নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ থেকে চুরি হওয়া ফোন সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায় ভারতে। ভারতের ফোন আসে বাংলাদেশে। আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করে সেই ফোন বিক্রি হয় বাজারে। নম্বর পরিবর্তনের জন্য রয়েছে শক্তিশালী চক্র। বাসাবাড়িতে বসে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পরিবর্তন করে মোবাইল ফোনের আইএমআই। লন্ডন থেকেও আসছে চোরাই আইফোন। সিলেটে চোরাই মোবাইল ফোন ব্যবসায়ের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তৎপরতার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ওই চক্রের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট থেকে যেসব মোবাইল ফোন চুরি ও ছিনতাই হয় সেগুলো হাত বদলে চলে যায় আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের কাছে।
ওই চক্র দামি ফোনগুলো পাঠিয়ে দেয় ভারতে। সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের শিলং নিয়ে সেগুলো বিক্রি করা হয়। ভারত থেকে চোরাই ফোন নিয়ে আসে চক্রের এদেশীয় সদস্যরা। পরে সেগুলোর আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করে সিলেটে বিক্রি করা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রটি দামি ফোন পাচারের আগে আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করে। পার্টস খুলে বিক্রি করা হয় অপেক্ষাকৃত কম দামি ও পুরোনো ফোনগুলো। নম্বর পরিবর্তন ও পার্টস আলাদা করার জন্য চক্রটির নিজস্ব দক্ষ কারিগর রয়েছে। বাসাবাড়িতে বসে ওই চক্রের সদস্যরা এ কাজ করে থাকে। ভারত থেকে আনা বা দেশের অভ্যন্তরের যেসব দামি ফোনের আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করা হয় সেগুলোর বেশির ভাগই চলে যায় সিলেট নগরীর ফোনের মার্কেট হিসেবে পরিচিত বন্দরবাজারের করিমউল্লাহ ও সিটি হার্টে।
মোবাইল ফোন চোরাচালানে জড়িত আন্তর্জাতিক চক্রটিকে ধরতে দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে আসছিল সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ১৮ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ দক্ষিণ সুরমার মোমিনখলার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে সুজ্জাত নামের এক যুবককে আটক করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৮টি চোরাই ফোন। একই দিন পার্শ্ববর্তী শিববাড়ি জৈনপুর এলাকার একটি বাসা থেকে ২৬টি চোরাই ফোনসহ আবদুস শহিদ ও আকরাম আলী নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে দীর্ঘদিন ধরে তারা চোরাই ফোনের আইএমআই নম্বর পরিবর্তনের কাজে জড়িত। আটক ব্যক্তিদের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ নগরীর বন্দরবাজারস্থ করিমউল্লাহ মার্কেটের তৃতীয় তলার ‘স্মার্টফোন গ্যালারি’ ও সিটি হার্ট শপিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ‘তোহা টেলিকমে’ অভিযান চালায়। তোহা টেলিকম থেকে ২০৪টি ও স্মার্টফোন গ্যালারি থেকে ১৫৪টি চোরাই ফোন উদ্ধার করা হয়। এসব ফোনের বেশির ভাগেরই আইএমআই নম্বর পরিবর্তন করা। উদ্ধার করা ৪২২টি ফোনের মধ্যে বেশির ভাগই ভারত থেকে চোরাই পথে আনা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসএমপির মিডিয়া অফিসার, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, চোরাই ফোন ক্রয়-বিক্রয়ে সিলেটে আন্তর্জাতিক চক্র সক্রিয়। চক্রের চার সদস্যকে আটক করা হয়েছে। অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।