স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ শারমিন আখতারের (২৭) গর্ভে থাকা সন্তান নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখেছিলেন তার পরিবার। সে স্বপ্নে শারমিন কাটিয়েছেন দীর্ঘ অপেক্ষার ক্ষণ। শেষ মুহুর্তের কষ্ট প্রসব বেদনার পরই আনন্দের খবরের অপেক্ষা করছিলেন শারমিনসহ পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ওই প্রসব বেদনায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে একটি সড়ক দূর্ঘটনা কেড়ে নেয় প্রসূতি মা শারমিনের প্রাণ। এসময় প্রসব করা নবজাতকও (কন্যা শিশু) বিদায় নেয় মায়ের সঙ্গেই।
শনিবার(১ জুলাই) রাত ১২টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের শিমুলতলী নামক স্থানে। প্রসব বেদনায় তাকে নিয়ে ডোমার থেকে একটি সিএনজি (ত্রিহুইলার) যোগে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হন পরিবারের সদস্যরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পথের ওই স্থানে বিপরীতমুখি একটি ট্রাক সিএনজিটিকে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে নিয়ে যায় প্রায় এক কিলোমিটার পথ। এসময় সিএনজি থেকে পড়ে ট্রাকের চাপায় নিহত হন শারমিনসহ তার গর্ভের সন্তান। গুরুত্বর আহত হন শারমিনের সঙ্গে থাকা চার বছরের কন্যা সন্তান ইলমা মনি, মা কহিনুর বেগম (৫০), খালাতো ভাই আসাদুল ইসলামসহ (২৩) তিনজন। আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ডোমার পৌরসভার চিকনমাটি কাচারি পাড়া গ্রামের নাজিম উদ্দীনের মেয়ে শারমিন আখতার। আট বছর আগে সৈয়দপুর উপজেলার কামার পুকুর ইউনিয়নের মতির মোড় এলাকার হায়দার আলীর ছেলে রেজাউল ইসলাম লিটনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। লিটন সৈয়দপুর শহরে দর্জির কাজ করেন। তাদের ইলমা মনি নামে চার বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর শারমিন ডোমারে মায়ের কাছে অবস্থান করছিলেন। শনিবার রাতে প্রসব বেদনা উঠলে তাকে স্থানীয় একটি কিনিকে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসক রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিলে সিএনজি যোগে রওনা হন।
নিহতের বাবা নাজিম উদ্দীন জানান, রবিবার(২ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে নিহত শারমিনসহ তার নবজাতকের লাশ চিকনমাটি কাচারি পাড়ার গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। দূর্ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন,‘আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না। তবে ধরণ দেখে মনে হচ্ছে দূর্ঘটনাটি ট্রাকের সঙ্গে ঘটেছে’। ওই সিএনজিতে থাকা আহতরা সুস্থ হওয়ার পর পুরো ঘটনাটি জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ শাহরিয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,‘দূর্ঘটনার সময় পেটে থাকা বাচ্চাটি প্রসব হয়। মা ও নবজাতকের মৃত্যুর এঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে’।