নিউজ ডেস্ক:
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবির কথা জানান।
বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানও বৈঠকে অংশ নেন।
এ সময় বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তা, বিশেষ করে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ শাসনামলে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানান বিএনপি নেতারা।
নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদলে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহবান জানান বিএনপি নেতারা। প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচনের আগে প্রশাসনের যাবতীয় রদবদল সরাসরি তাঁর তত্ত্বাবধানে হবে। তিনি বলেন, “জেলা প্রশাসক পদে নিয়োগের জন্য একাধিক ‘ফিট লিস্ট’ থেকে যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করে প্রত্যেককে নির্বাচনের আগে যথাযোগ্য স্থানে নিয়োগ দেওয়া হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষ থাকা। নির্বাচন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে যিনি শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারবেন সে রকম যোদ্ধাকেই আমরা বেছে নেব। এটা আমার হাতে থাকবে।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন আমরা তা করব।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বৈঠকে পুলিশের নিয়োগ ও বদলি প্রক্রিয়া নিয়েও কিছু পর্যবেক্ষণ প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা। এর পাশাপাশি সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় একাধিক অগ্নিকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এসব ঘটনা অন্তর্ঘাতমূলক কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধানেরও আহবান জানিয়েছেন তাঁরা।
অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকায় যেতে হবে : মির্জা ফখরুল
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে।
’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে প্রশাসন যে নিরপেক্ষ হবে, জনগণকে তার ধারণা দেওয়া প্রয়োজন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সচিবালয়ে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত, তাদের সরিয়ে দিয়ে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। একইভাবে জেলা প্রশাসনেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বলে এসেছি, আমরা মনে করি, এই সরকার আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের স্বার্থ পূরণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশে নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রেও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা বলে এসেছি। বিচার বিভাগে থাকা ফ্যাসিস্টদের দোসরদের সরিয়ে নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগের কথাও বলেছি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা যদিও বিচার বিভাগের বিষয়, তার পরও প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু সবকিছুর দায়িত্বে আছেন, এ কারণে তাঁর কাছে বিষয়টি জানিয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের মধ্যে যদি এখনো কোনো দলীয় ব্যক্তি দায়িত্বে থাকে, তাদেরও অপসারণ করতে হবে।’ এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির প্রতিনিধিদল।