স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা চুরি করে সব পাচার করেছে, দেশটাকে খুবলিয়ে খেয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে শুণ্য কোটায় নিয়েছে। তারা স্বাধীনতার ঠিকাদার সেজে চেতনার নামে জাতিকে ঘুম পাড়িয়ে লুটে পুটে নিজেদেরকে পুষ্ট করেছে। আজ তাদেরই বড় কথা। যেন চোরের মায়ের ডাঙ্গর গলা। তাদের চেতনাবাজী নতুন প্রজন্মের কাছে ধরা পড়ায় তাদের শুধু পতনই ঘটেনি, দেশ থেকে তারা বিতারিত হয়েছে। তারাই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়েছে।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার দাবি করে জামায়াতে আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেন, চব্বিশের তরুণ যোদ্ধারা যে লক্ষ্য ও চেতনা নিয়ে দেশকে ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করেছে, তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। জুলাই অভুত্থানের সফলতাকে নস্যাৎ করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে পতিত স্বৈরাচার। সর্বশেষ তারা সবিচালয়ে অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র ধ্বংস করেছে। এই ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের মুখোশ উম্মোচন করে তাদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশটাকে আমরা সাজানো বাগান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য সকলের ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রবীণ-নবীন সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে আমাদের। তাহলে অর্থনৈতিকভাবে খোকলা এ দেশকে আবারও সমৃদ্ধ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, শিশু-কিশোর ও যুবকরাই আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। তাই তাদেরকে ভোট দেয়ার সুযোগ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তাদের প্রতি আমাদের দায় শোধ করতে পারি। এ ব্যাপারে যারা বিরোধিতা করছে তাদেরকে শুধরানোর আহ্বান জানান তিনি।
ডা: শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা এমন একটা দেশ গড়তে চাই, যে দেশে কোন বৈষম্য থাকবেনা। সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষ মিলেমিশে সমান অধিকার ভিত্তিতে বসবাস করবে। সর্বক্ষেত্রে দেশাত্ববোধের মাধ্যমে দেশকে উন্নত করতে সচেষ্ট থাকবে। কোন চাঁদাবাজ, দুষ্কৃতকারী, দূর্নীতিবাজ থাকবেনা। কেউ কোনভাবে অন্যায়ের শিকার হবেনা। থাকবেনা আয়না ঘর। কল্যাণমুখী এক দেশ গঠনের মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্টের মডেল উপস্থাপন করা হবে। মহান আল্লাহ পাকের সৃষ্টি খানা খন্দক নদ-নদীকে দুষনমুক্ত করতে হবে। যাতে কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল ফলাবে। কোন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠান কেড়ে নেয়া হবেনা। কাউকে জুলুমের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা হবেনা। শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সর্বক্ষেত্রে সমান্তরাল সমৃদ্ধ করে জাতিকে সাজানো বাগানের মতো দেশ উপহার দেয়া হবে।
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, যারা আয়না ঘরের প্রতিষ্ঠা করে, জাতিকে দুঃসহ অপশাসনে নিপতিত করে দেশকে বিক্রির পায়তারা করেছিল তাদের জাতি আর কখনই ফিরতে দিবেনা। ফ্যাসিবাদ বিদায় হয়েছে তা চিরদিনই এদেশ থেকে বিতারিত থাকবে। আওয়ামীলীগ তাদের দোষ স্বীকার করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত এ প্রজন্ম তাদের বিরুদ্ধেই থাকবে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের, সমৃদ্ধির ও কল্যাণের। এজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সৈয়দপুর উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুল মুনতাকিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী আলহাজ¦ মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় পথসভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, নীলফামারী জেলা আমীর অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী, জেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শিল্পপতি রাজ কুমার পোদ্দার রাজু, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, নায়েবে আমীর অধ্যাপক ড. খায়রুল আনামসহ স্থানীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দগণ। এসময় পথসভায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়।