স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গত দুইদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে নীলফামারীর ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারেজে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, রবিবার(১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ৬টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫) দশমিক ৬ সেন্টিমিটার (৫২.০৯) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। তবে যেকোন সময় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তিনি বলেন, তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচগেট খুলে রেখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাগণ সকাল থেকে নজরদারী করছে। বর্তমানে তিস্তা অববাহিকায় কমলা সর্তকাবস্থা জারী করা হয়েছে।
অপরদিকে ভারতের সীমান্ত তিস্তা নদীর মেখলিগঞ্জ পয়েন্টে তিস্তার পানি বিকাল ৪টায় বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, গত ৪৮ ঘন্টায় তিস্তায় ৩৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে ১২ ঘন্টায় ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সুত্র মতে, আগামী ২৪ ঘণ্টা তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, তাই তিস্তা অববাহিকায় যে কোন সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করে সাধারণ বন্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তিস্তা নদীর অববাহিকায় নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট- এই পাঁচ জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদুল ইসলাম শোভন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
নিভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, গত তিনদিনে(বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার) গোজলডোবা থেকে ছয় হাজার, চার হাজার ৭০০ কিউসেক ও এক হাজার ৯০০ কিউসেক পানি ছাড়া হয়। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টায় পানি ছাড়া হয় ১ হাজার ৭২৮ ও বেলা সারে ১১টায় পানি ছাড়া হয় আরও দুই হাজার কিউসেক। এ ভাবে দফায় দফায় পানি ছাড়া হচ্ছে বলে সুত্রটি নিশ্চিত করে। সুত্রমতে তিস্তা নদীর ভারতের মেখলিগঞ্জ পয়েন্টে বেলা ১২টায় বিপৎসীমার (৬৫.৯৫) ১৮ সেন্টিমিটার হয়। যা ৪ ঘন্টায় ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৯ (৬৬.২৪) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে খবরে বলা হয়। সেখানকার তিস্তায় লালসংকেত জারী করা হয়েছে। এছাড়া দুপুর ২ টার দিকে ভারতের তিস্তার দো-মোহনী পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার (৮৫.৯৫) ১৮ সেন্টেমিটার(৮৫.৭৭) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেখানে হলুদ সংকেত জারি করা হয়েছে।
অপর দিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র মতে, তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে ৩৮ মিলিমিটার, কাউনিয়া পয়েন্টে ১৮ মিলিমিটার, গাইবান্ধা পয়েন্টে ১০১ মিলিমিটার, পঞ্চগড়ে ৮৯ মিলিমিটার এবং আবহাওয়া অফিস সুত্র মতে, রংপুরে ৮ মিলিমিটার, তেঁতুলিয়ার ৬৯ মিলিমিটার, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩৯ মিলিমিটার ও নীলফামারীর ডিমলায় ২২ মিলিমিটার বৃস্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এদিকে হঠাৎ করে তিস্তা নদী ফুঁসে উঠায় তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চল ও চরবেষ্টিত গ্রামে বসবাসকৃত কৃষক পরিবারের মাঝে চিন্তার ভাজ পড়েছে। চলতি বছরের(২০২৫) গত আগষ্ট মাসের তিন দফায় তিস্তার বন্যায় এ সকল পরিবারের বোনা আমনধানের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর তারা পুনরায় সেখানে আমন চারা রোপন করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে পুনরায় তিস্তায় বন্যাহানা দিলে কৃষক পরিবারগুলো পথে বসবে বলে মন্তব্য করেছেন তিস্তাপাড়ের টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন। তিনি বলেন, গত দিন দফা বন্যায় আমার ইউনিয়ন এলাকায় ২০ হেক্টর আমন ক্ষেত সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
একই কথা জানালেন তিস্তাপাড়ের পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান। তিনি জানান, গত আগষ্ট মাসের তিন দফা বন্যায় তার এলাকায় ৫০ হেক্টর জমির আমন ধান চারা নস্ট হয়। এ ছাড়া খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী,ঝুনাগাছ চাঁপানী এলাকায় ৫০ হেক্টর আমন ক্ষেত নস্ট হয়। সেখানে নতুন করে কৃষকরা চারা রোপন করেছে। এবার বন্যা হলে আর করার কিছুই থাকবে না।
দুই ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, যেহেতু তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, রাতে হয়তো বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তাই বন্যা কবলিত এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোকে জরুরী জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে আসার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।