আর্কাইভ  সোমবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ১ পৌষ ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
রংপুরে ৩ মাসে ১৩ খুন, ধর্ষণ ৩৭

রংপুরে ৩ মাসে ১৩ খুন, ধর্ষণ ৩৭

রাজনীতির ‘হার্টবিট’ এখন এভারকেয়ার

রাজনীতির ‘হার্টবিট’ এখন এভারকেয়ার

সুদানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিচয় প্রকাশ

সুদানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের পরিচয় প্রকাশ

হাদির ওপর হামলাকারী ভারতে পালিয়ে গেছেন

সায়েরের চাঞ্চল্যকর তথ্য
হাদির ওপর হামলাকারী ভারতে পালিয়ে গেছেন

রাজনীতির ‘হার্টবিট’ এখন এভারকেয়ার

রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ০৪:৪৩

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল আপাতদৃষ্টিতে একটি চিকিৎসালয় হলেও, এই মুহূর্তে এই হাসপাতালই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্নায়ুকেন্দ্র। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ এবং করোনারি কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউ-এর ভারী কাচের দরজার ওপাশেই এখন ঝুলে আছে বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত, বর্তমান এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ।

হাসপাতালের বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বলয়, গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় এবং উৎকণ্ঠা নিয়ে সাধারণ মানুষের অপেক্ষা- সব মিলিয়ে এক থমথমে পরিবেশ। এই ভবনের ভেতরেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়ছেন দেশের রাজনীতির দুই মেরুর দুই প্রতিনিধি। একদিকে আছেন দেশের সবচেয়ে প্রবীণ ও জনপ্রিয় নেত্রী, ‘আপসহীন’ খ্যাত বেগম খালেদা জিয়া; অন্যদিকে আছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের তরুণ তুর্কি, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি। দুই প্রজন্মের দুই লড়াকু সৈনিকের এই অসুস্থতা যেন এক অদৃশ্য সুতোয় গেঁথে ফেলেছে পুরো বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রকে।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং বর্তমানে তিনি ‘ইলেকটিভ ভেন্টিলেটর’-এর সাপোর্টে রয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী এই প্রবীণ নেত্রী দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগসহ নানাবিধ জটিলতায় ভুগছেন। গত ৫ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তার চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড তাকে দীর্ঘ ভ্রমণের ধকল সহ্য করার মতো উপযুক্ত মনে করেননি। ফলে দুই দিন পেছানোর পরও শেষ পর্যন্ত তাকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে।

বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেবল একটি নাম নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতীক। আশির দশকে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তার আপসহীন ভূমিকা তাকে ‘আপসহীন নেত্রী’র খেতাব এনে দিয়েছিল। এরপর এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদরা আপস করেছিলেন, তখনও তিনি ছিলেন অবিচল। এমন কী গত ১৫ বছরের আওয়ামী শাসনামলে চরম নিগ্রহ, কারাবাস এবং অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি কোনো প্রকার অনৈতিক আপস করেননি। দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে তার এই ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা তাকে দলীয় গণ্ডি পেরিয়ে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ‘অভিভাবক’-এর আসনে বসিয়েছে। আজ যখন তিনি হাসপাতালের বিছানায় অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তখন মসজিদ-মন্দির-গির্জায় তার জন্য প্রার্থনা করছে পুরো জাতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেগম খালেদা জিয়ার এই সংকটময় মুহূর্ত কেবল বিএনপির জন্য নয়, বরং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এক মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করেছে। তার সুস্থতা ও অসুস্থতার খবরের ওপর নির্ভর করছে দেশের কোটি কোটি মানুষের আবেগ এবং রাজপথের গতিপ্রকৃতি।

একই হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন তরুণ রাজনীতিবিদ ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি। গত ১২ ডিসেম্বর, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মাথায় রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ঢাকা-৮ আসনের এই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী তখন নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি ও গণসংযোগের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রকাশ্য দিবালোকে দুই দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ওসমান বিন হাদি কেবল একজন প্রার্থী নন, তিনি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের একজন সম্মুখসারির যোদ্ধা। যে আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই আন্দোলনের একজন নায়কের ওপর খোদ এই সরকারের আমলেই এমন বর্বরোচিত হামলা জনমনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই হামলা কেবল হাদির ওপর নয়, বরং এটি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার ওপর সরাসরি আঘাত। অন্তর্বর্তী সরকার যখন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে হাদির মতো একজন উদীয়মান নেতার ওপর হামলা প্রমাণ করে যে, ফ্যাসিবাদী শক্তি বা তাদের দোসররা এখনো সক্রিয়। সারা দেশ যখন নির্বাচনের উৎসবে মাতোয়ারা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন এই গুলির শব্দ সেই উৎসবে আতঙ্কের ছায়া ফেলেছে। হাদির ওপর এ হামলার ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে- যদি জুলাই বিপ্লবের একজন যোদ্ধাই নিরাপদ না থাকেন, তবে সাধারণ ভোটার বা অন্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা কোথায়?

