নিউজ ডেস্ক: জাপানের কঠোর রক্ষণশীল রাজনীতিক সানায়ে তাকাইচি দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। জুলাই মাসে উচ্চকক্ষের নির্বাচনে বিপর্যয়কর পরাজয়ের পর ও নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নেতৃত্বে পরিবর্তন আনে। তাকাইচি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকাইচিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, জাপানের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও জোরদার করতে তিনি আগ্রহী।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
এক্সে-এ দেওয়া বার্তায় মোদি লিখেছেন, ‘জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার জন্য সানায়ে তাকাইচিকে আন্তরিক অভিনন্দন। ভারত-জাপান বিশেষ কৌশলগত ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব আরও গভীর করতে আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা করছি। আমাদের সম্পর্ক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
সানায়ে তাকাইচি ?
এলডিপির রক্ষণশীল শাখার প্রভাবশালী কণ্ঠ তাকাইচি দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে ১৮৫ ভোট পেয়ে জয়ী হন। প্রতিদ্বন্দ্বী শিনজিরো ১৫৬ ভোট পান।
১৯৯৬ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করা তাকাইচি প্রথমবার মন্ত্রিসভায় যোগ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আমলে, ওকিনাওয়া ও উত্তরাঞ্চলীয় ভূখণ্ডবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি এলডিপির নীতিনির্ধারণী পরিষদের প্রথম নারী চেয়ারপারসন হন।
২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাকাইচি ছিলেন জাপানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী। এছাড়া তিনি দীর্ঘতম সময় ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী নারী হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন। এবার তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইশিবার বাকি তিন বছরের মেয়াদ পূর্ণ করবেন।
ভারত-জাপান সম্পর্কে তাকাইচির উত্থানের প্রভাব
প্রয়াত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে তাকাইচি তার নীতিই অনুসরণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে—বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে।
আবের আমল (২০১২–২০২০) ছিল ভারত-জাপান সম্পর্কের ‘স্বর্ণযুগ’। তাকাইচি চীন ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত। একইসঙ্গে তিনি জাপানের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক মূল্যবোধের প্রবল সমর্থক।
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দীপা ওয়াধওয়া দ্য হিন্দু-কে বলেন, ‘তিনি আবের মতোই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে জোর দেবেন। কোয়াড নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবেন বলেই মনে হচ্ছে।’
আবে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-অস্ট্রেলিয়া-জাপান চারদেশীয় নিরাপত্তা সংলাপ (কোয়াড) শুরু করার জন্য ‘কোয়াডফাদার’ নামে পরিচিত ছিলেন।
অধিকাংশ জাপানি নেতার মতো তাকাইচির ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পদে বসার পর নয়, অনেক আগে থেকেই। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ডিজিটাল অর্থনীতি, স্মার্ট সিটি প্রকল্প ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়।
তাকাইচি একাধিকবার ভারতের ভূমিকাকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ‘গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক, প্রযুক্তিগত ও উৎপাদন অংশীদার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, যা সরবরাহ শৃঙ্খলা বৈচিত্র্যের জন্য অপরিহার্য।
তবে রাজনৈতিকভাবে তিনি এখনও দুর্বল অবস্থানে থাকায় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, তাকাইচি কতটা বাস্তবায়ন করতে পারবেন তা সময়ই বলে দেবে।