আর্কাইভ  শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪ ● ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নাশকতার আগে এক লাখ সিম যুক্ত হয় ঢাকার নেটওয়ার্কে       রংপুরে ১২ মামলায় গ্রেপ্তার ১৭৫       আহতরা যেই দলেরই হোক, চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী       ২৭শে জুলাই রংপুর বিভাগের আট জেলায় কারফিউ শিথিল       সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান বেরোবি প্রশাসনের      

 width=
 

নীড়হারা আশ্রয়হীন এতিম মুন্নী খুঁজে পেল স্বপ্নের ঠিকানা

বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, সকাল ০৮:৪২

স্টাফ রির্পোটার,নীলফামারী॥ নীলফামারী সদরের দুবাছুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভূমি ও গৃহ পেয়ে আবেগাপ্লুত এক এতিম মেয়ে মুন্নী আক্তার। জীবনের ২২ বছরে এসে নিজের মাথা গোজার ঠাই পেয়ে আনন্দের যেন শেষ নেই তার। ৭ মাস আগে মুন্নী বিয়ে করে। হোটেল শ্রমিক স্বামীর নেই কোন নিজস্ব জায়গা জমি ও ঘরবাড়ি। মুন্নীর নামে আশ্রয়নের ঘর বরাদ্দ হওয়ায় এবার অন্যের জমিতে ঘর তৈরি করে থাকা দীর্ঘ সংগ্রামের সমাপ্তি ঘটলো এই মুন্নীর। আর এতেই স্বামী স্ত্রীর আনন্দের যেন শেষ নেই।
বুধবার(২২ মার্চ) মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে চতুর্থ দফায় সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে রঙিন টিনের পাকা ঘর পেয়েছেন এই এতিম মুন্নী। সরাসরি টেলিভিশনের পর্দায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তরের ঘোষনা দেয়ার পরপরেই তার হাতে সেই ঘরের দলিল ও চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। 
জানা যায়, জেলা সদরের লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছড়ি এলাকার মজিবর রহমানের একমাত্র মেয়ে মুন্নী। পিতা ছিলেন দিনমজুর। তামাক ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বাবা। এরপর দীর্ঘদিন রোগ ভোগে পড়ে থেকে মারা যায় মুন্নীর বাবা। দুই তিন বছর হয় মা লাইলী অন্যত্র বিয়ে করে মুন্নীকে ছেড়ে চলে যায়। নানা শুকুর আলীর একটি ঘরে আশ্রয় হলেও নানা মারা যাবার পর দুইজন দিনমজুর মামারা মুন্নীর ভোরনপোষন চালাতে অপরাগতা প্রকাশ করে। এমনকি তাকে ঘরও ছেড়ে দিতে বলা হয়। মুন্নী নিজের দুমুঠো ভাত জোগার করতে গ্রামের অদুরে রামগঞ্জ বাজারে এক হোটেলে থালা বাসন পরিস্কার করার কাজ নেয়। সেখানেই পরিচয় ঘটে হোটেল শ্রমিক সাব্বিরের সাথে। সাব্বিরও এতিম। তারও নেই কোন ঘরবাড়ির ঠিকানা। চতুর্থ দফায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দের জন্য আবেদন করে মুন্নী। যাছাই বাছাইয়ের পর তালিকায় চলে আসে তার নাম। এলাকার মানুষজন মুন্নীর মামাদের সাথে কথা বলে ৭ মাস আগে সাব্বিরের সাথে বিয়ে দেয়। মুন্নীর নামে ঘর বরাদ্দ হবার পর ঘর না পাওয়া পর্যন্ত মামারা তাদের বাড়িতে থাকার অনুমতি দেয়। 

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে মুন্নী জানায়, বিয়ের পর সন্তান নিবো কি নিবোনা এই চিন্তায় ছিলাম। সন্তান হলে রাখবো কই, মানুষ করবো কি ভাবে এমন চিন্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খেতো। আমি কোনদিন ভাবিনি জমি সহ এমন রঙিন টিনের পাকা ঘর বিনামূল্যে পাবো। সবাই বলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। আল্লাহর রহমতে জাতির পিতার কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারনে আমি নিজের ঠাই পেলাম। বলতে পারবো আমার একটু জায়গা আছে, আমিও আধাপাকা ঘরের মালিক। এখন আমি সন্তান নিতে পারবো। সেই সন্তান নিজের ঠিকানায় বড় হবে। 
মুন্নীর স্বামীর অনুভুতি জানতে চাইলে সে বলে, আমার স্ত্রীর মতো আমিও এতিম। আমারও বাবা মা নেই। পথে পথে ঘুরে ঘুরে মানুষ হইছি। এখন স্বামী-স্ত্রী মিলে সুখের সংসার গড়ে তুলবো। প্রধানমন্ত্রী খে হাসিনার উপহার জমি ও ঘরে আমাদের সন্তান হবে। সেই সন্তান নিজেই ঠিকানায় মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে। 

বুধবার সকালে চতুর্থদফায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভাচুর্য়ালি যুক্ত হয়ে তিনি নীলফামারী জেলার গৃহহীনদের মাঝে ৪৮০ ঘর উপহার দেন। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে- নীলফামারী সদরে ১২০, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৪৫টি, ডোমার উপজেলায় ৯৭টি, জলঢাকা উপজেলায় ১০৩টি ও সৈয়দপুর উপজেলায় ১১৫টি।

জেলা সদরের দুবাছড়িতে দেখা যায় চতুর্থ দফায় ৩৬টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, সুপরিসর রাস্তাঘাট ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এ প্রকল্পটি দেখে মনে হবে গ্রামের ভেতর একটি আধুনিক গ্রাম। এছাড়া এই গ্রামের চারপাশে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানা। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী নারী-পুরুষসহ সকল বয়সীদের জন্য থাকছে আতœকর্মসংস্থানমূলক বিভিন্ন প্রশিণের ব্যবস্থা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সব রকম সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কার্যক্রম। শিশু কিশোরদের জন্য রয়েছে আলাদা স্কুল।
এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের চোখে মুখে এখন পরিতৃপ্তির হাসি। নীড়হারা আশ্রয়হীন মানুষগুলো খুঁজে পেয়েছে তাদের স্বপ্নের ঠিকানা।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘর উপহার দেয়ার ঘোষনার পর নীলফামারী সদরের দুবাছড়ি এলাকায় জেলা সদরের ১২০ পরিবারের হাতে ঘরের জমি সহ চাবি হস্তান্তর করেন নীলফামারী-২(সদর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার, সহকারি কমিশনার (ভুমি) ইবনুল আবেদীন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
অপর দিকে জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৪৫ ঘরের জমি সহ সুবিধাভোগীদের  হাতে চাবি তুলে দেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। অন্যান্য উপজেলায় স্ব-স্ব উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহীকর্মকর্তাগণ। 
এর আগে আশ্রয়ন প্রকল্পে এ জেলায় প্রথম দফায় ৬৩৭, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২৫০ ও তৃতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ৫৮০ পরিবার ঘর পেয়েছে। চতুর্থ দফায় পেল ৪৮০জন। এ নিয়ে নীলফামারী জেলায় “ক” ভুক্ত ভুমিহীন ও  গৃহহীন ৩ হাজার ৯৪৭ জন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, চতুর্থ দফায় পরবর্তিতে আরও কিছু ঘরের বরাদ্দ পাওয়া যায়। এরমধ্যে ১৯৮টি ঘরের নিমাূন কাজ চলছে। নির্মান কাজ শেষ হলে তা হস্তান্তর করা হবে। 

মন্তব্য করুন


 

Link copied