আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫
► ২৩৭ বছর আগে মৃত্যু হয়েছিল ৭৪ হাজার মানুষের
► খরায় বালুচর, বর্ষায় বন্যা এ নিয়ে জীবনযাপন

তিস্তাপাড়ের মানুষের কান্না মহাপ্লাবনের পর থেকেই

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, দুপুর ০৩:০৪

Advertisement Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদক:  ১৭৮৭ সালের ২৭ আগস্ট সর্বনাশা তিস্তা নদী যখন গতিপথ পরিবর্তন করে তখন মহা প্রলয় ঘটেছিল এই বৃহত্তর রংপুরে। সেই থেকে আজ অবধি দুর্ভোগ বয়ে বেড়াচ্ছে তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ। কখনো এপার ভেঙে ওপার গড়ে, আবার কখনো দুকূল উপচিয়ে প্লাবিত করে। শুকনো মৌসুমে একটু পানির জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে দুপারের মানুষ। তাই অনেক আশায় বুক বেঁধেছিল তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষ ভারত হয়তো তিস্তাপাড়ের মানুষের কান্না শুনে শুকনো মৌসুমে পানির ন্যায্য হিস্সা দেবেন। সঠিক পরিচর্যার অভাবে তিস্তা মরতে বসেছে। তিস্তার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্সা চেয়ে কয়েকযুগ ধরে আন্দোলন চললেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

ঐতিহাসিকদের মতে ১৭৮৭ সাল পর্যন্ত তিস্তা উত্তরাঞ্চলের প্রধানতম নদী ছিল। এ নদী তখন পদ্মার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। নাগর নদ ছিল করতোয়ার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ১৭৮৭ সালে এ অঞ্চলে ভূআন্দোলনের ফলে বরেন্দ্র এলাকার ভূপ্রকৃতিতে ব্যাপক পরির্বতন হয়। এ সময় নাগর নদ করতোয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তিস্তার পুরাতন স্রোতধারা বাধা প্রাপ্ত হয়ে গতি পরিবর্তন করে পদ্মার পরিবর্তে যমুনা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। সে সময় আত্রাই ও পুনর্ভবা ছোট মরা নদীতে পরিণত হয়।

 

পরিবর্তনের ফলে আত্রাই তিস্তার বিপুল পরিমাণ পানি বহন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। বালি জমে আত্রাইয়ের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তিস্তা নিষ্কাষণের কোনো পথ না পেয়ে ক্ষীণ ধারার ঘাঘট দিয়ে প্রবাহিত হতে চায়। ১৭৮৭ সালের ২৭ আগস্ট হঠাৎ তিস্তা বর্তমান পথে প্রবাহিত হতে শুরু করলে বৃহত্তর রংপুরে ভয়াবহ মহা প্লাবনের সৃষ্টি হয়। একদিনের এই মহা প্লাবনে তৎকালীন সময়ে রংপুরের ৬ ভাগের ১ ভাগ অর্থাৎ ৭৪ হাজার মানুষ মারা যান। হাজার হাজার একর ফসলি জমি দখল করে নেয় প্রমত্তা তিস্তা। সে দিন থেকে রংপুরবাসীর ভাগ্যে যুক্ত হয় দুর্ভাগ্য নামক একটি শব্দ। নীলফামারী, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার এই নদী অববাহিকার কোটি মানুষ জানে না কবে তাদের ভাগ্য থেকে দুর্ভাগ্য নামক শব্দটি মোচন হবে।

 

ইতিহাস লেখকদের মতে ১৭৮৭ সালে মহাপ্লাবনের সময় রংপুরের কালেক্টরেট ছিলেন ডে হার্ড ম্যাটওয়েল। তিনি ১৭৮৯ সালের ২৮ আগস্ট কোলকাতা ফোর্ট উইলিয়ামে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন মহাপ্লাবনে রংপুর অঞ্চলের ২১টি পরগনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব তথ্য রংপুর গেজেটিয়ার হতে প্রাপ্ত তথ্য বলে উল্লেক করেছেন নদী বিষয়ক বিশিষ্ট লেখক মাহাবুব সিদ্দিকী। এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তিস্তা নদীতে সিকিম এবং ভারত ৩২টি বাঁধ দিয়েছে।

 

এর মধ্যে সিকিমে ২৫টি। ভারতে ৭টি। সিকিমের বাঁধগুলোর অধিকাংশই জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। ৩২টি বাঁধে বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশে পানি আসছে। এই অবস্থায় পানি হিস্সা পাওয়ার বিষয়টি নিছক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। তাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন


Link copied