আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

অনুমোদন না থাকায় অবশেষে সিলগালা হলো সৈয়দপুরের ফাইলেরিয়া হাসপাতাল॥সরিয়ে নেওয়া হলো রোগী

বুধবার, ১২ জুন ২০২৪, রাত ১০:৩২

Advertisement Advertisement

স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন না থাকায় গোদ রোগের চিকিৎসায় প্রতিষ্ঠিত নীলফামারীর সৈয়দপুরে “বিশ্বের একমাত্র ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব” সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজন রোগীকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বুধবার(১২ জুন) দুপুর ২টার থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকায় অবস্থিত সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব এ অভিযান চালায় নীলফামারীর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, পত্রিকায় জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে এ ফাইলেরিয়া হাসপাতালের অনুমোদন নেই। হাসপাতালটি চালাতে যা যা থাকা দরকার, সেগুলোর অনেক ঘাটতি রয়েছে। অনুমোদন না থাকায় হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে। 
অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডা: আতিয়ার রহমান শেখ, সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আলতাফ হোসেন। 
সূত্র মতে, দেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলাসহ ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় ফাইলেরিয়া (গোদ) রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ফাইলেরিয়া রোগীদের নিখরচায় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা বলে ১৯৯৭ সালে প্রফেসর ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে জাপান সকারের অর্থায়নে প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ শতাংশ জমির ওপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গড়ে তোলা হয় এ হাসপাতালটি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইম্যুনোলজি (আইএসিআইবি) হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে ছিল। হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও প্রকল্প পরিচালক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই সময় স্থানীয়ভাবে ১৮ জন দেশি-বিদেশি চিকিৎসককে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। জাপান, কানাডা ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি বহুতল ভবন নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকেও গবেষণাকর্মীরা আসেন এখানে। এ হাসপাতালে ফাইলেরিয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছিল। 
সূত্রটি আরো জানায়, ২০১২ সালে হাসপাতালটিকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে সংকট সৃষ্টি হয়। পরিচালনা কমিটির দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ে সেবা কার্যক্রম। মুখ ফিরিয়ে নেয় দাতা সংস্থাগুলো। ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে টোকেন মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার প্রত্যয়ে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ল্যাব নামে নতুন করে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা লেপরা বাংলাদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক সব ধরনের সহযোগিতা করবে লেপরা বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্যারামেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রাকিবুল ইসলাম তুহিন পরিচালকের দায়িত্ব নেন। এরপর বিভিন্ন জেলা থেকে নতুন করে প্রায় ১০১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রত্যেকের কাছে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেন পরিচালক। শুরুর দিকে নামমাত্র বেতন দিলেও, এরপর থেকে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরিচালকের কাছে জামানতের টাকা ও বেতন পরিশোধের দাবি জানালে বিভিন্ন অজুহাত দেওয়া হচ্ছিল।  
সে সময় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছিল, তাঁদের কাছ থেকে ফেরতযোগ্য জামানতের কথা বলে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক। ৯ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতনের দাবিতে সম্প্রতি কর্মবিরতি পালন করেছেন। বেতনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেকে চলে গেছেন। পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও এখন আর হাসপাতালে যান না। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে নেসকো। রোগী বহনের অ্যাম্বুলেন্সটি পরিচালনা কমিটির এক সদস্য ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বে পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও হাসপাতালের সমন্বয়কারী পদত্যাগ করেছেন। দৈনিক আয়ের অর্থ প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে জমা হয়েছে পরিচালকের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে। 
ফলে ২০২৩ সালে ৮ মে হাসপাতালের অস্থায়ী আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মান্না চক্রবর্তী ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী হাসপাতালের সকল কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপর তারা স্বাস্থ্য বিভাগে অনিয়নের অভিযোগ দাখিল করেন। 
এলাকাবাসী জানায়, ফাইলেরিয়া চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে থাকলেও হাসপাতালে অপচিকিৎসা শুরু করে একটি মহল। এমনকি শত শত যুবককে নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা বানিজ্য করে তারা। 
চলতি বছরের গত ২৬ মে প্রতিষ্ঠানটি বগুড়া থেকে প্রকাশিত লোকাল একটি পত্রিকায় আবারও ২৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রতারণার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের নজরে চলে আসে। 
ডাঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা জানতে পারি এই ফাইলেরিয়া হাসপাতাল এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাবের কোন অনুমোদন নেই। এছাড়াও এ হাসপাতালে নিয়মিত কোনো চিকিৎসক, নার্স, টেকিনেশিয়ান কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীসহ যেসব সুবিধা থাকা দরকার সেগুলোর কিছুই নেই। তাই হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় ফাইলেরিয়া (গোদ) রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। কিন্তু কোনো হাসপাতালে এর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই এবিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়া হবে। যাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যেতে পারে।

মন্তব্য করুন


Link copied