আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ৩ জুলাই ২০২৫ ● ১৯ আষাঢ় ১৪৩২
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ৩ জুলাই ২০২৫
ইরানে স্টারলিংক নিষিদ্ধ, ইসরায়েল-সহযোগীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড

পার্লামেন্টে নিরাপত্তা আইন পাস
ইরানে স্টারলিংক নিষিদ্ধ, ইসরায়েল-সহযোগীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড

ইরান কি এবার পারমাণবিক বোমা বানাবেই? জনতার চাপ তুঙ্গে!

ইরান কি এবার পারমাণবিক বোমা বানাবেই? জনতার চাপ তুঙ্গে!

ইরানে শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় জানাজায় মানুষের ঢল

ইরানে শীর্ষ কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের রাষ্ট্রীয় জানাজায় মানুষের ঢল

গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৭২ জনের, মোট নিহত ছাড়াল ৫৬ হাজার ৩০০

ইসরায়েলের হামলা
গাজায় একদিনে প্রাণ গেল ৭২ জনের, মোট নিহত ছাড়াল ৫৬ হাজার ৩০০

ছাত্রলীগের তালিকায় দেওয়া হয়েছিল বিসিএসে নিয়োগ!

বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫, রাত ০১:০৭

Ad

নিউজ ডেস্ক:  মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আর পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) মিলেমিশে নিয়ম লঙ্ঘন করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ক্যাডার-ননক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেই এবং ওই কোটায় প্রার্থী উল্লেখ না করলেও বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগ পেয়ে চাকরি করছেন। এভাবে ১৭ জনের চাকরির তথ্য পাওয়া গেছে। পিএসসি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিবরাও বলছেন এটি বিধিবহির্ভূত বড় নিয়মের লঙ্ঘন। দুই মাসের অনুসন্ধানে উঠে আসে ২৯ বিসিএস নিয়ে ভয়ংকর তথ্য। ২৯ বিসিএসের ১৭ জনের নিয়োগে বড় অনিয়ম আর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩১ জনকে বিনা কারণে চাকরিতে হয়রানির তথ্য উঠে আসে। ৩১ জনকে হয়রানি ও ভুয়া ক্যাডার প্রমাণ করতে সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায় গোপন রেখে নামে-বেনামে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে পিএসসি-জনপ্রশাসনে। হয়রানি করতে দৌড়াচ্ছে দুদকে। অথচ অবৈধ নিয়োগ পাওয়া ১৭ জনের কিছুই হচ্ছে না, কারণ তাঁদের সহযোগিতা করছেন আওয়ামী লীগের সুবিধা নেওয়া ব্যাচমেটরাই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ২৯ বিসিএসে সুপারিশ করে পিএসসি। যার গেজেট প্রকাশ হয় জুলাই মাসে। ভাইভা শেষ হওয়ার পর পিএসসি সুপারিশের ১৪ দিন আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৭ ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতার নামে বিধিবহির্ভূত একটি প্রত্যয়নের চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ক্যাডার ও ননক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে সে সময় পিএসসির সচিবকে জানায়, ‘২৯ বিসিএসে অংশগ্রহণকারী ওই ১৭ জনের পিতার মুক্তিযোদ্ধার সনদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ অথচ কোনো পরীক্ষার্থীর অনুকূলে এমন চিঠি ইস্যু করতে পারে না মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি