আর্কাইভ  সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫ ● ১০ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

সমস্যা বাড়ছে পাটপণ্য রপ্তানিতে

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

ভুল শুধরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিএনপি

বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

► এক চুক্তি, চার সমঝোতা স্মারক ও এক কর্মসূচি সই
একাত্তর ইস্যু দুবার মীমাংসিত, বললেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী
বহুমুখী নিবিড় সম্পর্কে ঐকমত্য

রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

উল্টো বাড়ছে দিনদিন, চলছে শুধুই আলোচনায়
রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর আজ, ফেরানো গেল না একজনও

অবকাঠামোগত উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে ঢাবি, ২৮৪০ কোটি টাকা অনুমোদন দিল সরকার

রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, রাত ১০:১৭

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ২ হাজার ৮৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অবকাঠামোগত রূপ বদলে যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আজ রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে বিফ্রিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

সভায় এটিসহ মোট ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৮ হাজার ৫৮ কোটি, বৈদেশিক ঋণ ১৪৩ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫২ কোটি ৭২ লাখ  টাকা ব্যয় করা হবে।

পরে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন করা গেলে অবকাঠামোগত দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৪০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রী নিবাস, ছাত্রাবাস, সুইমিং, বিনোদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

বাকি অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো—দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ২০টি (১২টি নতুন, ৮টি পুঃনির্মাণ) ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য লজিস্টিকস ও ফ্রিট মেইনটেনেন্স ফ্যাসিলিটিজ গড়ে তোলা প্রকল্প, ব্যয় ১৭৩ কোটি টাকা, গ্রামীণ স্যানিটেশন, ব্যয় ১ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। বহাদ্দারহাট বাড়াই পাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন, ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন, ব্যয় ১ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। 

মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসি এসসির অফিসার্স মেস ও বিওকিউ নির্মাণ, ব্যয় হবে ২৩৪ কোটি টাকা। কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু হতে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ব্যয় ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আবাসিক প্রশিক্ষণ প্রদান, ব্যয় ৩৯৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ, ব্যয় ১৬০ কোটি টাকা। কন্দাল ফসল গবেষণা জোরদারকরণ, ব্যয় ১০০ কোটি টাকা এবং স্মার্ট প্রিপেইড মিটারিং প্রজেক্ট, ব্যয় হবে ৭৭০ কোটি টাকা।

একনেক জানায়, ঢাবিতে ৪১টি বহুতল ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজের প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পে প্রস্তাবিত ৪১টি বহুতল ভবনের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬টি আবাসিক হল, ৮টি একাডেমিক ভবন, আবাসিক হলগুলোতে হাউজ টিউটরদের ৯টি আবাসিক ভবন, পুরোনো ডাকসু ভবন ভেঙে ১২ তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন, ৬ তলা মেডিকেল সেন্টার, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের একাংশ ভেঙে একটি ২০ তলা ও একটি চারতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং গ্যালারি ও ডরমিটরি নির্মাণসহ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের উন্নয়ন।

৮টি একাডেমিক ভবন
প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পশ্চিম ও উত্তর পাশে অবস্থিত ভবন ভেঙে একটি ১২ তলা ও একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের জন্য বর্তমান আইএসআরটি ভবন ভেঙে এবং মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবন ও আইএসআরটি ভবনের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের নিজস্ব খালি জায়গায় একটি ৩ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। চারুকলা অনুষদের অধীন ক্র্যাফট, স্কাল্পচার, গ্রাফিকস, সিরামিকস, ইতিহাস ভবন ও থিওরেটিক্যাল শিক্ষক লাউঞ্জ ভেঙে সেখানে একটি পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের বর্তমান একতলা ভবন ভেঙে সেখানে ১০ তলা বিশিষ্ট ‘বীর উত্তম শহীদ খাজা নিজামুদ্দিন ভূঁঞা এমবিএ টাওয়ার’ নির্মিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান প্রেস বিল্ডিং ও টিনশেডের নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে যথাক্রমে ১১ তলা ও পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ব্লকে প্রেস কাম একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

