বিশেষ প্রতিনিধি॥ দুইদিন আত্মগোপনে থাকা পর অবশেষে উদ্ধার হলো নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীণ লি. কারখানার শ্রমিক ছাইদুল ইসলাম সাইফুল ওরফে বাবু (২৫)। ষড়যন্ত্র করে ইপিজেডে পুণরায় শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজের মিথ্যে নিখোঁজের অভিনয় করে সে।
রবিবার(১৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে নীলফামারী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) এ বি এম ফয়জুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, নীলফামারী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এম আর সাঈদ উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, চলতি মাসের গত ২ সেপ্টেম্বরের নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ইন্ধন দিয়েছিলেন সাইফুল। ঘটনার একদিন পর মালিক পক্ষের সাথে শ্রমিকদের বৈঠক শেষে শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেয়া হলে সাইফুলের মুল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে না দেখে নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে নিখোঁজের মিথ্যে খবর ছড়ায়। সেই পরিস্থিতিকে পুঁজি করে সাইফুল এভারগ্রীণ থেকে চাঁদা আদায় এবং সারাদেশে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইপিজেড থেকে স্ত্রীকে আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন সাইফুল। ওইদিন রাতে তার বাবা নীলফামারী সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় স্থান পরিবর্তন করে চাঁদা দাবী করেন এভারগ্রীনের কাছে। ফ্যাক্টরী থেকে ৫ হাজার টাকাও পাঠানো হয় তাকে। শনিবার(১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সৈয়দপুর শহরের বাসটার্মিনাল এলাকায় থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে সাইফুল পুলিশকে আত্মগোপনে থাকার কথা জানান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হবে এবং আর কারা জড়িত রয়েছে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে। তিনি বলেন, বহিঃবিশ্বে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি।
নীলফামারী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) এম আর সাঈদ জানান, এঘটনায় ডিবি পুলিশের পক্ষে সাইফুল ইসলাম ও তার বাবা শফিকুল ইসলাম সহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। সেইসাথে আদালত সাইফুলের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তদন্ত চলছে, সকল আসামীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গতঃ গত ২ সেপ্টেম্বর উত্তরা ইপিজেডের এভারগ্রীন বিডির শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে হাবিব ইসলাম (২০) নামে এক শ্রমিক নিহত হন এবং আহত হন অন্তত শ্রমিকসহ ২৪ জন।
উত্তরা ইপিজেডের শ্রমিক আন্দোলনে মূল পরিকল্পনাকারী কে এই সাইফুল ?
নীলফামারীর সদর উপজেলার উত্তর মুশরত কুখাপাড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম বাবু(২৫)। সে উত্তরা ইপিজেডের পরচুলা এভারগ্রীন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেডের শ্রমিক।
নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র ও কোম্পানির শ্রমিকরা জানা যায়, এভারগ্রীন প্রোডাক্টস ফ্যাক্টরি (বিডি) লিমিটেড ৫১ জন শ্রমিককে ছাটাই করা হয়। সেই তালিকায় ছিল সাইফুল। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম সহ নারী শ্রমিকদের সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও ছিল। কিন্তু সে শ্রমিক ছাটাই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু করে ষড়যন্ত্র। ৫১জন শ্রমিককে ছাটাইয়ের কারন, ন্যায্য বেতন, অতিরিক্ত কাজের মুল্য পরিশোধ এবং ছাঁটাইকৃত পুরাতন শ্রমিকদের পুনর্বহাল সহ ২৩ দফা দাবি নিয়ে সেটিকে পুঁজি করে গত ২৮ আগষ্ট শুরু হয় শ্রমিকদের কর্মবিরতি। ভাগ হয়ে যায় দুটি গ্রুপে। একটি গ্রুপ ছিল সাইফুলের। অপর গ্রুপ ছিল ন্যায্য দাবি নিয়ে কর্মবিরতি করা শ্রমিকদের। সেখানে কোম্পানির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিত সাইফুল। এমনকি তার তৈরি ফেইসবুক আইডি ‘নীলফামারী নিউজ টিভি’তে আন্দোলন নিয়ে ভিভ্রান্তিমূলক প্রচার-প্রচারনা শুরু করে।
জানা যায়, শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলাকালিন গত ৩০ আগষ্ট সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কিছু দাবি মেনে নিলে সেখানে বাধা সৃষ্টি করে সাইফুল। ফলে পূণরায় কর্মবিরতি অব্যাহত থাকে। চারদিন ধরে শ্রমিকদের কর্মবিরতি ফলে উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়। এমনকি কারখানা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে সেখানে বড় ধরণের সংঘর্ষের পরিকল্পনাও চলছে।
আন্দোলনের প্রভাবে উৎপাদনে ঘাটতি ও সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় গত ১ সেপ্টেম্বর কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করে। সেখানে তারা বলেন, টানা আন্দোলনের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী ২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী নোটিশে পুনরায় খোলার কথা জানানো হবে।
২ সেপ্টেম্বর কি ঘটেছিল উত্তরা ইপিজেডে ?
