স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারী জেলা কারাগারের দুলাল হোসেন (৩২) নামে এক হাজতি আত্মহননের চেষ্টা চালিয়েছেন। বৃহস্পতিবার(৬ জুলাই) রাত ১০টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। প্রথমে কারাগারের ভেতরে হ্যান্ডওয়াশ(লিকুইট) পানে চেষ্ঠা চালিয়ে দ্বিতীয় দফায় ব্লেট দিয়ে গলাকেটে আত্মহত্যান চেষ্টা চালান তিনি। ঘটনার পরে তাকে কারাগার কর্তৃপক্ষ নীলফামারী ২৫০ শষ্যা হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে পুলিশের কঠোর পাহাড়ায় চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।
দুলাল হোসেন নীলফামারী জেলা সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কিসামত গ্রামের মিলবাজার এলাকার মো. এনামুল হক ওরফে এস্তামুলের ছেলে। মাদক ও হত্যা মামলায় ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর করাগারে যান তিনি।
কারা কতৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ওই হাজতি জ্ঞান হারান। করাগারের ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসায় তার জ্ঞান ফিরলে হ্যান্ডওয়াশ পানের কথা জানান তিনি। তার কিছুক্ষণ পরে ব্লেট দিয়ে গলাকেটে আত্মহত্যান চেষ্টা চালায়র সে। এরপর তাকে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। কিন্তু তিনি (হাজতি দুলাল) রংপুরে যাওয়ার আপত্তি জানিয়ে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। এরই এক ফাঁকে আবারও ব্লেড অথবা অন্য কোন ধারারো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। বর্তমানে তিনি নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
শুক্রবার(৭ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাজতি দুলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, জেলখানার ভিতরে নির্মমভাবে অত্যচার করেছে আমাকে। আমার বাসা থেকে সাক্ষাৎ করতে আসলে ৮০০ নেয়, ওই টাকা নিয়েও আমাকে সাক্ষাৎ করতে দেয় নাই। ক্যান্টিনে যে সিগারেটের মূল্য ৪০ টাকা, সেটা নিয়েছে ৬০ টাকা। এসবের প্রতিবাদ করতে গেছি, আমাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করছে। সেখানে জেলার এবং সুপার যদি বলে তোমার জীবনটার ছয়টাকা মূল্য, সেখানে আমি আর কি গ্যারান্টি পাবো ? নিজের জীবন নিজে সুইসাইড করতে ধরেছি এই জন্য। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, কোন কথা বলতে গেলে আমাদের প্রতিটা আসামীর প্রতি নির্যাতন শুরু হয়। বাইরে থেকে কোন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আসার আগে আসামীদের বলা হয়, কোন অভিযোগ করলে তোমাদেরকে নির্মমভাবে পিটানো হবে, এভাবে সরাসরি হুমকি দেয়।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জুলফিকার আলী নবাব বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালে দুলাল হোসেন নামে একজন হাজতি কারাগার থেকে এসেছিলেন। উনি সিবিআর লো ব্যাক পেইন অর্থাৎ কোমড়ে তীব্র ব্যথা নিয়ে এখানে আসেন। সে সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন যে, এই রোগিকে হসপিটালাইজ করতে হবে। যেহেতু আমাদের নীলফামারী সদর হাসপাতালে প্রিজন সেলের ব্যবস্থা নেই, এজন্য ওই রোগিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন, যেহেতু সেখানে প্রিজন সেল আছে। তার প্রেক্ষাপটে রোগি পাঠোনোর ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু কিছুক্ষণ পরে শোনা যায় আমাদের হাসপাতালের বাইরে গিয়ে ব্লেডের মাধ্যমে সুইসাডাল ইঞ্জুরী হন। এতে তার শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হয়, তৎক্ষনাত আমাদের এখানে ভর্তি করে ব্লিডিং বন্ধ করার জন্য যে ম্যানেজমেন্ট সেগুলো সবকিছু করা হয়।
এ বিষয়ে জেলা কারাগারের জেলার আবু নূর মোহাম্মদ রেজা অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৯ সালে দুলাল হোসেন জেলখানায় আসেন। নীলফামারী এবং দিনাজপুর জেলার চারটি মাদক ও মার্ডার মামলা নিয়ে। আসার পর বিভিন্ন সময়ে উশৃঙ্খল আচরণ করেন জেলখানায়। গতকালকে (বৃহস্পতিবার রাতে) হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তাকে আমাদের কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দিয়ে স্বাভাবিক করা হয়। পরবর্তীকে বলেন হ্যা-ওয়াশ এবং কিছু ওষুধপত্র খেয়ে ফেলেছেন তিনি। এসব খাওয়ার কারণে তাকে সদর হাসপাতালে ওয়াশ করার জন্য (স্টোমাক) নেওয়া হয়। সদর হাসপাতাল থেকে তাকে যখন রংপুরে রেফার্ড করে। সে রংপুর যাবে না, বিধায় এঘটনাটি ঘটান। ইতিপূর্বে দুলাল রংপুরে (চলতি বছরের ২০ এপ্রিল) চিকিৎসাধীন ছিল, চিকিৎসা শেষে আসার সময় সৈয়দপুরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন, মারামারি করে পুলিশকে ক্ষতবিক্ষত করেন। সে সময়ে দুলাল হোসেন কোমড়ের বাম পাশের্^ ব্যাথায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেদিনও তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানান জেলার আবু নূর মোহাম্মদ রেজা।