স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ উত্তরাঞ্চলের রংপুর কৃষি অঞ্চলে সেচ নির্ভর বোরো চাষে নীলফামারী সহ ৫ জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৫ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
সূত্র মতে, সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের খরিপ-১ মৌসুমে বিশেষ করে বোরো আবাদের জন্য আগামীকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারী) থেকে সেচ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। অপরদিকে দেশের সর্ব বৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের উন্নয়নমুলক কাজ চলমান থাকায় চলতি মৌসুমে সেচ প্রকল্পের কমান্ড এলাকায় খরিপ-১ মৌসুমে সেচ পাবে ৪৫ হাজার হেক্টর জমি। পাশাপাশি বাপাউবো জানিয়েছে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চলতি বছরের(২০২৪) ডিসেম্বরের পর তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকার ১ লাখ ৪ হেক্টর জমি সেচ পাবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উজান থেকে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ বর্তমানে ভালো অবস্থায় রয়েছে। ফলে সাড়ে সাতশত কিলোমিটার সেচ খালের বিপরীতে পাঁচ হাজার কিউসেক পানি মজুদ রাখা সম্ভব হচ্ছে। সেচ ক্যানেলের পানি খরচ হলে পুনরায় নদী হতে পানি ভরিয়ে দেওয়া হবে সেচখাল গুলো।
রবিবার(১৪ জানুয়ারি) রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানানো হয়, চলতি বোরো মৌসুমে রংপুর বিভাগের বিভাগের ৫ জেলায় ৫ লাখ ৭হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর, রংপুর জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৪১০ হেক্টর, লালমনিরহাট জেলায় ৪৭ হাজার ৯৯০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর ও কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ২১৫ হেক্টর। এই পরিমান জমিতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন। সুত্র মতে, এই পরিমান জমিতে বোরো চাষ করতে বীজতলা তৈরী হয়েছে ২৬ হাজার ১৬১ হেক্টর জমিতে। গত বছর এ অঞ্চলের ৫ জেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ৫ লাখ ৬ হাজার ৫২৫ হেক্টরে। আর চাল উৎপাদন হয়েছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন। গত বছরের চেয়ে এবার ১ হাজার ৩১০ হেক্টর বেশী জমিতে বোরো আবাদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
রংপুর বাপাউবো মুখ্য সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল হাকিম জানান, এবার সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, নীলফামারী সদর মিলে ৩০ হাজার হেক্টর জমি, রংপুরের গঙ্গাচরা তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায় ১২ হাজার ৬৯৮ হেক্টর, দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় ৩ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমি। তিনি জানান, কিছু ক্যানেলের কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো পুনর্বাসন করা হলে আশা করি আমরা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও বেশি জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারবো। গত বছর বোরো মৌসুমে সেচ দেয়া হয় ৩৫ হাজার হেক্টরে।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার ৫ লাখ ৭ হাজার ৮৩৫ হেক্টরে বোরো ধান আবাদ হবে। সেচ নির্ভর বোরো আবাদের জন্য কৃষকদের সেচ যন্ত্র ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সেচ এলাকা সহ আশপাশে বোরো রোপন শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৫২৩ হেক্টরে কৃষকরা রোপণ করেছে ও রোপন অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানান, বর্তমানে তিস্তা সেচ কমান্ড এলাকার কৃষিজমিতে সেচ সুবিধার স্বার্থে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে বছরে ৮০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন বাড়বে।
সুত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রকল্পে ২০২১ সালে এই প্রকল্পের কমান্ড এলাকার সংস্কার ও সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে তৃতীয় দফায় ১ হাজার ৪৫২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বরাদ্দের পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় বাপাউবো। তিস্তা ব্যারাজ থেকে শুরু হয়ে সেচ প্রকল্পের খাল নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ, সৈয়দপুর, নীলফামারী সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ এবং দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ৭৬৬ কিলোমিটার সেচ খাল। এর মধ্যে পুরো অংশের পাড় শক্তিশালীকরণ, ৭২ কিলোমিটারে সেচ পাইপ, পাড় রক্ষায় কংক্রিটের ব্লক বসবে ১০ দশমিক শূন্য ৮ কিলোমিটারে, বাইপাস সেচখাল নির্মাণ হবে ৭ দশমিক ১৩ কিলোমিটার, ২৭টি কালভার্ট নির্মাণ, ২৭০ হেক্টরে জলাধার পুনঃখনন, সাড়ে ৯ কিলোমিটার নালা পুনঃখনন, ৫২ কিলোমিটার পরিদর্শন সড়ক মেরামত, ২০টি রেগুলেটর নির্মাণ ও ৮৭ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করা হবে।