এই হামলার ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির করুণ দশাকে পুনরায় নগ্ন করে দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেই উত্তাল সময়ে দেশের বহু থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। লুট হয়েছিল পুলিশের হাজার হাজার অস্ত্র ও গোলাবারুদ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যৌথ অভিযান পরিচালনা করলেও লুট হওয়া অস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচনের সময় এই অবৈধ ও লুট হওয়া অস্ত্রগুলো নাশকতার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনা সেই আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করলো বলে মনে করছেন তারা। ধারণা করা হচ্ছে, পেশাদার খুনিরা এই হামলায় জড়িত এবং এতে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো সেই লুট হওয়া অস্ত্রের ভাণ্ডার থেকেও আসতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে হাদির সম্ভাব্য হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৫০ লাখ টাকার পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এই তৎপরতা অনেকটা ‘চোর পালানোর পর বুদ্ধি বাড়া’র মতো। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যখন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ থাকার কথা, তখন রাজধানীর বুকে এমন ঘটনা পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং সক্ষমতার অভাবকেই ইঙ্গিত করে।

দেশ যখন পুরোদমে নির্বাচনী আবহে প্রবেশ করেছে, ঠিক তখনই শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলা এবং বেগম জিয়ার সংকটাপন্ন অবস্থা- সব মিলিয়ে পরিস্থিতির জটিলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করছেন, হাদির ওপর এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি সুপরিকল্পিত ছক, যার লক্ষ্য হলো ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল করা অথবা অস্থিতিশীল করে তোলা। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরের দিনই এমন হাই-প্রোফাইল হামলার ঘটনা ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করার জন্য যথেষ্ট। অনেকে ধারণা করছেন, একটি বিশেষ মহল বা ‘তৃতীয় পক্ষ’ চায় না বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকুক। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ও তাদের বিদেশি প্রভুরা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করছে বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো। হাদির ওপর হামলা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হতে পারে তারা মনে করছেন। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনীতিতে টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন যখন তফসিল দিলো, মানুষ নির্বাচনমুখী হলো, ঠিক তখনই এমন রক্তপাত একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়- কেউ মাঠ খালি করতে চাচ্ছে অথবা কেউ মাঠ গরম করে নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চাচ্ছে। এটি জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য একটি অশনিসংকেত।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা এসেছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই ফেরার ঘোষণা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছে, তেমনই হাদির ওপর হামলার ঘটনা তাদের মনে গভীর শঙ্কারও জন্ম দিয়েছে। তারেক রহমান এমন এক সময়ে দেশে ফিরছেন যখন দেশের রাজনীতি এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তার মা, বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়ছেন এবং অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাটি তারেক রহমানের জন্য একটি পরোক্ষ সতর্কবার্তা হতে পারে। তারেক রহমানকে দেশে ফেরা থেকে বিরত রাখা বা দেশে ফিরলে তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য হতে পারে। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও একজন নেতাকে তার কর্মীদের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ফিরে আসতে হয়। বেনজির ভুট্টো যেমন মৃত্যুর ঝুঁকি জেনেও পাকিস্তানে ফিরেছিলেন, তারেক রহমানও তেমনই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চূড়ান্ত লড়াইয়ে সশরীরে উপস্থিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তার নিরাপত্তার বিষয়টি এখন কেবল বিএনপি নয়, অন্তর্বর্তী সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের বিমান যখন ঢাকার মাটিতে স্পর্শ করবে, তখন দেশের রাজনৈতিক তাপমাত্রা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা এখন দেখার বিষয়।

ওসমান বিন হাদির ওপর হামলা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার এই চিত্র দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির চিরাচরিত রক্তক্ষয়ী ইতিহাসেরই অংশ বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। এই অঞ্চলে রাজনীতি মানেই যেন ক্ষমতার এক মরণপণ লড়াই, যেখানে প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার প্রবণতা প্রবল। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ভারতে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী- সবাই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। পাকিস্তানে লিয়াকত আলী খান থেকে বেনজির ভুট্টো পর্যন্ত বহু নেতাকে প্রকাশ্য জনসভায় হত্যা করা হয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপরও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে এবং নেপালে পুরো রাজপরিবার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। আর বাংলাদেশের ইতিহাস তো রক্তে লেখা। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা- এসবই প্রমাণ করে যে এ মহাদেশের রাজনীতিতে বুলেট এবং ব্যালট সমান্তরালে চলে।

বর্তমানে ওসমান বিন হাদির ঘটনা এবং তারেক রহমানের নিরাপত্তা ঝুঁকি সেই পুরানো ক্ষতকেই নতুন করে মনে করিয়ে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ না হওয়ার কারণেই বারংবার পেশিশক্তি ও অস্ত্রের ব্যবহার রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারণ করতে চায়। হাদির ওপর হামলা প্রমাণ করে যে, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হলেও, রাজনৈতিক সংস্কৃতির সেই হিংস্র পরিবর্তন এখনো পুরোপুরি ঘটেনি।

সারা দেশের ১৭ কোটি মানুষের চোখ এখন এভারকেয়ারের দিকে। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে গভীর উৎকণ্ঠায়। এখান থেকে আসা একেকটি সংবাদ নির্ধারণ করবে আগামী দিনের বাংলাদেশের গতিপথ। বেগম খালেদা জিয়া কি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন? শরিফ ওসমান বিন হাদি কি আবারও রাজপথে গর্জে উঠবেন? নাকি কোনো দুঃসংবাদ পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দেবে? নির্বাচনমুখী বাংলাদেশে এমন অনিশ্চয়তা কাম্য ছিল না। তবে বাস্তবতা হলো, পুরো জাতি এখন এক অদৃশ্য সুতোয় ঝুলে আছে, যার এক প্রান্ত এভারকেয়ারের সিসিইউ-আইসিইউ, আর অন্য প্রান্ত অনাগত ভবিষ্যত।

মন্তব্য করুন


Link copied