আর্কাইভ  বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ● ১৪ কার্তিক ১৪৩২
আর্কাইভ   বুধবার ● ২৯ অক্টোবর ২০২৫
১০৪ ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধার’ গেজেট বাতিল হচ্ছে

১০৪ ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধার’ গেজেট বাতিল হচ্ছে

শেখ হাসিনার মৃত্যু নিয়ে গুজব, যা জানা গেল

শেখ হাসিনার মৃত্যু নিয়ে গুজব, যা জানা গেল

পুরোপুরিভাবে চালু হচ্ছে না বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র

পুরোপুরিভাবে চালু হচ্ছে না বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র

বেগম খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানকে প্রার্থী চান নেতা-কর্মীরা

ভোটের হাওয়া
বেগম খালেদা জিয়া অথবা তারেক রহমানকে প্রার্থী চান নেতা-কর্মীরা

১০৪ ভুয়া ‘জুলাই যোদ্ধার’ গেজেট বাতিল হচ্ছে

বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, সকাল ০৮:১৭

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রেখেও ‘জুলাই যোদ্ধার’ তালিকায় ঢুকে পড়া ১০৪ জনকে চিহ্নিত করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলতি সপ্তাহেই তাদের নামে জারি হওয়া গেজেট বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া ২৩ ব্যক্তির নামে একাধিকবার গেজেট জারি হওয়ার ঘটনাও নজরে এসেছে মন্ত্রণালয়ের। তাদের একটি গেজেট বহাল রেখে বাকিগুলো বাতিল হবে। তবে ভুয়া ও একাধিকবার গেজেট জারি হওয়া ‘জুলাই যোদ্ধারা’ এককালীন ও মাসিক ভিত্তিতে যে ভাতা পেয়েছেন, সেই টাকা কীভাবে তাদের কাছ থেকে ফেরত নেওয়া হবে—এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে জুলাই আন্দোলনে হতাহত ১৪ হাজার ৬৩৬ জনকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ স্বীকৃতি দিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েক ধাপে গেজেট প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু প্রথম তালিকা প্রকাশের পরই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। আন্দোলনে সম্পৃক্ত না হয়েও অনেকে যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন জুলাইয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারীরা। ভুয়া জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার দাবিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনও হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে চিঠি দিয়েও আলটিমেটাম দেন প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারা। সমালোচনার মুখে তালিকা পুনর্যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। অবশেষে যাচাই-বাছাইয়ের পর আট বিভাগ থেকে ১০৪ জন ভুয়া জুলাই যোদ্ধাকে চিহ্নিত করা গেছে।

তাদের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ভুয়া যোদ্ধা হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা গেছে তারা জুলাই আন্দোলনে আহত হননি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। এমন ভুয়া যোদ্ধার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। এ বিভাগ থেকে ৩৫ জন মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেজেটে নাম তুলেছিলেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে চারজনের নামে দুবার গেজেট জারি হয়েছে। বাকি বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে ২০ জন ভুয়া ও একজনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে, সিলেট বিভাগ ২৬ জন ও একজনের দুবার গেজেট, খুলনা বিভাগে ৫ জন ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, রংপুরে ২ জন ভুয়া জুলাই যোদ্ধা, ঢাকা বিভাগে ৭ জন ও ৭ জনের নামে দুবার গেজেট, রাজশাহী বিভাগে ৯ জন ভুয়া জুলাই যোদ্ধা ও ৪ জনের নামে দুবার গেজেট, বরিশাল বিভাগের ২ জনের নামে দুবার গেজেট হয়েছে। ভুয়া ১০৪ যোদ্ধা এবং একাধিকবার গেজেট জারি হওয়া ২৩ জনসহ মোট ১২৭ জনের গেজেট বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটিগুলো।

বিধিমালা অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং মাসিক ২০ হাজার করে ভাতা দেওয়া হয়। খ ক্যাটাগরিতে থাকা গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ টাকা ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা এবং গ ক্যাটাগরির আহত যোদ্ধারা এককালীন ১ লাখ টাকা ও মাসিক ১০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভুয়া যোদ্ধারাও গেজেটভুক্ত হয়ে যাবতীয় আর্থিক সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধাও নিয়েছেন। তাদের পেছনে সরকারের কয়েক কোটি টাকা এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে। সেই অর্থ কীভাবে আদায় হবে বা এ বিষয়ে আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

