আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ● ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২৫
রংপুর সিটি বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়কে বর্জ্য ডাম্পিং

নগরবাসীর মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া
রংপুর সিটি বাজার সংলগ্ন প্রধান সড়কে বর্জ্য ডাম্পিং

দিনাজপুরে চলন্ত ট্রেনে গলা কেটে হত্যা

দিনাজপুরে চলন্ত ট্রেনে গলা কেটে হত্যা

ভূমিকম্পের আতঙ্কে পার্বতীপুর মধ্যপাড়া পাথর খনি বন্ধ ঘোষণা

ভূমিকম্পের আতঙ্কে পার্বতীপুর মধ্যপাড়া পাথর খনি বন্ধ ঘোষণা

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বৃহত্তর সুন্নি জোট: তাহেরি

৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বৃহত্তর সুন্নি জোট: তাহেরি

নির্বাচনে অংশ নেবে কি না ‘নিশ্চিত নয়’ জাতীয় পার্টি

মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ০৮:৫৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চলমান সংলাপে ডাক পায়নি জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত কয়েকবার সংসদে বিরোধী দলের আসনে থাকা দলটি মনে করছে, বাংলাদেশ একটি ‘পাতানো’ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে নির্বাচনে অংশ নেবে না প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দলটি।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত পুরোনো রাজনৈতিক দল। ইসি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ করলেও জাতীয় পার্টিকে ডাকেনি। দলের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ করা হলেও ইসির কোনো সাড়া মেলেনি। এমন অবস্থায় আমরা নির্বাচন পাতানো হওয়ার আশঙ্কা করছি।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন স্থগিত থাকায় আওয়ামী লীগকে সংলাপে ডাকা হয়নি। এছাড়া আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টিসহ সাতটি দলকেও সংলাপে ডাকেনি কমিশন। যদিও সংলাপে না ডাকলেও এসব দলের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেখছে না ইসি।

তবে জাপা নেতাদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কর্মসূচিতেও একের পর এক বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। এমন অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যেও পরিবর্তন আসবে এমন আশা নিয়ে মাঠ গোছানোর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে জাপা। পাশাপাশি, জোটগতভাবে কার সঙ্গে যাওয়া উচিত বা উচিত নয়—এ নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে জোর আলোচনা রয়েছে।

দলের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এর আগের জাতীয় নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছি। ফলে এক ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। হয়তো জামায়াত-বিএনপি আলাদা নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টির ভোট ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে।’

দলের নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির সামনে পাহাড় সমান প্রতিবন্ধকতা। নানা অজুহাতে সম্প্রতিকালে জাতীয় পার্টির একের পর এক দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অসংখ্য মামলাও দেওয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

১৪ নভেম্বর দিনাজপুরে জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির কর্মী সম্মেলন পুলিশি বাধার কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের ভাড়া নেওয়া মিলনায়তনে বিকেল ৩টা থেকে কর্মী সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নেতাকর্মীরা ভেতরে প্রবেশের আগমুহূর্তে পুলিশ তাদের সরে যেতে বাধ্য করে।

সম্মেলন স্থগিত হওয়ার পর দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজন করা পথসভায় বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রংপুর সিটির সাবেক মেয়র ও কো–চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শফি রুবেল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জুলফিকার হোসেন।

তবে পুলিশের দাবি ছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায় কেন্দ্র করে সারাদেশে উত্তেজনা ও নিরাপত্তা উদ্বেগ বিরাজ করছে। পাশাপাশি কর্মী সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি না থাকায় অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে ১১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের অবস্থান ও দিকনির্দেশনা জানাতে ঢাকায় সমাবেশের আয়োজন করেছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু পুলিশের বাধায় সেই সমাবেশও আর অনুষ্ঠিত হয়নি।

দলটির অভিযোগ, কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার জন্য তারা আগেই পুলিশের অনুমতি নিয়েছিল। তবুও শেষ মুহূর্তে পুলিশ সমাবেশ স্থলে বাধা দেয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আগেই রাস্তা ফাঁকা রেখে সমাবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ শুরু হওয়ায় তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরও আগে ৩০ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনায় মামলা করতে গেলেও পুলিশ জাতীয় পার্টির মামলা গ্রহণ করেনি বলে জানান মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী।

গণঅধিকার পরিষদ এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছে— জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলসহ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যেন ইসি সংলাপে না বসে এবং এসব দলকে আসন্ন নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়। আরও কয়েকটি দলও একই ধরনের দাবি তুলেছে।

নেতারা জানান, শুধু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্ট পরবর্তীসময়ে। এর মধ্যে ১১টিই হত্যা মামলা। এছাড়া অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সম্প্রতি জাতীয় পার্টির কাকরাইল অফিস ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকার নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। কর্মীদের মনোবল বাড়াতে নানা ধরনের প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনা করছেন। নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি কোনো জোটে অংশগ্রহণ করবে কি না সেটা নিয়েও আলোচনা করতে শোনা যায়।

জেলা-বিভাগীয় পর্যায়ের নেতা মহাসচিবকে বিএনপি বা জামায়াত কোন দলের সঙ্গে জোট করা উচিত সে বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। কাউকে কাউকে জামায়াতের সঙ্গে জোটে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি দিতে শোনা যায়, অনেকে আবার এর বিপক্ষে মত জানান।

পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের পরিবেশ দেখে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, ‘জাতীয় পার্টি একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, তাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ তাদের স্বাভাবিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিকার অর্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে চায়, তবে শুধু জাতীয় পার্টি নয়, সব দলের জন্যই সমান ও ন্যায্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য জাতীয় পার্টিকে বিবেচনায় নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক থেকে নেতাকর্মী পর্যন্ত সবাই যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।’

ড. সাব্বির বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় আইনগতভাবে এখনই জাতীয় পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা সরকারের জন্য সহজ নয়, কারণ এতে নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’

‘যদিও বাস্তবে উল্টো আচরণই দেখা যাচ্ছে—যেন জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। যদিও নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন, বর্তমান পরিস্থিতি এমন ইঙ্গিতই দেয়,’ বলেন এই রাজনীতি বিশ্লেষক।

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এখনো সময় আছে। তফসিল ঘোষণার আগে যে কোনো পূর্বাভাসই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যদি সরকার সত্যিই একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, তাহলে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করাই হবে ন্যূনতম শর্ত।’ খবর-জাগো নিউজ

মন্তব্য করুন


Link copied