নিউজ ডেস্ক: রাজার ছেলেই রাজা হবেন। সেই সূত্রেই আটকে আছেন শেখ হাসিনা। গণঅভ্যুত্থানে রাজপরিবারের সবাই পালিয়েছেন। মার খেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা। রাজদরবারের গুরুত্বপূর্ণ কারো গায়েই ভুলের টোকাটি লাগেনি। তবে রাজনৈতিক ফায়দার বেলায় হাসিনা ভরসায় সেই তৃণমূলের কেউ নেই। তিনি নেতৃত্ব দিতে চান তার পরিবারের কাছে। বাকিদের কথা তো নয় বরং তিনি নিজ দলের লোকের কথাও ভাবছেন না। তারা খেয়ে দেশ ছাড়ার পরও দিল্লিতে হাসিনা মশগুল শেখ পরিবারের আঁখের গোছাতে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছে হাসিনা এবার নিজের কবর নিজেই খুরছেন। ভালো করতে গিয়ে ডেকে আনছেন বিপদ।
দা প্রিন্টের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে হাসিনার নতুন মডেলের ভুল নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। ভারতের কংগ্রেস পার্টির মতোই হাসিনা চান তার ছেলেমেয়েকে সামনে আনতে। সজীব ওয়াজেদ জয় দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কার্যত মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি তুলে ধরছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিত্র আর দলের অবস্থান। অন্যদিকে মেয়ে সাইমা ওয়াজেদ পুতুল নেপথ্যে সামলাচ্ছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বক্তৃতা লেখা, রাজনৈতিক কর্মসূচির পরিকল্পনা এমনকি কূটনৈতিক বৈঠকে মায়ের প্রতিনিধিত্ব পর্যন্ত করছেন তিনি। কথা আছে এই দুই সন্তানকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসবেন হাসিনার ভাগ্নে রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। যেন একেবারে পারিবারিক নেতৃত্বের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়ে যাচ্ছে। দলের ভেতরের একাংশ বলছেন গান্ধী পরিবারের সঙ্গে হাসিনা পরিবারের পুরনো সম্পর্কই হয়তো তাকে এই পথে হাঁটতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এটি কি সঠিক পদক্ষেপ? বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব তো কেবল কোটার দাবিতে শুরু হয়নি তা রূপ নিয়েছিল এক বৃহত্তর বিদ্রোহে। বংশানুক্রমিক রাজনীতির বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে।
আর তারই প্রতীক হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবার। মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে শুধু সরকারের পতন ঘটায়নি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাড়ি ধানমন্ডি 32 নম্বর ও ধ্বংস করে দিয়েছে। যেন তারা অতীতের এক অধ্যায়কে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। এই ক্ষোভ কি এত সহজে ভুলে যাবে মানুষ? অনেকেই মনে করেন হাসিনার পরিবার এখনোদুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত নয়। ভূমি সংক্রান্ত একাধিক মামলায় ইতোমধ্যেই সাক্ষ্য দিয়েছে অনেকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন কংগ্রেসের মডেল হয়তো ভারতের জন্য এক ধরনের ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে কিন্তু বাংলাদেশে তার কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ ভারতের ইতিহাসে কংগ্রেস কখনো গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়নি অথচ শেখ হাসিনা সরাসরি গণরশের মুখে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এখানেই পার্থক্য। তাহলে জয় ও পুতুলের ভবিষ্যৎ কি? কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন তারা যদিও কথিত শিক্ষিত আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচিত এবং সোকল্ড আধুনিক মানসিকতার মানুষ কিন্তু মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির অভিজ্ঞতা ছাড়া নেতৃত্ব গড়া খুব কঠিন তরুণ প্রজন্ম এখন এমন কাউকে চায় যিনি রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন মানুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থেকেছেন কেবল নাম পরিচয় বা বংশগৌরব সর্বস্ব নয় রাজনীতির এই সন্ধিক্ষণে দলে দলে অনেকে বলছেন আওয়ামী লীগের উচিত নতুন মডেল খোঁজা যে মডেল তরুণদের আকৃষ্ট করবে মানুষকে আবারো আস্থার জায়গা ফিরিয়ে দেবে।
বংশানুক্রমিক রাজনীতি থেকে সরে এসে যদি নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে তবেই হয়তো দলটির পুনর্জন্ম সম্ভব। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যদি সত্যিই জাতীয় নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগের সামনে বড় প্রশ্ন? তারা কি ভোটের ময়দানে ফিরতে পারবে? নাকি পারিবারিক উত্তরাধিকারী তাদের জন্য হয়ে উঠবে আরেকটি ভুল পদক্ষেপ? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর মিলবে। আপাতত আওয়ামী লীগের ভেতরে চলছে সেই উত্তেজনা। হাসিনার পর কে? আর তার ছায়াতেই ভাসছে বাংলাদেশের রাজনীতির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।