আর্কাইভ  সোমবার ● ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ● ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৭ নভেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনার রায়ে সন্তুষ্ট আবু সাঈদের পরিবার

শেখ হাসিনার রায়ে সন্তুষ্ট আবু সাঈদের পরিবার

চার দশকের রাজনৈতিক জীবন, শেষে ফাঁসির দণ্ড

শেখ হাসিনা
চার দশকের রাজনৈতিক জীবন, শেষে ফাঁসির দণ্ড

সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছরের জেল

সাবেক আইজিপি মামুনের ৫ বছরের জেল

আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ

আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ

হাসিনার গড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলোচিত যত রায়

সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, দুপুর ০৩:০৬

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে ২০১০ সালের মার্চে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। এই ট্রাইব্যুনাল ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় এবং ঢাকায় পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে বিচার কার্যক্রম শুরু করে। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর গঠিত এই প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার শুরু করে। 

ট্রাইব্যুনাল গঠনের শুরুতে একটিমাত্র আদালতে বিচার কার্যক্রম চললেও, ২০১২ সালের মার্চে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধের মামলার বিচার করা হয়। ১৯৭৩ সালের এই আইন মূলত বাংলাদেশ কোলাবরেটর (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২-কে প্রতিস্থাপিত করে। 

২০১০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল মোট ৫৭টি মামলার রায় দিয়েছে। এর মধ্যে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে, যার মধ্যে পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর এবং একজন বিএনপির শীর্ষ নেতা। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে ৩০টির বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে এবং ৫০টিরও বেশি আপিল সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।

ট্রাইব্যুনালের উল্লেখযোগ্য রায়সমূহের মধ্যে রয়েছে —

ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়

জামায়াতে ইসলামীর রুকন আবুল কালাম আযাদ, তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ই ছিলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া প্রথম রায়। ২০১৩ সালের ২১শে জানুয়ারি ওই মামলার রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

জামায়াত নেতাদের ট্রাইব্যুনাল আইন চ্যালেঞ্জ

এদিকে, গ্রেফতার হওয়ার পর কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান এই দুইজন জামায়াত নেতা ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কয়েকটি ধারা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত সংবিধানের প্রথম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।

পরে একপর্যায়ে শুনানি শুরু হওয়ার পর জামায়াত নেতাদের আইনজীবীরা ওই রিট প্রত্যাহার করার আবেদন করলে আদালত উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেয়।

কাদের মোল্লার রায় ঘিরে বিক্ষোভ, গণজাগরণ মঞ্চ গঠন

জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের মে মাসে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধ প্রমাণিত হলে, ২০১৩ সালের পাঁচই ফেব্রুয়ারি তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে ট্রাইব্যুনাল।

কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় না হওয়া এবং রায়ের পর আদালতের বাইরে তার বিজয়সূচক 'ভি সাইন' প্রদর্শনের কারণে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বাংলাদেশের অনেক মানুষ।

সেই ক্ষোভের সূত্র ধরে শাহবাগে লাগাতার বিক্ষোভ হয়, শাহবাগের এই বিক্ষোভের স্থান সেসময় গণজাগরণ মঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

সে সময় ১৯৭৩ সালের আইনে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের উচ্চতর আদালতে আপিল করার সুযোগ ছিল না। পরে বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন সরকার রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস করে।

এরপর ২০১৩ সালে তেসরা মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। একইসাথে খালাস চেয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা।

সে বছরের ১৭ই সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পরিবর্তে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। পরে কাদের মোল্লার করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেওয়া হয়। দণ্ড কার্যকর নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর সেই বছরের ১২ই ডিসেম্বর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল প্রথম কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা।

মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড

২০১১ সালের ৪ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শেষে ২০১৩ সালের নয়ই মে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা এবং খুনের অভিযোগসহ মোট পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে।

প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়েছিল, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন। 

সাঈদীর বিচার 

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯শে জুন গ্রেফতার করা হয়েছিল সাবেক সংসদ সদস্য এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। পরে ২০১১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

বিচার শেষে, ২০১৩ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করেন। 

পরে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় তাকে। এর বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলেও আপিল বিভাগ আগের রায় বহাল রাখে।

সাঈদী ২০২৩ সালে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।

গোলাম আযমের বিচার

২০১০ সালেই জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

২০১২ সালের ১১ই জানুয়ারি আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তি তর্ক চলে। পরে ২০১৩ সালের ১৫ই জুলাই গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। 