অপর একটি নির্ভোরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে নীলফামারী জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা: খায়রুল আলম এবং জেলা শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের সভাপতি মো জুয়েল ইসলাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তি, সাইফুল ইসলাম সহ উক্ত কোম্পানির শ্রমিকদের সাথে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে তারা এভারগ্রীন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিল।
সাইফুলের তৈরি ফেইসবুক আইডি ‘নীলফামারী নিউজ টিভি’তে সেই বৈঠকের বিভিন্ন ভিডিও প্রকাশিত করা হয়। সেখানে একটি পোষ্টে বলা হয়, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আগামীকাল থেকে শ্রমিকরা কর্মস্থলে যোগ দিবেন।
কিন্তু ২ সেপ্টেম্বর সকালে উত্তরা ইপিজেডের সামনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয়ে ওঠে। কারখানা বন্ধ থাকার নোটিশ শ্রমিকরা পেলেও চক্রান্ত করে সাইফুল শ্রমিকদের কারখানা খোলা ও তাদের সকল দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে শ্রমিকদের ইপিজেডে নিয়ে আসে। কিন্তু ইপিজেডের সামনে এভারগ্রীণ কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে সাইফুলের উপর সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষনিক সাইফুল শ্রমিকদের উস্কিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ইপিজেডের ভিতরে প্রবেশ চেষ্টা করে। ইপিজেডের রক্ষিরা বাধা দিলে তারা ইপিজেডের সামনের প্রধান সড়ক অবরোধ করে। এতে নীলফামারী-সৈয়দপুর মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। তবে সংঘর্ষের আভাস পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন সাইফুল ইসলাম। এমনকি সেদিন তাকে কেউ আর দেখে নি। তার কোন সন্ধ্যানও পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে সেদিন সকাল থেকে পরিস্থিত খারাপ হতে দেখে ইপিজেডের অভ্যন্তরে অন্যান্য কোম্পানিগুলো দ্রুত ছুটি ঘোষনা করে কর্মচারী ও শ্রমিকদের বাড়ি যেতে বলেন। এবং পরবর্তী নিদের্শনা না দেওয়া পর্যন্ত কোম্পানি বন্ধ রাখেন।
যানজট নিরসন ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক আনার চেষ্টা করা হলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষ সৃষ্টি হতে থাকে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয় শ্রমিক হাবিব ইসলাম(২০)। হাবিব সদর উপজেলা সংগলশী ইউনিয়নের কাজিরহাট মাছিরচাক গ্রামের দুলাল হোসেনের ছোট ছেলে এবং উত্তরা ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল (স্পিনিং অ্যান্ড কম্পোজিট) কোম্পনির কর্মী। এঘটনায় সেদিন দুই নারী শ্রমিক সহ ৭জন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সহ অন্তত ২৪জন আহত হন।
পরে সেনাবাহিনী, নীলফামারী ব্যাটালিয়ন ৫৬ বিজিবির দুই প্লাটুন, পুলিশ, র্যাব একত্রিত কাজ করে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। ওই ঘটনার পর সেদিন নীলফামারী জেলা থেকে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল সকাল ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিজিবি হস্তক্ষেপে ২টা ২০ মিনিটে সড়ক যোগাযোগ পূণরায় স্বাভাবিক হলেও বিকাল পনে ৪টার দিকে নিহত হাবিব ইসলামের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই জোরপূর্বক তালা ভেঙ্গে নীলফামারী ২৫০ শষ্যা হাসপাতালের মর্গ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় স্বজন ও এলাকাবাসী। পরে তার মরদেহ নিয়ে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের ইপিজেডের সামনে সড়ক অবরোধ করেছিল। সেখানে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড এলাকা পরিদর্শন ও নিহতের পরিবারকে শোক-সন্তপ্ত সান্তনা দেন এবং অবরোধ তুলে নিতে বললে পরে সাড়ে ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
তবে ঘটনার দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা: খায়রুল আলম কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ১ সেপ্টেম্বর রাতে এভারগ্রীন কর্তৃপক্ষের সাথে শ্রমিকদের ন্যায দাবি নিয়ে তারা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। এভারগ্রীণ কর্তৃপক্ষ আশ্বাসও দিয়েছিল শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিলে এলে তাদের দাবি পূরণ করা হবে।
প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিকদের বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান ও ইপিজেড পূণরায় চালু:
উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিক অসন্তোষ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটনার দিন (২ সেপ্টেম্বর) ও তার পরের দিন (৩ সেপ্টেম্বর) ইপিজেডের সকল কারখানা বন্ধ ছিল। ৩ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা সারে সাতটা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কারখানা মালিক, বেপজা কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবিগুলো কারখানা মালিকরা মেনে নেওয়ায় ৪ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ইপিজেডের কারখানাগুলো পূণরায় চালুর সীধান্ত নেয়া হয়। তবে এভারগ্রীনের সাথে বেপজার ও শ্রমিকদের কিছু চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের পর ৬ সেপ্টেম্বর এভারগ্রীণ কারখানা চালু হয়।
