আর্কাইভ  শনিবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৫ ● ৮ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৩ আগস্ট ২০২৫
রাজনীতিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

♦ যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রেও
♦ নির্বাচনে আগ্রহীরা ঘুরছেন এলাকায়
রাজনীতিতে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ

মা–বাবার সঙ্গে দুই ছেলের একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গেই মৃত্যু

কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনা
মা–বাবার সঙ্গে দুই ছেলের একসঙ্গে যাত্রা, একসঙ্গেই মৃত্যু

নারী কাণ্ডে চাকরি হারালেন বেরোবি সমন্বয়ক রহমত

নারী কাণ্ডে চাকরি হারালেন বেরোবি সমন্বয়ক রহমত

চীন যাচ্ছেন নাহিদসহ এনসিপির ৮ নেতা

চীন যাচ্ছেন নাহিদসহ এনসিপির ৮ নেতা

চোঁখ হারিয়েও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন জুলাই যোদ্ধা লামিম

রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, বিকাল ০৭:১৫

Advertisement Advertisement

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ৪ আগষ্ট ২০২৪। খেলতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন লামিম। অংশ নেন আন্দোলনে। পুলিশের সাথে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। গুলিবিদ্ধ হয় বাম চোখ। রক্তাক্ত শরীরসহ হাসপাতালে নিয়ে যায় সহযোদ্ধারা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের মমিনুল-সাবিনা দম্পতির সন্তান লামিম হাসান। একাধিকবার চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক হয়নি চোখ। ক্রমশ বেড়ে চলছে রোগের পরিধি। জুলাই আন্দোলন কেড়ে নিয়েছে চোখের আলো। চোখ হারিয়ে আফসোস নেই তার। রয়েছে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকার জোড়ালো আবদার। আর স্বপ্ন দেখছেন নতুন বাংলাদেশের।

চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা লামিম হাসান বলেন, আমার চোঁখটা এখন আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে। ওই চোখঁ দিয়ে কিছুই দেখতে পারি না আমি। তবে এখন পানি পরে চোঁখ দিয়ে, আর ঘামে যায় এতে আমার সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমার তাতেও কোন আফসোস নেই। আমার তো চোঁখ নেই শুধু কিন্তু অনেকেই তো বেচেঁ নেই। শহীদ হয়েছে আমার অনেক ভাই আমি তাদের জন্য দোয়া করি। আর ১ বছর হয়ে গিয়েছে আন্দোলনের। আমি চাই নতুন এক বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে থাকবে না কোন অন্যায়, দূর্নীতি, হানাহানি ও বিভেদ। এখনো তেমন বাংলাদেশ আমরা পাই নাই। আমার যেসকল ভাই এখনো অসুস্থ তাদের চিকিৎসা যেন ভালো ভাবে হয়। যারা দেশের জন্য নিজেদের শরিরের অঙ্গ হারিয়েছে তাদের যেন বিদেশে নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা করা হয় এটাই আমার চাওয়া।

চোখের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থান। সন্তানের এমন ত্যাগে গর্বিত লামিমের পরিবার। নির্বাচনের আগে সরকারের দেওয়া আশ্বাস পূরণের দাবি তাদের।

লামিমের বাবা মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশ থেকে ফ্যাসিষ্ট সরকারকে বিতারিত করতেই লামিম সেদিন আমাদেরকে না বলেই আন্দোলনে গিয়েছিল। তার চোঁখে যখন বুলেট লাগে তখন খবর পেয়ে আমি তাকে গিয়ে হসপিটালে পাই। আর এখানে দেরি না করে ছেলেকে প্রথমে দিনাজপুর তারপরে ঢাকা নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাই। নিজের বাসার জমি বন্ধক রেখে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। তাতে কোন দু:খ নেই কারণ এখন আমরা একটি ফ্যসিষ্টমুক্ত দেশে নিশ^াস নিতে পারছি। আমার ছেলের একটি চোঁখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাতে তার যেমন কষ্ট নেই আমারো কষ্ট নেই। তার যে ত্যাগ সেই ত্যাগ তো আর বৃথা যায় নাই। সেজন্য আমি গর্ববোধ করি। এখন ছেলের চোঁখ আবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকার যা সহযোগীতা করেছিল তা দিয়ে কিছুটা চিকিৎসা হয়েছে। তবে এখন উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, আর যে সহযোগীতা করা হয়েছিল সেটি খুবই সামান্য। সেজন্য সরকারের কাছে আবেদন আমার ছেলের চোঁখের যেন ভালো ভাবে দেশের বাহিরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

আন্দোলনে অংশ নিয়ে এখনো শরীরে বুলেট বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। সাধ্যমত চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেনি তারা। প্রশাসনের শরণাপন্ন হয়ে পাচ্ছেন না সহযোগিতা। দেশ সংস্কারের আগে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জোর দাবি যোদ্ধাদের।

আহত জুলাই যোদ্ধা মেহরাব হোসেন বলেন, জুলাই আন্দোলনের এক বছর পার হয়ে গেলেও এখনো আমরা অনেকেই তেমন কোন সহযোগীতা পাই নাই। অনেকেই সহযোগীতা পেলেও এখনো অনেকেই বাদ আছে। দেশ সংস্কারের আগে আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আর আমাদের চিকিৎসার জন্য যে সহযোগীতা করা হচ্ছে তা খুবই সামান্য। আমি মনে করি আন্দোলনে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের বিদেশে দ্রæত নিয়ে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। কারণ তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ এই ফাসিষ্টমুক্ত দেশ পেয়েছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, জেলায় তিন শতাধিক আহত জুলাই যোদ্ধাকে সহযোগিতা করেছে প্রশাসন। এখনো অনেকেই বাদ রয়েছে জুলাই যোদ্ধা তালিকায়। যারা আহত হয়েছিল তাদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি বাদ পড়া যোদ্ধাদের নামের তালিকা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন


Link copied