আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

রংপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে মানুষের ঢল

শনিবার, ৩ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ০৫:২৪

Advertisement Advertisement

মমিনুল ইসলাম রিপন: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ, মামলা, নির্যাতন ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা দাবি আদায়ে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এতে রাজপথে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দিয়েছেন  শিক্ষক, আইনজীবী অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষরাও। শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামন থেকে কাকভেজা বৃষ্টিতে দ্রোহের বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়।

এরআগে সকাল দশটার আগে থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে নগরীর বিভিন্ন নিরাপত্বা চৌকিতে তল্লাশীর মুখোমুখি হয়ে রংপুর জিলা স্কুল, রংপুর সরকারি কলেজ, কারমাইকেল কলেজ, সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ, লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ, বেগম  রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন প্রেসক্লাবের সামনে। বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যায় অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়া দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও। সেখানে রাস্তার একপাশ বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করছে তারা।

শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এ কর্মসূচিতে যোগ দেন অভিভাবকরাও। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। এসময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই, লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে, ভুয়া ভুয়া পুলিশ ভুয়া, খুনি খুনি পুলিশ খুনি’সহ বিভিন্ন ধরণের স্লোগান দিতে থাকে। এসময় সাদা কাগজে লাল কালিতে বিভিন্ন স্লোগান বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে প্রদর্শন করছে তারা।

সেখান থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বেলা ১২টার দিকে রওয়ানা দেয় শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড়, পায়রা চত্বর, নগর ভবন, টাউন হলের সামন, কাচারী বাজার, ডিসির মোড় বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বর, লালকুঠি, চেক পোস্ট, মেডিকেল মোড়, ধাপ আটতল মসজিদ মোড় হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার হেটে রংপুর টাউন হলের সম্মুখে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শপথগ্রহণ শেষে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে রোববার থেকে পূর্বঘোষিত ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।  

বিক্ষোভে অংশ নেয়া রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজের অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাচুর্য্য জানালেন, ‘যতদিন আমাদের দাবি সরকার মেনে নিবে না, যতদিন আমাদের যে ভাইয়ারা শহীদ হয়েছেন তাদের পক্ষে সুষ্ঠু মামলা হবে না, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চলছে, চলবে। ‘

ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জানালেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  যতদিন আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যাকারীদের বিচার না করবেন, ততদিন আমরা মাঠে থাকবো। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই। আর সরকার যেন শিক্ষার্থীদের আর হয়রানী না করে। আমরা রাতে ঘুমাইতে পারি না। আমাদের মধ্যে আতংক কাজ করে। কখন আমাদের গ্রেফতার করা হয়। আমরা কি সহিংসতা করেছি? আমরা শান্তিপূর্নভাবে আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমাদের মারা হলো কেন? আমাদের ভাইয়ের রক্তের হিসাব আমরা চাই।’  

মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বেধে আন্দোলনে অংশ নেয়া রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম বলেন, ‘আমরা অনেক সময় দিয়েছি। কিন্তু আর না। এখন আমাদের দাবি একটাই, আমাদের যে ভাই-বোনদের হত্যা করা হয়েছে, সেটার বিচার চাই। আমি একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, আমার ভাইয়েরা জেলখানায় পরীক্ষা দিবে সেটা আমরা মানি না। সবাইকে ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত আমরা পরীক্ষায় বসবো না।’

অংশ নিয়ে বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষার্থী মনিরা মাহিয়া বলেন, ‘যে দেশের শাসকরা নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালোনোর নির্দেশ দেয়। সেই শাসকদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। আমাদের ওপর গুলি করা হলো কেন। এর জবাব চাই। কেন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিশু ও সাধারণ মানুষের প্রাণ গেল, এর জবাব কি সরকার প্রধানের কাছে আছে?’

আন্দোলনে অংশ নেয়া হোম ইকোনোমিক্সক এবং রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ২ বোনের সাথে যোগ দিয়েছেন তাদের মা-বাবাও।  মা আফরিনা জানান, ‘ মেয়েরা আন্দোলনে এসেছে। ওদের দাবি যৌক্তিক। সে কারণে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে ওদের সাথে এসেছি। আমি মনে করি পুলিশ যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করছে। এটা ঠিক না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এখান সরকার সহনশীল হচ্ছে, আগে হলে তো এমনটা হতো না।’

বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন একাধিক আইনজীবীও। তাদের একজন জোবায়দুল ইসলাম মিছিলের সম্মুখে ছিলেন। এই আইনজীবী বলেন, ‘এটা পৃথিবীর ইতিহাসে নারকীয় হত্যাকান্ড। গণহত্যা। যেভোবে শিশুসহ শিক্ষার্থী জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। যেভাবে শিশুদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটা দেশের সামান্য বিবেকমানও মেনে নিবে না। আমি শিক্ষার্থীদের সাথে আছি। তাদের জন্য আইনি লড়াই ছাড়াও মাঠে থাকবো। আমি মনে করে আর সময় নেই, শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে এই সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।

এদিকে বিক্ষোভ থেকে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নগরজুড়ে বিপুল সংখ্যাক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বেলা ৩টা) শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি ঘিরে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে। 

মন্তব্য করুন


Link copied