নিউজ ডেস্ক: নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ত্রিভুজ প্রেমের ছবিতে নায়কদের জুটির জয়জয়কার দেখা যেত হরহামেশাই। দর্শক বরাবরই এমন গল্পের ছবির প্রতি আগ্রহ দেখাত। এসব ছবি বেশ হিট ও ব্যবসাসফলও হতো। এ ধরনের ছবি ষাটের দশক থেকে নির্মাণ হলেও তা ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল নব্বই দশকে ওমর সানী-বাপ্পারাজ, অমর নায়ক সালমান শাহ ও রিয়াজের হাত ধরে।
তাঁদের ‘হারানো প্রেম’, ‘প্রেমগীত’, ‘প্রিয়জন’ ছবিগুলো হিট ও তুমুল ব্যবসাসফল হয়েছিল। ‘হারানো প্রেম’ ছবিতে মৌসুমী ও ‘প্রেমগীত’ ছবিতে লিমার বিপরীতে ছিলেন সানী-বাপ্পারাজ। ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের ছবিগুলো দর্শকমন জয় করেছিল। এ ছাড়া মৌসুমী ও নিশির বিপরীতে এ দুই নায়ককে দেখা গিয়েছিল ‘কথা দাও’ ছবিতে। আর ‘প্রিয়জন’ ছবিতে নায়িকা শিল্পীর বিপরীতে ছিলেন দুই নায়ক সালমান ও রিয়াজ। অভিজ্ঞ ও সিনিয়র সালমানে কিছুটা ম্লান ছিলেন নতুন ও উদীয়মান রিয়াজ। তবে এ সিনেমার মধ্য দিয়েই আবারও ফিরে এসেছিল ত্রিভুজ প্রেমের সিনেমার রাজত্ব। ‘প্রিয়জন’ একটি নতুন ইন্ডাস্ট্রির, নতুন রসায়নের আভাস দিয়েছিল। এর সাফল্যের পর বেশ কিছু ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন সালমান-রিয়াজ। কিন্তু সালমানের অকালমৃত্যু থমকে দিল এ যাত্রা। পরবর্তীতে সেসব ছবিতে রিয়াজের সঙ্গে দেখা গেছে অন্য নায়কদের। সালমানের মৃত্যুর পর রিয়াজ-শাকিল খান হাজির হলেন রোমান্টিক গল্পে ত্রিভুজ প্রেমের দুর্দান্ত রসায়ন নিয়ে। তারা পরপর উপহার দিলেন ‘নারীর মন’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘মন’ নামের সুপারহিট ছবি। এগুলোতে তাদের বিপরীতে ছিলেন শাবনূর।
এ দুটি ছবির নায়ক হিসেবে শক্ত অবস্থান গড়ে দিয়েছিল রিয়াজ-শাকিলকে। এরপর তাঁরা ‘সাথী তুমি কার’, ‘তোমাকেই খুঁজছি’সহ আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন আমিন খানও। তাঁদের ‘হৃদয়ের বন্ধন’, ‘লাল দরিয়া’ ছবিগুলো বেশ দর্শক টেনেছিল। রিয়াজের সঙ্গে সাফল্য পেয়েছেন ফেরদৌসও। তাঁদের ‘এই মন চায় যে’, ‘বস্তির মেয়ে’ ছবিগুলো ছিল ব্যবসা সফল। দুটি ছবিতেই সফল নায়িকা ছিলেন শাবনূর। তবে রিয়াজ-শাকিল ও ফেরদৌসকে একসঙ্গে হাজির করে চমক দেখিয়েছিলেন নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক। ‘দুই নয়নের আলো’ নামের সেই ছবিতে নায়িকা ছিলেন শাবনূর। ক্যারিয়ারের একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি শাবনূর এ ছবিতে অভিনয় করেই পেয়েছেন।
শাকিব খানও তাঁর ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছেন সিনিয়র নায়কদের সঙ্গে জুটি বেঁধে। বিশেষ করে রিয়াজের সঙ্গে ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘স্বপ্নের বাসর’ ছবি দুটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারে সবুজবাতি জ্বালিয়েছিল। এরপর তারা ‘নষ্ট’ ও ‘বাধা’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও শাকিব খান সাফল্য পেয়েছেন ফেরদৌস, আমিন খান, আলেকজান্ডার বো’দের সঙ্গে। এসব ছবিতে নায়িকা হিসেবে কখনো শাকিব পেয়েছেন শাবনূরকে, কখনো সাহারাকে। এ ছাড়া আমিন খানকে নিয়ে ‘সাগরিকা’ এবং রিয়াজকে নিয়ে ‘আশা আমার আশা’র মতো হিট ছবি উপহার দিয়েছিলেন হেলাল খান।
আর বাপ্পারাজ-অমিত জুটি শাবনূরকে নিয়ে উপহার দিয়েছিলেন ‘ভুলোনা আমায়’, ‘পাগলীর প্রেম’ নামে সুপারহিট ছবি। তবে এই জুটির সেরা ছবি হয়ে আছে ‘প্রেমের সমাধি’। ত্রিভুজ প্রেমের ছবিটিতে দুই নায়কের বিপরীতে ছিলেন শাবনাজ। তাঁদের একসঙ্গে দেখা গেছে ‘চাকরানী’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’ ছবিতেও। বাপ্পারাজ জুটি বেঁধে সফল হয়েছেন রিয়াজের সঙ্গেও। তাঁদের ‘বুক ভরা ভালোবাসা’, ‘ভালোবাসা কারে কয়’, ‘মিথ্যার মৃত্যু’ ছবিগুলো তুমুল ব্যবসা সফল ছিল। যদিও প্রায় এক দশক ধরে ত্রিভুজ প্রেমের ছবি তেমনভাবে নির্মাণ হচ্ছে না। তবে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা মনে করেন, ফের ত্রিভুজ প্রেমের তারকাবহুল ছবির হাত ধরে ফিরতে পারে চলচ্চিত্রের সুদিন। জমে উঠতে পারে নায়ক-নায়কদের জুটির সেই সফল রসায়ন। যদি ভালো গল্প, নির্মাণ ও পরিবেশনার সমন্বয় ঠিকভাবে করা যায়।