আর্কাইভ  শনিবার ● ১১ মে ২০২৪ ● ২৮ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ১১ মে ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় এএসআই নিহত, এসআই হাসপাতালে       রংপুরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ       ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ শুরু       তিস্তা নিয়ে ভারত-চীন প্রতিযোগিতা       ঠাকুরগাঁওয়ে উপজেলা নির্বাচনে আনারস ও মোটরসাইকেল মার্কার জয়      

 width=
 

দুই মাসে ২২ জঙ্গি নিহত, কর্মকাণ্ড স্তিমিত

বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, দুপুর ১২:০৩

আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশে তৎপর জঙ্গিগোষ্ঠীর সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী মারা যাওয়ায় এবং গ্রেফতার হওয়ায় কর্মী সংকটে পড়েছে এ জঙ্গিগোষ্ঠী। এ কারণে বর্তমানে তাদের কর্মকাণ্ডও স্তিমিত হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন পুলিশ এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

বর্তমানে তৎপর জঙ্গিগোষ্ঠীর সাংগঠনিক কাঠামো এবং জনবল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ধারণা না দিলেও র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক, কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রধান, উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান একই সুরে বলেন, জনবল বিবেচনায় বর্তমানে তৎপর জঙ্গিদের সংখ্যা একেবারেই নগন্য।

তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর অভিযানে অনেক জঙ্গি নেতাকর্মী নিহত ও গ্রেফতার হওয়ায় এবং জঙ্গিবাদবিরোধী জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। তাদের মতে, কর্মী সংগ্রহ বা আশ্রয়স্থল পেতে জঙ্গিদের এখন অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘জঙ্গিরা সংখ্যায় যতই হোক গোয়েন্দা তৎপরতায় তাদের গতিবিধি এবং তৎপরতা সম্পর্কে র‌্যাবের সম্যক ধারণা রয়েছে। আর এ কারণে তাদের তৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে।’

ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান মনে করেন, সম্প্রতি জঙ্গিদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী নিহত এবং গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং তৎপরতা অনেকটা স্থিমিত হয়ে পড়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি মাসুদুর রহমান অবশ্য বলেন, ‘বর্তমানে তৎপর জঙ্গিদের সাংগঠনিক কাঠামো ভিন্নতর। তাদের কর্মপদ্ধতি আলাদা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে এ জঙ্গিগোষ্ঠীকে এতদিনেও নির্মূল করা যায়নি।’

ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গির মৃত্যুর পর বর্তমানে জেএমবির কর্মী সংকট দেখা দিয়েছে।’

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার পর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। জঙ্গিরা ওই রেস্টুরেন্টে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে এবং ১৭ জন বিদেশি নাগরিকসহ হত্যা করে ২০ জনকে। তাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে পুলিশের দুই সদস্যও নিহত হন। পরদিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় জিম্মিকারী ছয় জঙ্গি সদস্য।

এ ছাড়া ৭ জুলাই ঈদ জামাতের প্রাক্কালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগা ময়দানের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। তখন পুলিশের দুই সদস্য ও এক নারী নিহত হন। আর পুলিশের গুলিতে তাৎক্ষণিক এক হামলাকারী জঙ্গি নিহত হন। গুলিবিদ্ধ অপর এক জঙ্গি র‌্যাবের হাতে আটক হন। ওই রাতেই র‌্যাব সদস্যরা ওই জঙ্গিকে পুলিশের হাছে হস্তান্তর করতে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইলের নান্দাইল এলাকায় তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায় অপর জঙ্গিরা। তখন ওই জঙ্গিসহ আরো এক জঙ্গি নিহত হন।

এদিকে ২৬ জুলাই অপর এক পুলিশি অভিযানে রাজধানীর কল্যাণপুরে নিহত হন ৯ জঙ্গি। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নব্য জেএমবি প্রধান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি। সর্বশেষ ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রূপনগর এলাকায় পুলিশের অপর এক অভিযানে নিহত হন জেএমবির শামরিক শাখার প্রধান এবং তামিম চৌধুরীর ডান হাত খ্যাত অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ওরফে মেজর মুরাদ।

এ সময়ে বিভিন্ন অভিযানে র‌্যাব এবং পুরিশের হাতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতার হয় ১৩ নারী জঙ্গিসহ অন্তত ৫০ নেতাকর্মী।

গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ব্রিটিশ নাগরিক হাসনাত রেজা করীম এবং টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদ হাসিব খান।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১ জুলাইয়ের পর তারা ৫ নারীসহ ২৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১৬ আগস্ট গ্রেফতার হওয়া নারী জঙ্গিরা আত্মঘাতি শাখার সদস্য বলে তারা জানান। এ ছাড়া ৯ আগস্ট শাহআলী এলাকা থেকে ৬ জন এবং ৩ আগস্ট হাজারীবাগে ৫ জঙ্গিকে আটক করা হয়।

পাশাপাশি ৪ সেপ্টেম্বর জেএমবির ৪ নারী সদস্যকে গ্রেফতার করে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা আগস্ট মিরপুর-১১ এর টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় গ্রেফতার করে জেএমবির ৫ সদস্যকে। ২৫ জুলাই ইডেন কলেজের ৫ ছাত্রীকে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেফতার করে লালবাগ থানা পুলিশ। বান্দরবান জেলা পুলিশ ১ সেপ্টেম্বর নাইক্ষ্যাংছড়ি থেকে জঙ্গি সন্দেহভাজন হিসেবে ৪ জনকে গ্রেফতার করে।

তৎপর জঙ্গিগোষ্ঠী সম্পর্কে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্ব থেকে একটি দল বের হয়ে গেলে জেএমবি দুই ভাগ হয়ে যায়। নতুন ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন ২৭ আগস্ট পুলিশের অভিযানে নারায়ণগঞ্জে নিহত তামিম চৌধুরী। তামিম চৌধুরীকে আইএস’র বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক বলা হলেও মূলত সেই ছিল নব্য জেএমবির প্রধান। আর পলাতক আর্মি মেজর (বরখাস্ত) জিয়াউল হক, যিনি আর্মিতে থাকাকালে সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন, বর্তমানে আনসার-আল ইসলামের হয়ে কাজ করছে।’

৩১ আগস্ট পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৪০ জন নিখোঁজ রয়েছেন, যারা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

অপরদিকে র‌্যাব কর্মকর্তাদের কাছে এ ধরনের প্রায় ৭০ জনের তালিকা রয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।

খবর-পরিবর্তন

মন্তব্য করুন


 

Link copied