আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫ ● ৪ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ১৯ আগস্ট ২০২৫

‘মিডিয়া ছুটাই দেব’, সাংবাদিককে এসপির হুমকি

শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, রাত ০১:৪৬

Advertisement Advertisement

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ও ছবি ডিলিট করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সুপারের বডিগার্ডের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তির সাংবাদিক পরিচয় জানা না থাকায় এমনটা হয়েছে।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর শহরের মোড় এলাকায় ঈদে চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতুতে ঘুরতে যাওয়া মা-মেয়েকে উত্যক্তের অভিযোগে মাইকিং করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই রাতেই, সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান।

এ সময় চিলমারী সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম সাদ্দাম সংবাদ সংগ্রহের সময় ছবি ও ভিডিও ধারণ করলে পুলিশ সুপার তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ সুপারের সঙ্গে থাকা এক বডিগার্ড ওই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নিয়ে ধারণকৃত ভিডিও ডিলিট করে দেন। অভিযোগে সাংবাদিক জানান, এ সময় পুলিশ সুপার তাকে উদ্দেশ করে বলেন, মিডিয়া ছুটাই দেব।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপারের আগমন সংবাদ পেয়ে গিয়ে ভিডিও ও ছবি তুলছিলাম। তখন পুলিশ সুপার আমার ওপর চড়াও হন। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তিনি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। তার সঙ্গে থাকা একজন পুলিশ সদস্য ফোনটি নিয়ে ভিডিও ও ছবি ডিলিট করে দেন।

এ ঘটনায় চিলমারীসহ কুড়িগ্রামের সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান টিউটর বলেন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা সাংবাদিকের সঙ্গে এধরনের আচরণ করতে পারেন না। এজন্য তাকে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। কারণ তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তার সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত।

এদিকে চিলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ১০টার পর এসপি স্যার এসেছিলেন। তবে ফোন কেড়ে নেয়ার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, এটি ভুল তথ্য। রাতে অভিযানের সময় অন্ধকারে এক তরুণ ভিডিও করছিল। আমি শুধু বলেছি, ভিডিও করো না। সে পরিচয় দেয়নি যে সে সাংবাদিক। তার আইডি কার্ডও ছিল না। আমরা ভেবেছি ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেবে, এজন্য ভিডিও ডিলিট করতে বলা হয়। মিডিয়া সম্পর্কে আমরা এমন কিছু বলিনি।

এদিকে, এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে কুড়িগ্রাম পুলিশ মিডিয়া সেলের মিডিয়া অফিসার ও ওসি (ডিবি) মো. বজলার রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি সাংবাদিকদের পাঠানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, কুড়িগ্রামের চিলমারীতে নবনির্মিত হরিপুর তিস্তা সেতুর পাশে মা-মেয়েকে উত্যক্তের অভিযোগকে কেন্দ্র করে চিলমারী ও সুন্দরগঞ্জের লোকজনের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে জেলা পুলিশের একটি টিম অস্ত্র উদ্ধারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় এক অজ্ঞাত তরুণ ভিডিও ধারণ করলে অভিযান ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করার পরামর্শ দেয়া হয়। ওই তরুণের সাংবাদিক পরিচয় তখন পুলিশের জানা ছিল না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পুলিশ ও মিডিয়া পরস্পরের বন্ধু। মিডিয়াকে আঘাত করে কোনো শব্দ বলা হয়নি। একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হয়েছে। পরিচয় জানার পর পরবর্তীতে তাকে মতবিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন


Link copied