ছাত্রদের ১০টি আবাসিক ভবন
ছাত্রদের আবাসিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিনশেড ভবন ভেঙে সেখানে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১২ তলা ও আটতলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের উত্তর অংশ ভেঙে সেখানে ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১১ তলা একটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল প্রাঙ্গণের শহীদ আতাউর রহমান খান খাদিম ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া ভেঙে সেখানে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১৫ তলা ও ছয়তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিনশেড ও একতলা মূল ভবন ভেঙে সেখানে ১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ১২ তলা ও ছয়তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মিত হবে। ড. কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেলের বর্তমান বাংলো ভেঙে সেখানে ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১০ তলা, ৮ তলা ও পাঁচতলা তিনটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হলেই আবাসিক শিক্ষকদের জন্য ২০টি ফ্ল্যাটসহ ১১ তলা বিশিষ্ট একটি করে শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হবে।

ছাত্রীদের ৬টি আবাসিক হল ভবন
ছাত্রীদেরও আবাসিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙে আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ ১ হাজার ছাত্রীর জন্য একটি ১৫তলা ছাত্রী হল নির্মাণ করা হবে। শামসুন নাহার হলের ভেতরে বিদ্যমান হাউজ টিউটর কোয়ার্টার ও গ্যারেজ ভেঙে ৬০০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা ও ছয়তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের বিদ্যমান স্টাফ কোয়ার্টারের ‘বি’ ও ‘ডি’ ভবন ভেঙে সেখানে ৫০০ ছাত্রীর জন্য ১১ তলা ও ৮ তলা দুটি হল নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ভেতরে প্রভোস্ট বাংলো, হাউজ টিউটর কোয়ার্টার ও তিনতলা সিকদার মনোয়ারা ভবন ভেঙে ৫০০ ছাত্রীর জন্য ১০ তলা সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি হলে আবাসিক শিক্ষকদের জন্য একটি করে ২০টি ফ্ল্যাটসহ ১১ তলা শিক্ষক কোয়ার্টারও নির্মাণ করা হবে।

শিক্ষকদের আবাসিক ভবন
শিক্ষকদের জন্যও আলাদাভাবে এই প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের বর্তমান প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে সেখানে একটি দুইতলা বিশিষ্ট উপ-উপাচার্যের বাংলো নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফুলার রোড আবাসিক এলাকার ১২ ও ১৩ নম্বর ভবন ভেঙে সেখানে শিক্ষকদের জন্য ১৫ তলা বিশিষ্ট (মোট ১১২টি ফ্ল্যাট) একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।

১২ তলা ডাকসু ভবন
ডাকসু ভবন ভেঙে সেখানে ১২ তলা মাল্টিপারপাস ডাকসু ভবন নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম অংশ ভেঙে সেখানে ২০ তলা ভবন এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ভেঙে সেখানে চারতলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। জিমনেসিয়ামের জন্য প্রি-ইঞ্জিনিয়ারড ভবনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হবে।

বদলে যাবে খেলার মাঠ
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আধুনিক ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য গ্যালারি, খেলার মাঠ, বাস পার্কিং ও পরিচালকের অফিসসহ খেলোয়াড়দের ডরমিটরি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূল খেলার মাঠের আয়তন ১০ হাজার ৯০০ বর্গমিটার, গ্যালারি ২ হাজার ৪০ বর্গমিটার, বাস পার্কিং ২ হাজার ৯০০ বর্গমিটার এবং পরিচালকের অফিস ও ডরমিটরি মিলিয়ে ৪ হাজার ৩২ বর্গমিটার আয়তনের স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ী আবাসিক এলাকার চতুর্থ শ্রেণির ভবনগুলো ভেঙে সেখানে ছয়তলা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার ভবন নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান একতলা মসজিদুল জামিয়া ভবন ভেঙে চারতলার মসজিদুল জামিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জলাধার সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। পাশাপাশি রোড নেটওয়ার্ক ও সার্ভিস লাইন স্থাপন, ২৪ হাজার ৮২০ মিটার দীর্ঘ ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার (ওয়েস্ট বিনসহ) ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও জগন্নাথ হলে বসানো হবে পাবলিক টয়লেট।

মন্তব্য করুন


Link copied