আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

লাঙল নিয়ে টানাহেঁচড়া

রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩, দুপুর ১২:২৬

Advertisement Advertisement

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) লাঙল প্রতীক নিয়ে ফের ‘টানাটানি’ শুরু হয়েছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান জিএম কাদের এ উপনির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দেওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে আজ রবিবার এ টানাটানির অবসান ঘটবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়ে দেবে, লাঙল কে পাবেন- কাজী মামুনুর রশীদ নাকি সিকদার আনিসুর রহমান।

দলের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার আশঙ্কা, জাপায় মনোনয়নসংক্রান্ত জটিলতা ঢাকা-১৭ আসনে সীমাবদ্ধ থাকবে না, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত গড়াবে। ফলে দলের পরবর্তী কাউন্সিল কিংবা বিশেষ কারও মধ্যস্থতাই কেবল দলকে আরেক ভাঙন থেকে রক্ষা করতে পারবে। এ ছাড়া মতবিরোধের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলটি পরমুখাপেক্ষী হয়ে পড়তে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে রওশন এরশাদ প্রার্থী বানিয়েছেন তার মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদকে। জিএম কাদেরের প্রার্থী হিসেবে আছেন মেজর (অব) সিকদার আনিসুর রহমান।

কাজী মামুনকে লাঙল প্রতীক দিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন রওশন। অন্যদিকে মেজর আনিসের জন্য চিঠি দিয়েছেন জিএম কাদের। এ বিষয়ে ইসি থেকে বলা হয়েছে- মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে আজ তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

রওশন তার চিঠিতে লিখেছেন- ‘আমি জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। সংসদীয় দলের নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে লাঙল প্রতীকের একমাত্র অধিকারী। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলে গৃহীত ও তৎকালীন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বাক্ষরিত গঠনতন্ত্রের ধারা-২০-এর উপধারা ১ অনুযায়ী, আমি দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করি। বিষয়টি আদালতের রায় ও আদেশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।’

এ বিষয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘বাস্তবে আমাদের পার্টি একটিই। তা হলো- জাতীয় পার্টি। আমরা যাকে মনোনয়ন দেব সেটিই দলীয় মনোনয়ন। কে কোন দলের নাম ব্যবহার করছেন, তা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি সেটি না দেখে, তা হলে জনগণই দেখবে। এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই।’

হাইকোর্টের রায় এবং দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতা কতটুকু, সেই ব্যাখ্যায় জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন এই রায় হয়, তখন কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের বিষয় ছিল না। এখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী দল নিবন্ধন ও প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা ইসির।’

এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাপার ও সংসদীয় দলের প্রধান হলেন চেয়ারম্যান। মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ফলে রওশন এরশাদ অন্য একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন বলে যেটি বলা হচ্ছে, সেটির সঙ্গে জাপার কোনো সম্পর্ক নেই।’

অন্যদিকে কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে- আগামী নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে যাব।’ ঢাকা-১৭ আসন উপনির্বাচনে তিনি কেন লাঙল প্রতীক পাবেন, এর যুক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাখেন। হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের রায় হলো- সংসদে যিনি দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন, তিনিই লাঙল প্রতীক বরাদ্দ দেবেন। এখন চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদের মনোনয়ন দিতে পারেন। কিন্তু রওশন এরশাদ যদি কোনো অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন, সে ক্ষেত্রে তিনি দিতে পারেন। তবু নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মেনে নেব। তবে আমার নীতিনির্ধারণী মহল কী করেন, তা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না।’

নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পদত্যাগের পর থেকে জাতীয় পার্টিতে ছয়বার ভাঙন হয়েছে। জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা), আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি, আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি, ডা. মতিনের নেতৃত্বাধীন বিজেপি, মোস্তফা জামান হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ও সর্বশেষ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (পুনর্গঠন)। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি (জিএম কাদের), জেপি (মঞ্জু), বিজেপি (পার্থ), জাতীয় পার্টি (ডা. মতিন)-এই চার দলের নিবন্ধন রয়েছে।

এসব ভাঙনের প্রেক্ষাপটে কেবল আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছাড়া কেউ দলীয় প্রতীক লাঙল নিয়ে টানাহেঁচড়া করেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে লাঙল প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সংসদে পৃথক গ্রুপ করেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জু ছিলেন মূল দলে। তখন সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর-১, ফরিদপুর-৪, উপনির্বাচনে উভয়পক্ষ প্রতীক লাঙল দাবি করেন। তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি লাঙল প্রতীক বরাদ্দ পায়। পরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি রিট পিটিশন করে। আদালত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যিনি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তার অনুকূলে লাঙল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষমতা দেন। পরে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে গেলে সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড হবে এমন ধারণা তাদের। এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, দলের মনোনয়নকেন্দ্রিক জটিলতা বা দলের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে মতানৈক্য আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলকে পরমুখাপেক্ষীর দিকে ঠেলে দেবে। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে দলের শীর্ষ দুই নেতার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। খবর-আমাদের সময়

মন্তব্য করুন


Link copied