নিউজ ডেস্ক: ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে গত বছরের অক্টোবরে ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট।
এর মধ্যে ৭ জনের পদত্যাগ, অপসারণ ও অবসরের পর এখনো ৫ বিচারপতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এই ৫ জনের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে একজনের বিষয়ে ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
যেভাবে ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়
১৫ অক্টোবর রাতে ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারকদের পদত্যাগের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও করতে ফেসবুকে ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম।
১৬ অক্টোবর দুপুরে মিছিল নিয়ে হাইকোর্ট চত্বরে আসেন শিক্ষার্থীরা। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে দক্ষিণ গেট দিয়ে ঢুকে তারা হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সঙ্গে ছিলেন আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম।
আদালত প্রাঙ্গণে হাসনাত-সারজিসসহ অন্য শিক্ষার্থীদের নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। আগে থেকেই সেখানে অবস্থান করে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ। এর সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ।
এই কর্মসূচি চলার মধ্যেই বেশ কয়েকজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আলোচনার পর ১৬ অক্টোবর বিকেলে ছাত্রদের সামনে এসে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। বিচারপতি অপসারণের বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা রাষ্ট্রপতি। তাদের পদত্যাগ বা অপসারণ; সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় উনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ (অক্টোবর) তারিখ যে কোর্ট খুলবে, তারা বিচার কাজে অংশ নিতে পারবেন না।
বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল পুনরুজ্জীবিত হয়। এরপর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কার্যক্রম শুরু করে। অপর দুই জন হলেন, বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে এই কাউন্সিল যাচাই বাচাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ পাঠান। সংবিধান অনুসারে, প্রধান বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে এ কাউন্সিল গঠিত হয়। এরপর কয়েকজন বিচারপতির আচরণের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে কাউন্সিল।
এ অবস্থায় দীর্ঘদিন বিচার কাজের বাইরে থাকা (বেঞ্চ না পাওয়া) তিন বিচারপতি ১৯ নভেম্বর পদত্যাগ করেন। ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে জানানো হয়, হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাদের বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়েছে। সেই থেকে তারা আর বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারেননি।
সেই তিন বিচারপতি হলেন, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।
১২ বিচারপতির সর্বশেষ তথ্য
৩০ জানুয়ারি বিচারপতি সাহেদ নূরউদ্দিন পদত্যাগ করেন। এছাড়া দুইজন বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি। তারা হলেন, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন। অপর দুই বিচারপতি এরইমধ্যে অবসরগ্রহণ করেছেন। তারা হলেন, বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খান ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস।
আর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পর দুই বিচারপতিকে অপসারণ করেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন, বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
বাকি ৫ জনের বিষয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে তদন্ত চলমান রয়েছে। এই পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে গত ২৩ মার্চ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলকে নির্দেশনা দেন। ১ জুলাই কাউন্সিলের সামনে হাজির হয়ে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান। এর ধারাবাহিকতায় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত শুনানির দিন ধার্য করেছেন।