আর্কাইভ  মঙ্গলবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ● ৯ পৌষ ১৪৩২
আর্কাইভ   মঙ্গলবার ● ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দাদির কোলে ছবি দিয়ে জাইমার দেশে ফেরার বার্তা, রাজনীতিতে আসার ইংগিত

দাদির কোলে ছবি দিয়ে জাইমার দেশে ফেরার বার্তা, রাজনীতিতে আসার ইংগিত

তারেক রহমানের দেশে ফেরা: ১০ রুটে বিশেষ ট্রেন

তারেক রহমানের দেশে ফেরা: ১০ রুটে বিশেষ ট্রেন

টার্গেট কিলিংয়ের আতঙ্ক

টার্গেট কিলিংয়ের আতঙ্ক

চোরাই ফোন ব্যবসার এপার-ওপার নেটওয়ার্ক সিলেট

আইএমআই নম্বর পরিবর্তনে শক্তিশালী চক্র
চোরাই ফোন ব্যবসার এপার-ওপার নেটওয়ার্ক সিলেট

টার্গেট কিলিংয়ের আতঙ্ক

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, দুপুর ১১:২৫

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আন্ডারওয়ার্ল্ড তৎপর হচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধ বাড়ছে। টার্গেট করে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যা করা হয়েছে। একইভাবে দেশের দুই সংবাদপত্র প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার, দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট এবং উদীচী কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ছাড়াও জনমনে নানারকম শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে হত্যার উদ্দেশ্যে হাদিকে গুলি করার পর খুলনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় নেতা মোতালেব শিকদারকে গতকাল সোমবার মাথায় গুলি করা হয়েছে। তার অবস্থাও সংকটাপন্ন। মোতালেব শিকদারের গুলির বিষয়ে পুলিশ ভিন্নরকম কারণের কথা বললেও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক কাটছে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র নিশ্চিত হয়েছে, অনেক অপরাধী টার্গেট কিলিংয়ে নেমেছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিরা এসব অপকর্মে ভাড়ায় খাটছে। দেশের ভেতরের পাশাপাশি বিদেশ থেকে হত্যার নির্দেশনা আসছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যেও আছে আতঙ্ক। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকার নির্দেশ দিলেও পুলিশের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে। গুলির ১২ দিন পরও হাদির মূল খুনিরা ধরা না পড়ায় সরকারে ও সরকারের বাইরে উদ্বেগ কাটছে না।

ওদিকে রাস্তায় থাকছে না পুলিশি টহল। উদ্ধার হচ্ছে না লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র। ধরা পড়ছে না দাগি অপরাধী। সবকিছু মিলিয়ে শৃঙ্খলা আসছে না দেশে।

সরকার অবশ্য বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে চেষ্টা চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক করছে। গতকালও বৈঠক শেষে পুলিশের সব কটি ইউনিটকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সদর দপ্তর।

দেশ জুড়ে টার্গেট কিলিংয়ের শঙ্কা-আতঙ্ক : সংশ্লিষ্টরা জানান, টার্গেট কিলিংয়ের তালিকায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি নেতা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। হুমকিতে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও।

সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট বানচালের পরিবেশ তৈরি করাই টার্গেট হামলার মূল উদ্দেশ্য। এজন্য বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আসছে। ওই টাকায় সক্রিয় হচ্ছে পেশাদার অপরাধীরা। একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমনকি গ্রামাঞ্চলে নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠনের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোও গোপনে সক্রিয় হচ্ছে।

সরকার মনে করছে, এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতা। তাদের উদ্দেশ্য দেশ জুড়ে চাঞ্চল্য ও সমাজে ভীতি-আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি নির্বাচন বানচাল করা।

মোটা অঙ্কের অর্থে টানা হচ্ছে সন্ত্রাসী: গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশ জুড়ে পেশাদার অপরাধীদের তালিকা করে এখনই আইনের আওতায় আনা জরুরি। জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। এতে বলা হয়, আটকের এক মাসের মধ্যেই জামিনে মুক্তি পাচ্ছে অপরাধীরা। এ কারণে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। এই সুযোগে এসব অপরাধীকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাছে টানছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।

প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এরই মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপরাধীদের তালিকা করে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলায় জেলায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে বাড়তি তল্লাশিচৌকি। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। মনোবল চাঙা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিতে তাদের হামলারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এসবের পেছনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বাহাউদ্দিন নাছিম। তারা বিদেশ থেকে সব ধরনের কলকাঠি নাড়ছেন। মাঠপর্যায়ে দলীয় কর্মী ও নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠনের নিষ্ক্রিয় নেতাকর্মীদের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে অর্থ। তাদের কাউকে কাউকে আওয়ামী লীগের ব্যানারে এনে গুপ্ত হামলায় সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।

টার্গেট করে হত্যার অভিযোগ: পুলিশ সূত্র জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হলেও কেউ সতর্ক হচ্ছে না। ইতিমধ্যে অপরাধীরা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের টার্গেট করে খুন করতে শুরু করেছে। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এমন ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার পাশাপাশি নেপথ্যে আওয়ামী লীগের ইন্ধন ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের দ্বন্দ্বে বাড়ছে খুনসহ নানা অপরাধ। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন পেশার মানুষ খুন এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে আন্ডারওয়ার্ল্ডেও নিজের প্রভাব বাড়াতে চাচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং নাশকতার আশঙ্কার মধ্যে এসব ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে ভাব নেমে এসেছে। এতে তফসিলের পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তাও কমে গেছে।

বিভিন্ন স্থানে কিছু প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রার্থীদের নিরাপত্তা বাড়াতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রার্র্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান দেওয়ার কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান, ‘টার্গেট কিলিং রোধ করতে পুলিশের সবকটি ইউনিটের সদস্য সতর্ক আছেন। দেশে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করলে তাদের পুলিশ কঠোরভাবে দমন করবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। হাদি হত্যাকা-ে জড়িতদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র, জমা না দেওয়া অস্ত্র এবং অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট : ফেজ-২’ চালু হয়েছে।

একাধিক আলোচিত হত্যাকাণ্ড: ১১ মাসে দেশে রাজনৈতিক খুন হয়েছে ৯৮টি। ডিএমপির তথ্যমতে, ১০ মাসে রাজধানীতে ১৯৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অর্থাৎ মাসে গড়ে প্রায় ২০টি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন ছোট-বড় নেতাও হত্যার শিকার হয়েছেন। অধিকাংশই ছিল ‘টার্গেট কিলিং’। চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে গুলিতে খুন হন একজন। গত ১৭ নভেম্বর রাজধানীর পল্লবীতে খুন হন যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া। পুরান ঢাকার আদালত এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে।

সীমান্তের দুর্বলতায় আসছে অস্ত্র: পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যা, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব অস্ত্রের একটি অংশ আসে পাশের দেশ থেকে। তিনি বলেন, সীমান্ত দুর্বলতা রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসা ঠেকাতে নিরাপত্তা জোরদার ও দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও অভিযান চালানো হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোটের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসার আগেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে টার্গেট কিলিং নিয়ে পুলিশেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, রাজনৈতিক খুন প্রতিরোধ করতে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যবহার সবার আগে ঠেকাতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলো যেন শীর্ষপর্যায়ের সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়। ভয়হীন ভোটের পরিবেশ গড়ে তুলতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অবৈধ অস্ত্রধারী ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার নিশ্চিত না করা গেলে নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তাঝুঁকি আরও বাড়তে পারে। খবর- দেশ রূপান্তর

মন্তব্য করুন


Link copied