী প্রকল্পের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।