সেটি গ্রহণও করতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন মিজানুর রহমান আর পিএসসিতে মো. বাবুল হাসান। রাজনৈতিক বিবেচনায় এরকম কাজ হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট অনেকে। নিজ দপ্তরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সচিব ইশরাত চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এরকম চিঠির নজির নেই। ২০১১ সালে পিএসসিতে যে চিঠি পাঠানো হয় সেখানে কোনো সূত্র উল্লেখ নেই, মানে স্পষ্টই এটি একটি অনিয়মের জন্য করা হতে পারে। এদের প্রত্যেকের শাস্তি হওয়া দরকার বলে জানান তিনি। বিসিএস পরীক্ষার শুরুতেই তিনি কোনো কোটার প্রার্থী কি না, তা তথ্য ফরমে উল্লেখ করতে হয়। এমনকি ভাইভা বোর্ডে সব সার্টিফিকেট সরবরাহ করতে হয়। সে সময়ে ছাত্রলীগের দেওয়া তালিকা মোতাবেক এই অনিয়ম করা হয়েছে বলে জানায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পিএসসির একাধিক সূত্র। ফলে চাকরির ভাইভা শেষ হওয়ার পরও তাঁরা কোটায় নিয়োগ পান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে থাকা তালিকার নামগুলো। বিধিবহির্ভূত চিঠি নিয়ে এবং সেই সময় বাবার মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট না থাকলেও যাঁরা চাকরি করছেন তালিকা মোতাবেক তাঁরা হলেন রকিবুর রহমান খান রেজি. নং ০৬২০০৩, মো. তোফাজ্জল হোসেন রেজি. নং ০২৫৭২৯ এবং নাহিদা বারিক রেজি. নং ০৭৪১৭০ তিনজন প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত। মো. খোরশেদ আলম রেজি. নং ০০৮৬৭৯ পুলিশ ক্যাডারে কর্মরত। সমবায় ক্যাডারে আছেন মো. কামরুজ্জামান রেজি. নং ০১৭৩৪৬, পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারে হালিমা খাতুন রেজি. নং ০৫৪৫৪৯। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে (ভূগোল) হাফিজ আল আসাদ রেজি. নং ০১১৬৪১ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মিল্টন আলী বিশ্বাস রেজি. নং ০১৩৭৫৯। এ ছাড়াও বাকি মো. জাকারিয়া, রেজি. নং ০৬৬৯৬৯, মো. শাব্বির আহম্মেদ রেজি. নং ০৭২০৭২, মঞ্জুর হোসেন রেজি. নং ০৬৩৭২৮, মামুন-অর-রশিদ রেজি. নং ০৫৪২৮৯, মো. আবদুল কাদির মিয়া রেজি. নং ০৫৪৭৫৩, মো. জামসেদ হোসেন রেজি. নং ০৩৭৮০৩, ইমতিয়াজ মাহবুব রেজি. নং ০৮১০০১, মনিরুজ্জামান রেজি. নং ০৫৪৩১০, মো মঈনুল হোসেন রেজি. নং ০১০৬৪৩ (চাচাকে বাবা দেখিয়েছে) থানা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত। জানা গেছে, ওই তালিকায় যাঁরা ক্যাডার পাননি, তাঁরা ননক্যাডারে এবং কেউ পরের বিসিএসেও কোটায় চাকরি করছেন। পিএসসির বর্তমান সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া চিঠি দেখে গত মাসে নিজ কার্যালয়ে বলেন, এটি ভয়ংকর তথ্য। একটা ভাইভা বোর্ডে অবশ্যই সার্টিফিকেট দেখাতে হবে এবং কোটার প্রার্থী হলে শুরুতেই ফরমে উল্লেখ করতে হবে। তার মানে সে সময় যাঁরা ছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতার মাধ্যমে এসব জালিয়াতি করেছেন। এতে করে ওই জালিয়াতি না হলে সে সময় অনেকেই তালিকায় ওপরে থাকতে পারতেন। অনেক যোগ্য বা সঠিক লোকের চাকরি হতো। এটা স্পষ্টই বড় অনিয়ম। ওই সময়ের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের যোগসাজশে এটা হতে পারে।

