আর্কাইভ  সোমবার ● ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ● ২৮ আশ্বিন ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ১৩ অক্টোবর ২০২৫
জিম্মিরা মুক্ত হওয়ামাত্রই গাজার সুড়ঙ্গগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ইসরাইলের

জিম্মিরা মুক্ত হওয়ামাত্রই গাজার সুড়ঙ্গগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ইসরাইলের

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা

‘সেফ এক্সিট’, যা বলছেন উপদেষ্টারা

‘সেফ এক্সিট’, যা বলছেন উপদেষ্টারা

সারজিসকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যা বললেন প্রিন্স মাহমুদ

সারজিসকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যা বললেন প্রিন্স মাহমুদ

আবেদনেরই যোগত্য নেই, তবু বেরোবিতে ১২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, বিকাল ০৭:২৮

Advertisement

বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও জীব ও ভূবিদ্যা অনুষদের ডিন ড. ইমদাদুল হকের আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও দীর্ঘ এক যুগ (১২ বছর) ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 
 
দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের বর্তমান বিভাগীয় প্রধান ড. ইমদাদুল হক-এর বিরুদ্ধে নিয়োগের শর্ত পূরণ না করেই শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ড. ইমদাদুল হক বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূবিদ্যা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ইতোমধ্যে আরও একবার বিভাগীয় প্রধান পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন ইমদাদুল হক। পরে ২০১৪ সালে বেরোবিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি ২০১২ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহক) শিক্ষক হিসেবে ওই বিভাগে নিয়োগ পান।
 
তবে তার আবেদনের সময় জমা দেওয়া কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি আবেদনের প্রাথমিক শর্তই পূরণ করেননি। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩১ অক্টোবর ২০১৩ সালে দেশের দুটি জাতীয় দৈনিকে শিক্ষক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে মোট ১৪টি বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগের কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তির ১৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন প্রভাষক নিয়োগ।
 
এই পদে আবেদন করতে হলে যে-সব শর্ত পূরণ করতে হতো, তার মধ্যে অন্যতম ছিল— সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে এবং স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের যেকোনো একটিতে (৪.০০ ভিত্তিক স্কেলে কমপক্ষে ৩.৫০ থাকতে হবে) অথবা ডিভিশন ভিত্তিক পদ্ধতিতে প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে। পাশাপাশি এসএসসি বা এইচএসসি’র যেকোনো একটিতে ন্যূনতম প্রথম বিভাগ/এ গ্রেড থাকতে হবে।
 
তবে ইমদাদুল হকের জমা দেওয়া আবেদনপত্র ও সার্টিফিকেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তিনি ১৯৯৮ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন, যেখানে তিনি ৬৪৩ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগ অর্জন করেন (ডিভিশন ভিত্তিক সিস্টেমে)। এরপর তিনি ২০০৩ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স এবং ২০০৮ সালে একই বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সেখানে তাঁর অনার্সে সিজিপিএ ছিল ৩.২৬ এবং মাস্টার্সে ৩.৩৯ (৪.০০ স্কেলে)।
 
বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ইমদাদুল হক বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় শর্ত— স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের যেকোনো একটিতে ৩.৫০ সিজিপিএ থাকতে হবে— তা পূরণ করেননি। তবে ইমদাদুল হক তাঁর আবেদনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় ক্ষেত্রেই প্রথম বিভাগ উল্লেখ করেন।
 
যদিও ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রেডিং সিস্টেম চালু হয়। বিশেষ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সিস্টেম চালু ছিল। ফলে তাঁর অনার্স ও মাস্টার্সের ফলাফল আর ডিভিশন ভিত্তিতে গণ্য হওয়ার কথা নয়।
 
কিন্তু ইমদাদুল হক গ্রেড ভিত্তিক ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আবেদনপত্রে প্রথম বিভাগ লিখেছেন, যা তথ্যগতভাবে বিভ্রান্তিকর।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতা।
 
নাম প্রকাশ না কতা শর্তে এক শিক্ষক বলেন, একজন ব্যক্তি যখন প্রাথমিক শর্তই পূরণ করেন না, তখন তাঁর আবেদন গ্রাহ্য হওয়ার কথা নয়। অথচ সেই ব্যক্তি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, এটি সত্যিই লজ্জার।
 
ইমদাদুল হকের এ নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে নানা আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যে ব্যক্তি শুরু থেকেই নিয়ম ভেঙে শিক্ষকতা শুরু করেছেন, তিনি কীভাবে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে আসীন হয়েছেন?
 
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ড. ইমদাদুল হক বলেন, হ্যাঁ, আমার একটু মার্কের সমস্যা ছিল। আমি তো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদন করেছি। শর্ত পূরণ না করে কিংবা আবেদনের যোগ্যতা পূরণ না করেই কেমন করে যোগদান করেছি— এ বিষয়ে বলতে চাই, আমার একুয়া ভ্যা লেন্স সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার শর্ত পূরণ হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করেছি। যদি আমার কাগজে ভুল থাকত, তাহলে তো প্রশাসন চাকরি দিত না।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে খোঁজ নিতে হবে। তারপর জানাবো।
 
উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, আমি তো এসব বিষয়ে জানি না। খোঁজ নিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম অনেক শিক্ষক আছেন যাদের এই রকম সমস্যা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এগুলো নিয়ে কাজ করছি। তবে এগুলোর সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন


Link copied