নতুন করে কেনো ষড়যন্ত্র করছিল সাইফুল:
জানা যায়, কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সাইফুল পুণরায় নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডসহ সারাদেশে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী পরিকল্পনা করে। আন্দোলনকে পুঁজি করে বেপজা কর্তৃপক্ষ থেকে বড় ধরণের মোটা অংকের টাকা নেয়ার উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা ছিল তাদের। সেই পরিকল্পনার একটি অংশ হিসেবে গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইপিজেড থেকে স্ত্রীকে আনার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে সাইফুল। এরপর ইপিজেডের সামনের বাজারে তার মোটরসাইকেলটি রেখে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায় সে। সেদিন রাতে সাইফুলের বাবা শফিকুল ইসলাম নীলফামারী সদর থানায় নিখোঁজের একটি সাধারণ ডায়েরী করে।
কিন্তু সাইফুলের পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। আত্মগোপনের থাকার পরিকল্পনা ছিল ৭ দিনের। এদিকে সাইফুলের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুমহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এভারগ্রীণ কারখানার শ্রমিক সাইফুল ইসলাম নিখোঁজ ও তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে সত্য না জেনে ভুয়া ও মিথ্যা প্রচারণা চালানো শুরু হয়।
পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাতদিন পর অচেতন ও আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় নীলফামারীর আশপাশ এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হবে। এবং ইপিজেড কর্তৃক অপহরণ ও হত্যার চেষ্টা এই ধরনের নাটক সাজিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং দেশের ও ইপিজেডের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। সেই সাথে শ্রমিকদের উস্কিয়ে দেশে বড় ধরণের শ্রমিক আন্দোলের পরিকল্পনাও ছিল।
নিজের জালে কিভাবে ফেসে গেল সাইফুল
শুরুর দিকে ঘটনাটি নিখোঁজের হলেও পুলিশের সন্দেহে কাটা ও তদন্তে বিভিন্ন রহস্য উদঘাটন হতে শুরু করে। তদন্তে বের হয়, ঘটনার দিন ১২ সেপ্টেম্বর ইপিজেড বাজারে পরিচিত এক দোকানের সামনে তার মোটরসাইকেল ও দোকানে মোটরসাইকেলের চাবি রেখে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রংপুরে চলে যায়। সেখানে রাতে বাসে করে সে সিরাজগঞ্জ পরিচিত একজনের বাড়িতে অবস্থান নেয়। তার নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর কিছু সাংবাদিক তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বললে পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলতে চাননি। এদিকে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ইপিজেড এলাকায় চলমান শ্রমিক অসন্তোষকে পুঁজি করে এভারগ্রীণ মালিক পক্ষের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে সাইফুল। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা পাঠানো হয় তাকে। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে অবগত করে। এতে পুলিশের সাইফুল ও তার পরিবারের লোকজনের ওপর সন্দেহ সৃষ্টি হয়। সাইফুল ও তার পরিবারের মোবাইল ট্যাকিং ও কলহিস্টি বের করে। এতে বের হয় নিখোঁজের দিন থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর পর্যন্ত সাইফুলের আরেকটি নম্বর থেকে পরিবারের সাথে কয়েকদফা যোগাযোগ হয়।
এদিকে সাইফুলের পরিবার তাকে জানায় বাসায় সাংবাদিকরা এসেছিল। ফলে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে দেখে সেদিন সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে করে রাত সোয়া ৯টার দিকে সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ডে আসে সাইফুল। এরপর নাটক করে শরীরে কাদা মেখে আশপাশের মানুষের মোবাইল ফোন থেকে তার এক চাচাতো ভাইকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বলে। উদ্দেশ্য ছিল সকলকে এই বলা যে অপহরণকারীদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছে।
এদিকে স্থানীয়রা দ্রুত সৈয়দপুর থানায় খবর দিলে সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ সৈয়দপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সাথী ফার্মেসীর সামনে থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। তাকে নীলফামারী সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং অজ্ঞান হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সাইফুল সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে এবং সে নাটক করতে বলে চিকিৎসক জানালে পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে সাইফুল সব স্বীকার করে যে এটি একটি পূবপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্র ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, এই ধরনের নাটক সাজিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া প্রচারণা চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার প্রচেষ্টা। এই পরিকল্পনায় তার সাথে এলাকার স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ও সাইফুলের বাবা শফিকুল ইসলাম জড়িত।