তার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র,পরিকল্পনা,উস্কানি এবং সংশ্লিষ্টতার।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেছে, গোলাম আযমের অপরাধ বিবেচনায় তার মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য। কিন্তু বয়স বিবেচনায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এর আগে আরও চারটি রায় ঘোষণা করলেও গোলাম আযমের এই রায়টি নানা দিক থেকে ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে, বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গোলাম আযমকে অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে গোলাম আযম সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করলেও কারাগারে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আপিলটি অকার্যকর বা বাতিল হয়ে যায়। 

আপিলে খালাসের প্রথম মামলা

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একাত্তরে এটিএম আজহারুল ইসলাম ছিলেন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি এবং পদাধিকার বলেই রংপুরের আলবদর বাহিনীর প্রধান।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর এটিএম আজহারুল ইসলাম দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় এটিএম আজহারুল ইসলামই প্রথম পুনর্বিবেচনার আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিলে খালাস পেয়েছেন।

মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদণ্ড

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতা মীর কাশেম আলী ২০১২ সালের জুনে গ্রেফতার হন। পরের বছর ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে সর্বোচ্চ আদালতেও তা বহাল থাকে। 

এরপর ২০১৬ সালের ৩০শে অগাস্ট আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। ওই বছরই ৩ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।  

 

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড 

২০১২ সালে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর, পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। 

মোট ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ছিলেন।

তিনিই প্রথম কোনও বিএনপি নেতা যার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইবুনালে সাজার রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা যখন রায় ঘোষণা করছিলেন তখন কাঠগড়ায় থাকা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ওই রায় অনলাইনে ফাঁস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন।

পরে তার পরিবারের সদস্যরাও বেশ কিছু নথি ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের দেখান, যেটি তারা রায়ের কপি বলে দাবি করেন। যদিও সেসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং প্রসিকিউশন পক্ষ এমন অভিযোগ নাকচ করে দেয়।

তবে পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন রেজিস্ট্রার ও মুখপাত্র এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা উদ্ঘাটনে তদন্তের জন্য শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায় ফাঁসের এই ঘটনা 'স্কাইপ কেলেঙ্কারি' নামে বহুল পরিচিত।

তবে রায় ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং স্ত্রী ফারহাৎ কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়ার প্রায় তিন মাস পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ওই দুইজনের বিচার শুরু হয়েছিল। সে সময় তারা আদালতে হাজির হয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিলেন। 

ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রমের মধ্যে নানা বিতর্কও দেখা দেয়। শুরুতে জামায়াত নেতাদের কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান হাইকোর্টে ট্রাইব্যুনাল আইন চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। পরে আইনজীবীরা রিট প্রত্যাহার করলে তা খারিজ হয়ে যায়। এছাড়া সাক্ষীদের নিখোঁজ, রায়ের অনলাইন ফাঁস এবং প্রসিকিউটরের অপসারণের মতো ঘটনা ঘটে। 

বিশেষ ঘটনা হিসাবে উল্লেখযোগ্য হলো সাইদীর সাক্ষী সুখরঞ্জন বালির নিখোঁজ। মামলায় ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর পক্ষের একজন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে ঘিরে সে সময় ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। ২০১২ সালের পাঁচই নভেম্বর, সাক্ষ্য দিতে গেলে ট্রাইব্যুনালের গেইট থেকেই নিখোঁজ হন সুখরঞ্জন বালি। পরে তাকে ভারতে পাওয়া যায়। 

চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ২১শে অগাস্ট, সুখরঞ্জন বালি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে প্রসিকিউশনের কাছে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করেন। তাতে তিনি বলেন, ২০১২ সালের পাঁচই নভেম্বর সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে গেলে সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তি ও পুলিশ তাকে পিকআপে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে বিজিবির সহায়তায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বৈকারী বাজার সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল এবং শেখ হাসিনার মামলা

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তী সরকার ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে। পুনর্গঠনের পর প্রথম বিচার কার্যক্রম শুরু হয় ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে। প্রথম মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, যেখানে তিনি একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক আইজিপিকে এই মামলায় আসামি করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০২৫ সালের ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে শেখ হাসিনাসহ পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। রায়ের দিন ধার্য করা হয় ১৭ নভেম্বর।  

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই দীর্ঘ বিচার কার্যক্রম এবং নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি শুধু একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নয়, বরং বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আইনের প্রতি জনগণের আস্থা যাচাই করারও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

মন্তব্য করুন


Link copied