যাচাই-বাছাই করে ভুয়া যোদ্ধা ও একাধিকবার গেজেট জারি হওয়া ব্যক্তিদের যে তালিকা তৈরি করেছে মন্ত্রণালয়, তার কপি রয়েছে কালবেলার হাতে। সেই তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ময়মনসিংহ বিভাগে চিহ্নিত ২১ জন হলেন নেত্রকোনা জেলার সৈয়দ তরিকুল ইসলাম ((৮০), মোহাম্মদ নুরুল আমিন (৮৮), তানভীর আহমেদ (১২১), আছিয়া খাতুন (১২৩), রুহুল আমিন (১২৭), মো. আমি হাসান রুপম (১২৯), মোহাম্মদ আকিব তালুকদার (১৪৬), মো. সুজন মিয়া (১৫৫), মো. ইমন শাহারিয়া (১৬৫), আশরাফুল ইসলাম জাসাম (১৭২), মুশফিকুর রহমান (১৯৭), মো. সজিব (১৯৮), সোহাগ মিয়া (১৯৯), রুবেল মিয়া (৩৬২), মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩৬৩), রাব্বি হাসান শ্রীনি (৫৬৫), মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম (৫৬৬), মো. আবু ফরিদ আহামেদ (৫৬৭), আফরিনা জান্নাত (৫৭০) ও মাজহারুল ইসলাম (৬৪৮)।

ঢাকা বিভাগে ভুয়া যোদ্ধা চিহ্নিত হয়েছেন সাতজন। একাধিকবার গেজেট জারি হয়েছে সাতজনের নামে। দুবার গেজেট জারি হয়েছে আটজনের নামে। তারা হলেন রাসেল (৬৭০), খন্দকার রাজ (১০৬৩), রাফিউল নাঈম (১১৬১), রাশেদুল ইসলাম অনিক (১১৬৩), আব্দুল্লাহ আল রাহাত (১১৬৬), মো. মঞ্জমুল আলম জিসান (১৯৩২), মো. সাইফুল ইসলাম শুভ (২৬৮২), মুহাম্মাদ রিয়াজুল হাসান (২৮৩৮), বেলায়াত হোসেন শাহীন (২৮৩৯), মুজবর মৃধা (৩৯৬৪), জিহাদ (৩৪১৩), মো. রফিকুল সরদার (৭৩৩), মো. মাসুদুর রহমান (৬৪৫), মোছা রুমি (৩৪৩১) ও মো. রিয়াজ শরীফ (১৩৮২)।

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে চিহ্নিত ৩৫ জন হলেন চট্টগ্রাম জেলার মো. সাগর (৩২৮), আবদুল্লাহ আল নোমান (৪৬৯), নাইম উদ্দীন শাঈদ (৪৯২), মোহা. শরিফুল ইসলাম (৫১৫), শাহাদাত ইকবাজ তাহনি (৫২১), তাহমিনা ইকরার তারকি (৫২২), মাহাবী তাজওয়ার (৫৩৪), জসিম উদ্দিন (৫৪২), মো. আতিকুল ইসলাম (৫৫২), মো. ইয়াছিন (৫৬০), আরফাতুল ইসলাম (৫৯৫), মোহা. ফরহাদ আলম (৬০১), মোদাসাদ সাহাদ কবির এমরান (৬০৩), মুনজামিরুল হক চৌধুরী মামুর (৬১৬), পঠন চন্দ্রনাথ (৬২২), মিশকাত আলম রিয়াদ (৬৭৫), মো. এমরান (৭৯৭), মোহাম্মদ সাগর (৭৬৮), নুরুল্লাহ (৭৮৯), মোহাম্মদ রাফি (৭৯৯), ফয়সাল মোহাম্মদ শিয়াস (৮০২), মোছা. ইছনিয়া আকতার (৮২৪), মো মাঈনুদ্দীন (৮২৫), সাইমন (৯৭৩), মো. আরিফ (১৯৭৬), রাসেল (১৯৮৬) রমজান আলী (৯৮৭), মাহিম চৌধুরী (৯৯৯) ও রিফাত বিন আল (১৯৯৯)।

এ বিষয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তরের দায়িত্বে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, যাচাই-বাছাই করে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের গেজেট বাতিল হবে। এ প্রক্রিয়া চলমান। গেজেট বাতিলের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। ভুয়া যোদ্ধাদের দেওয়া ভাতার টাকা কীভাবে ফেরত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে যুগ্ম সচিব ফারুক হোসেন বলেন, আগে গেজেট বাতিল করি, তারপর সবই পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন


Link copied