আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ● ১ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
‘ন্যানো বানানা এআই শাড়ি’ ট্রেন্ড, কীভাবে বানাবেন পছন্দের ছবি

‘ন্যানো বানানা এআই শাড়ি’ ট্রেন্ড, কীভাবে বানাবেন পছন্দের ছবি

ঢাকা মেডিকেলে চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ-দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য চরমে

ঢাকা মেডিকেলে চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ-দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য চরমে

গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধার

গাইবান্ধায় স্কুল শিক্ষিকার মরদেহ উদ্ধার

রংপুরে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ দিল ছাত্ররা

রংপুরে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে পুলিশ দিল ছাত্ররা

শশী থারুরের কলাম

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-নেপালের আন্দোলন ভারতের জন্য সতর্কবার্তা, কী করবে মোদী সরকার

মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বিকাল ০৫:৫৮

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-নেপালের আন্দোলন ভারতের জন্য সতর্কবার্তা। প্রতিবেশী দেশগুলোতে একের পর এক সরকারপতনে দুশ্চিন্তায় পড়েছে মোদী সরকার। এমন পরিস্থিতিতে ভারত কী করতে পারে, তা নিয়ে এনডিটিভি’তে একটি মতামত লিখেছেন লোকসভার সদস্য এবং ভারতীয় কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য লেখাটির চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো-

নেপালে সম্প্রতি তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে অভ্যন্তরীণ মনে হলেও ভারতের জন্য এটি কৌশলগতভাবে গুরুতর উদ্বেগের কারণ। ঘটনাটি নয়াদিল্লিকে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে প্রতিবেশী অঞ্চলের ভঙ্গুরতার বিষয়টি।

নেপালে এই আন্দোলন কেবল সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ নিয়েই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলশ্রুতিতে তা বিস্ফোরিত হয়েছে। কয়েক দশক ধরে নেপালে গুটিকয়েক নেতার মধ্যে ক্ষমতার চেয়ার বদলালেও তারা বেকারত্ব ও বৈষম্যের মতো মূল সমস্যাগুলো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

 

বড় চিত্র

নেপালে আন্দোলনের সূত্রপাত হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ থেকে, আর তা উসকে দেয় এক মন্ত্রীর গাড়ির চাপায় ১১ বছরের এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু। কিন্তু এর মূল ছিল দুর্বল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং তরুণদের হতাশা। উচ্চ বেকারত্ব ও নিম্ন মাথাপিছু আয় বিপুল সংখ্যক তরুণকে বিদেশে কাজ খুঁজতে বাধ্য করেছে।

আন্দোলনে পরবর্তীতে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী কারফিউ জারি করে এবং আলোচনায় নেতৃত্ব নেয়, আর দেশের প্রেসিডেন্টকে ‘অদৃশ্য’ হিসেবে সমালোচিত হতে হয়।

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অস্থিরতার মতোই এই পরিস্থিতি ভারতের আশপাশে নতুন এক ধারা স্পষ্ট করছে। নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য পুরোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের প্রভাব ও বৈধতা হারাচ্ছে। তরুণরা নতুন নেতৃত্ব চাইছে, বর্তমান পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলছে এবং পুরোনো নেতাদের অবিশ্বাস করছে। এর ফলে ভারতের প্রচলিত প্রভাব খাটানোর কৌশল ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে।

ভারতকে কেন সতর্ক থাকতে হবে

অস্থিতিশীল নেপাল ভারতের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। উন্মুক্ত সীমান্ত একদিকে সুযোগ এনে দেয়, অন্যদিকে সমস্যা তৈরি করে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান, মানবপাচার ও ভারতবিরোধী তৎপরতা বেড়ে যেতে পারে। এতে পাকিস্তানের আইএসআই-এর মতো শক্তি সুবিধা নিতে পারে। এজন্য ভারত সাময়িকভাবে ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সীমান্ত বন্ধ করেছিল। যদিও এখন তা খুলে দেওয়া হয়েছে, সীমান্তে কড়া নজরদারি চলছে ড্রোন ও পরিচয় যাচাইয়ের মাধ্যমে।

এছাড়া চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও ভারতের জন্য চিন্তার বিষয়। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভসহ (বিআরআই) অবকাঠামোগত প্রকল্পের মাধ্যমে বেইজিং সক্রিয়ভাবে নেপালে কাজ করছে। তবে নেপালের তরুণ আন্দোলনকারীরা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘ভারতের হাত’ বা ‘চীনের হাত’—দুটিই প্রত্যাখ্যান করছে।

ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ভেসে যাওয়া নয়

ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ নেপালের আন্দোলনকে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের অংশ বলছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির নিয়োগ সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে দুর্বল করেছে। তিনি ৭৩ বছরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, যিনি রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। প্রতিবাদকারীরা গেমিং অ্যাপ ডিসকর্ডে আলোচনা করে তাকেই নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে।

তবুও এই অস্থিরতা ভারত-নেপাল সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত জলবিদ্যুৎ খাতে আরুন-৩ এবং ফুকোট কর্নালি প্রকল্প বিলম্বিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে, যা ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া আন্দোলনের সময় প্রায় ৩৩ হাজার বন্দি পালিয়ে যায়, যাদের মধ্যে খুনি ও ধর্ষণের আসামিও ছিল। এটি বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে।

ভারতের করণীয় কী

ভারতের সামনে সীমিত হলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিকল্প রয়েছে। সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে নেপালের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানাতে হবে। ২০১৫ সালের মতো কড়া কূটনীতি প্রতিক্রিয়া ডেকে আনতে পারে এবং নেপালকে চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতা, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক জোরদার করে ‘সফট পাওয়ার’ ব্যবহার করতে হবে। বিদ্যমান প্রকল্পগুলো সময়মতো শেষ করা এবং নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত, যা সরাসরি নেপালি জনগণকে উপকৃত করবে। তরুণ নেতৃত্ব ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নতুন যোগাযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে তাদের চাহিদা ও অভিযোগ বোঝা যায়।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সীমান্ত নিরাপত্তা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় সহিংসতা ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা জরুরি।

মন্তব্য করুন


Link copied