নিরপরাধ ৩১ কর্মকর্তাকে নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড : অনিয়মে নিয়োগ পাওয়া ওই ১৭ কর্মকর্তার কিছু না হলেও বৈধ নিয়োগের একই ব্যাচের ৩১ কর্মকর্তা চাকরির শুরু থেকে নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রুপ ওই ৩১ জনের মধ্যে থেকে বাছাই করে ২১ জনকে ভুয়া ক্যাডার আখ্যা দিয়ে নানা প্রচার চালাচ্ছে। পদোন্নতি-পদায়নে পদে পদে বাধা দিচ্ছে খোদ ব্যাচমেটদেরই একটা অংশ। জানা গেছে, সিভিল সার্ভিস রুল ১৯৮২ বিধি ১৬-এ এসআরও-৫৫ আইনে বিসিএস ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ মোট চারটি ব্যাচে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শতাধিক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ করে পিএসসি। বাকি তিনটি ব্যাচ নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও ২৯-এ নিয়োগ পাওয়া ৩১ জনকে ভুয়া প্রমাণে ব্যস্ত একটা পক্ষ। মন্ত্রণালয় ও আদালতে দৌড়ঝাঁপ করে কিছু করতে না পেরে ওই কর্মকর্তাদের হয়রানি করতে এখন দুদকেও মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে গোপনে এসআরও-৫৫ আইনে নিয়োগ পাওয়া চারটি বিসিএসে চাকরিরত শতাধিক কর্মকর্তাকে নিয়োগ বাতিল করে চাকরি থেকে বের করতে কাজ করছে একটা চক্র। সূত্র জানায়, ২০১২ সালে দেলোয়ার হোসেন এসআরও-৫৫-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করলে ২০১৩ সালে এসআরও-৫৫ অবৈধ ঘোষণা করে। সরকার পক্ষ আপিল করলে আপিলের পূর্ণ বেঞ্চ ২০১৭ সালে হাই কোর্টের রায়কে বাতিল করে এসআরও-৫৫ বহাল করে। যা এখনো বহাল। এই আইনে শতাধিক কর্মকর্তা এখনো কর্মরত। অথচ তথ্য গোপন করে শুধু ২৯ ব্যাচের ওই ৩১ কর্মকর্তাকে নানা হয়রানি ও পদোন্নতিবঞ্চিত করছে। সর্বশেষ ট্যাক্স ক্যাডারে কর্মরত একজনের পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। আবার একই নিয়োগে সর্বশেষ ব্যক্তি ফাতেমা জোহরার সম্প্রতি নিউইয়র্কে পোস্টিং নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ২৯ ব্যাচের নিয়োগে অনিয়ম দেখতে ২১ জনের বিষয়ে নিয়োগপ্রক্রিয়া অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের কথা জানায় দুদক। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ২১ কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করলেও একটি দুষ্টচক্র বৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া ৩১ জন থেকে বাছাই করে ২১ জনের তালিকা প্রচার শুরু করে। বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁদের ভুয়া ক্যাডার হিসেবে মিথ্যা প্রচার করে। দুদকের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হলে সে সময়ের পিএসসি ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। মিথ্যাচারে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা জানান, ২৯ ব্যাচের ৩১ জনকে পদে পদে হয়রানি হতে হচ্ছে। ৩১ জনই ওই সময় কোনো না কোনো প্রথম শ্রেণি বা গেজেটেড অফিসার ছিলেন। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, এসআরওর নিয়ম মোতাবেক পিএসসি সুপারিশ করে থাকলে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের চাকরি শতভাগ বৈধ। এসআরও নিয়ে মিথ্যাচারের সুযোগ নেই।

ভুয়াদের ক্যাডার ধরতে কাজ করছে দুদক : ৩৮ থেকে ৪৩তম বিসিএসে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ক্যাডার ও ননক্যাডার পদে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের তালিকা সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম পিএসসি থেকে ইতোমধ্যেই এই তালিকা সংগ্রহ করেছে। দুদক জানায়, নবম বিসিএস থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চাকরি পেয়েছেন, সেগুলোর সঠিকতা যাচাই করতেও তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যালোচনায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে বেশ কয়েকজন চাকরি পেয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তথ্য পর্যালোচনা করে এনফোর্সমেন্ট টিম কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে।

সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

মন্তব্য করুন


Link copied