আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২২ আগস্ট ২০২৫ ● ৭ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২২ আগস্ট ২০২৫
পিআরের বিরুদ্ধে অনড় বিএনপি

♦ শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা
♦ জুলাই সনদ নিয়ে আশাবাদী
পিআরের বিরুদ্ধে অনড় বিএনপি

ভোটের লড়াইয়ে ৫০৯ প্রার্থী

ভোটের লড়াইয়ে ৫০৯ প্রার্থী

পাঠ্যবইয়ে গণহত্যাকারী হিসাবে যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম

পাঠ্যবইয়ে গণহত্যাকারী হিসাবে যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম

উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির টেন্ডারের কমিশন নিয়ে দর কষাকষির অডিও ফাঁস

উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির টেন্ডারের কমিশন নিয়ে দর কষাকষির অডিও ফাঁস

ওপরে সিঙ্গাপুর নিচে আব্দুল্লাহপুর

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫, রাত ০৩:১৪

Advertisement Advertisement

নিউজ ডেস্ক: এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলছে বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরগামী বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে যাতায়াতকারী এবং টঙ্গী ও আব্দুল্লাহপুরবাসীর জন্য নিত্যদিনকার ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে অপূর্ণাঙ্গ এ প্রকল্প। বিশেষ করে আব্দুল্লাহপুরের বিআরটির নিচের সড়ক। ওপরের সঙ্গে নিচের সড়কের আকাশ-পাতাল পার্থক্য। যেন ওপরে চকচকে সিঙ্গাপুর আর নিচে দুর্ভোগের আব্দুল্লাহপুর। ভাঙা রাস্তা আর খানাখন্দের কারণে প্রতিদিন উন্নয়নের অভিশাপ সইতে হয় যাতায়াতকারীদের।

এদিকে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে তুরাগ নদীর ওপরের আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গীর বেইলি ব্রিজ। গত বছর ডিসেম্বরে ব্রিজ ভেঙে কাভার্ড ভ্যান নদীতে পড়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় এর ওপর দিয়ে সব ধরনের গাড়ি চলাচল। এখন শুধু পথচারী ও অটোরিকশা চলাচলে ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজটি। রাজধানী ঢাকায় প্রবেশের অন্যতম এই সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই রুটে চলাচলকারীদের। দীর্ঘদিন যাবৎ ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুর মেরামত না করায় কর্তৃপক্ষের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এখানকার স্থানীয়রা। বেইলি সেতু মেরামত করে দ্রুত বিআরটির নিচ দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করার দাবি জানান তারা।  এর আগে ২০২১ সালে বিআরটির বড় সেতু নির্মাণের নিচের টঙ্গী সেতু ভেঙে পড়ে। ২০২২ সালে ছয় মাসের জন্য বেইলি ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।

 

এটিও কাভার্ড ভ্যান সমেত ভেঙে পড়ে গত বছর ডিসেম্বরে। ওপরের বিআরটি  সেতুর নির্মাণ শেষ হওয়ায় এটি এখন অকেজো। ঝুঁকিপূর্ণ সেতু হিসেবে অনেক আগেই টাঙানো হয়েছে সাইনবোর্ড। ফলে বিআরটির পূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত যাতায়াতকারীরা। গাড়ির চাপ বেড়েছে বিআরটিতে। নিত্যদিনের সঙ্গী হয়েছে যানজট। সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর ও ময়মনসিংহগামী সব ধরনের যানবাহন চলাচলের একমাত্র রাস্তা এখন বিআরটি। উত্তরার বিএনএস সেন্টার থেকে বিআরটিতে উঠতে শুরু করে গাড়ি। জসীমউদ্দীন থেকে বিআরটিতে ওঠার জন্য লাইন দিতে শুরু করে গাড়িগুলো। ফলে জসীমউদ্দীন থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত তৈরি হয় তীব্র যানজট। নিচের সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আব্দুল্লাহপুর এলাকা এখন পরিণত হয়েছে বস্তিতে। রাস্তার মাঝখানে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টি এলে গোটা সড়ক পরিণত হয় ছোটখাটো পুকুরে। কথা হয় গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে প্রতিদিন এই রুটে যাতায়াত করা শাকিল ইসলামের সঙ্গে। উত্তরার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তিনি। ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, আব্দুল্লাহপুরের নিচের রাস্তা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অফিস টাইমে প্রতিদিন সকালে বের হতে হয় অতিরিক্ত এক ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে। অফিস ছুটির পরও বাড়ি পৌঁছতে এক ঘণ্টা সময় অতিরিক্ত ব্যয় হয়। এক যুগেও একটা প্রকল্পের কাজ শেষ হয় না। ওপরের রাস্তা চালু হতে না হতেই নিচের ব্রিজ ভেঙে গেছে। নিচের ব্রিজ আর রাস্তাটা ঠিক করে দিলে দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যেত।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, নতুন কোনো প্রকল্পের নকশায় পুরনো সব কিছু ভেঙে ফেলা হয়। চলাচলের সুবিধার জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাময়িকভাবে বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। তুরাগ নদীর ওপর টঙ্গী ব্রিজটিও বিআরটি প্রকল্পের অংশ। বিআরটি প্রকল্পের নকশায় টঙ্গী ব্রিজের জায়গায় ১০ লেন ব্রিজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। প্রকল্পটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত বেইলি ব্রিজ দিয়েই কাজ চালাতে হবে।

জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের বেশি সড়কপথে বাসের জন্য বিশেষ লেন নির্মাণ বা বিআরটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১২ সালে। এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালে। বেশ কয়েকবার পেছানোর পর ২০২৫-এর জুনে প্রকল্পটি পুরোদমে চালুর কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। চতুর্থ দফায় সংশোধিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। এ প্রস্তাব অধিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে।

গত ২৭ জুলাই একনেক সভা শেষে অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এটি দানবীয় ও অপরিকল্পিত প্রকল্প। এ ধরনের অপরিকল্পিত ও দানবীয় মেগা প্রকল্পে ভুল নকশা চিন্তারও বাইরে। এ ধরনের প্রকল্প কীভাবে  নকশা করা হয়েছে, কারা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে, এগুলো আমরা তদন্ত করে দেখব। এজন্য প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। অধিক যাচাই-বাছাই করে তারপর আমরা এ প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

মন্তব্য করুন


Link copied