স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী॥ নীলফামারীর জলঢাকায় এক নারী(২৫) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ৪/৫ আসামী ধরা ছোয়ার বাহিরে রয়েছে। তবে মামলার নামীয় আসামীদের মধ্যে পুলিশ এক গ্রাম্য কবিরাজ সহ দুই জনকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার(৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেফতার করা আসামিরা হলেন জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ী ব্রিজপাড়া গ্রামের জোবান আলীর ছেলে কবিরাজ মিজানুর রহমান(৫০) ও উক্ত কবিরাজের ছেলে মনিবুর রহমান(২৫)। আর ভুক্তভোগী নারী উপজেলার পূর্ব খুটামারা বসুনিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আসরাফ আলীর মেয়ে। এঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে জলঢাকা থানায় (মামলা নম্বর-৬, ধারা ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ৩(এর ৯)১/১০/৩০ ততসহ ৩২৩/৩০৭/৫০৬ প্যানাল কোর্টে মামলাটি রুজু করে। মামলায় ৫ জন নামিও সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়। অন্যান্য নামীয় আসামীরা হলো উক্ত কবিরাজের দ্বিতীয় ছেলে কাল্টু মামুদ (২২), কবিরাজের প্রথম স্ত্রী মনিজা বেগম(৪৫) ও কবিরাজের বড় ভাই তইবুর রহমান (৫৬)। উক্ত ভুক্তভোগী নারীকে গুরুত্বর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। তার অবস্থা আশংঙ্কাজনক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যাক্তির সাথে ওই ভুক্তভোগী নারীর ১০ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। কিছুদিন আগে চিকিৎসার কারণে ভুক্তভোগী নারী সঙ্গে পরিচয় হয় কবিরাজ মিজানুর রহমানের। একপর্যায়ে কবিরাজ চিকিৎসার মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই নারীকে রাজারহাট কাজী অফিসে গত ৯ সেপ্টেম্বর বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের প্রমান পত্র দেখাতে না পারলেও ভাড়া বাসায় ভুক্তভোগীকে রেখে ধর্ষন ও নির্যাতন করে আসছিল কবিরাজ। পরে একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারী অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাড়া বাসায় যাওয়া ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় কবিরাজ। এ ঘটনা স্থানীয়দের সহযোগিতায় জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন ভুক্তভোগী ওই নারী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবিরাজ স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয় ওই নারী। ফলে হাসপাতালে হতে ওই নারী ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় কবিরাজের বাড়িতে যায়। এ সময় কবিরাজ ও তার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মিলে তাকে শারীরিক নির্যাতন ও গলা চেপে হত্যার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে বাড়ির বাইরে টেনে এনে তিস্তা সেচ ক্যানেলের পাশে কবিরাজ মিজানুরের ছেলে মনিবুর রহমান সহ অজ্ঞাত ৪/৫জন আসামী ভুক্তভোগী নারীর শ্লীলতাহানি ঘটনায়। পরে ভুক্তভোগী নারী জ্ঞান হারালে সেখানে ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় অজ্ঞাত আসামীরা। খবর পেয়ে ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করায় তার স্বজনরা। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ওই নারীর মা ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলা করে।
এদিকে ৬ অক্টোবর রাতের ওই ঘটনায় উক্ত কবিরাজের পরিবারের পক্ষে অভিযোগ করা হয় গনধর্ষনের সাথে জড়িত জলঢাকা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আজম সহ তার সঙ্গীরা। ওই নারীকে তার আত্বীয়র বাড়িতে পৌছে দেয়ার জন্য নিয়ে যায় কবিরাজের বড় ছেলে। পথে আজম ও সাঙ্গপাঙ্গরা ওই নারীকে তার বাড়িতে পৌছে দিবে বলে তাদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপর তিস্তা ক্যানেলে রাত ২টার দিকে ওই নারীতে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। যা কবিরাজের ছেলে ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করেছিল।
এদিকে জলঢাকা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আজমের নাম জড়িয়ে কবিরাজের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় চাঞ্চল্যের সৃস্টি করে। অভিযোগ উঠে সংঘবদ্ধ ধর্ষনের সাথে জড়িতদের নাম মামলায় আনা হয়নি। মামলায় অজ্ঞাত ৪/৫ জন শ্লীলতাহানী ও ভুয়া বিয়ের নামে কবিরাজ ওই নারীকে ধর্ষন করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শনিবার(৮ অক্টোবর) বিকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আজমের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ওই ঘটনা সর্ম্পকে আমি কিছুই জানিনা। অথচ আমাকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছেড়ে আমার বিরুদ্ধে সাজানো বানোয়াট মিথ্যে কথা অপপ্রচার করছে। আমি এর বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিয়েছি।
ভুক্তভোগী ওই নারীর মামা হাফিজুর রহমান জানান, তিস্তা ক্যানেলে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে ওই আসামীদের আমার ভাগনি চিনতে পারেনি। তবে সেখানে কবিরাজের বড় ছেলে ছিল তাকে চিনেছে সে। তাই মামলায় অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়। তার ভাগনির চিকিৎসা চলছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে জানিয়ে তিনি আরও বলেন সেখানে ভাগনির মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। তার শারিরিক অবস্থা ভাল নয়।
জলঢাকা থানার ওসি ফিরোজ কুিবর বলেন, ভুক্তিভোগীর মা নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় বাদী যা লিখেছে তাই রেকর্ড করা হয়। ওই মামলায় কবিরাজ মিজানুর ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করে জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যান্য পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে। তদন্তে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান ওসি।