আর্কাইভ  রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫ ● ৯ ভাদ্র ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২৪ আগস্ট ২০২৫
একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

জয়ের জটিল সমীকরণ

জয়ের জটিল সমীকরণ

হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

জুলাই-আগস্টে মানবতাবিরোধী অপরাধ
সীমাহীন বর্বরতা
হাসিনার মামলায় ১৬ চানখাঁরপুল মামলায় ৮ জনের সাক্ষ্য শেষ

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

ছুটিতে পাঠানো সেই ১২ বিচারপতি কোথায়?

পঞ্চগড়ে জ্বীনের বাদশার খপ্পরে পরে নৃশংস হত্যার শিকার নারী!

রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, রাত ০৯:৪০

Advertisement Advertisement

ডিজার হোসেন বাদশা, পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে জ্বীনের বাদশার খপ্পরে পরে নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছে সামিমা আক্তার সনিয়া (২৫) নামে এক নারী। এ ঘটনায় হত্যার অভিযোগ উঠেছে সোহেল (৩৫) ও আফরোজা (৩২) নামে এক দম্পত্তির বিরুদ্ধে।

শনিবার (২৭ মে) গভির রাতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সনিয়ার মৃত্যু হয়। এদিকে রোববার (২৮ মে) দুপুরে থানা পুলিশ মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে।

নিহত সনিয়া জেলার বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের মানিকপীর এলাকার ছলেমান আলীর মেয়ে। স্বামীর সংসার ছাড়া হয়ে শহরের ধাক্কামারা এলাকায় চার বছরের ছেলে সন্তান ও ছোট বোনকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। অভিযুক্ত দম্পত্তি সোহেল ও আফরোজা একই এলাকার প্রতিবেশী। অভিযুক্ত সোহেল পঞ্চগড় পৌরসভার লাইসেন্স পরিদর্শকের সহকারী।

পারিবারিক ভাবে জানা যায়, প্রতিবেশী সোহেল ও আফরোজা দম্পত্তি সনিয়াকে বিভিন্ন ভাবে লোভ লালসা দেখিয়ে আসছিল। এর মাঝে জ্বীনের বাদশার কথা বলে শহরে জমি ক্রয়সহ একের পরিবর্তে তিনগুণ টাকা ও সোনা-গহনা দেয়ার কথা বলে আসছিল। এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অংকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। সনিয়া সেসব টাকা বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে ও ধার দেনা করে দিয়েছিল। সবশেষ গত শনিবার ঘরের বাকী জিনিসপত্র বিক্রি করে সনিয়া। এর মাঝে বিকেলের দিকে মাদ্রাসার কয়েকজন এতিম বাচ্চার কাপড় ক্রয় করে দেয়ার কথা বলে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় আফরোজা। এর পর অসুস্থ্য অবস্থায় বাড়ি ফিরে এসে বিষ খাওয়ানোর কথা জানালে দ্রুত উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মৃত্যুবরণ করে সনিয়া। তবে ঘটনার পর থেকে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে।

সনিয়ার ছোট বোন সাদিয়া আক্তার অভিযোগ করে জানান, অনেক কিছু পাইয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়েছিল সোহেল ও আফরোজা। আমরা গরিব পরিবারের হওয়ায় তার ফাঁদে পা দেয় আমার বোন। এর মাঝে আমার বোনের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়েছে তারা। শনিবার এতিমখানার তিন বাচ্চাকে জুব্বা কিনে দেয়ার কথা বলে বোনকে হিমালয় পার্কে নিয়ে যায়। এর পর তাকে জোর করে ঔষুধ খাইয়ে তার কাছে থাকা আরো ২০ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল তারা নিয়ে নেয়। বোন অসুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে সব খুলে বলে। এর পর তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। আমরা এ ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচার দাবী করছি।

নিহতের ছোট ভাই মনিরুজ্জামান মুন্না জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী আমাদের শেষ করে দিয়েছে। আমার বোনকে আফরোজা ডেকে নিয়ে অনেক লোভ দিয়ে সব লুট করেছে। আমার বোন অসুস্থ্য অবস্থায় বাড়িতে ফিরে সব বলে দে। এবং-কি মৃত্যুর আগেও তাদের স্বামী-স্ত্রীর নাম নিয়ে তাদের সব কর্মকান্ডের কথা বলে গেছে। তাদের জন্য এর আগেও আমার বোন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছি। আফরোজার স্বামী সোহেল চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছিল। তাও দেয়ার কোন খবর ছিল না। পাওনাদারদের চাপে আমার বোন তাদের কাছে টাকা চায়। এর পর তারা স্বামী- স্ত্রী টাকা ফেরত দেয়ার নাম করে আমার বোনকে হত্যা করে। যাতে অন্যকারো সাথে এমন ঘটনা না ঘটে। আমরা এ ঘটনায় তাদের কঠিন বিচার দাবী করছি।

নিহতের মামা এনামুল হক ও দুলাভাই শহিদুল ইসলাম জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে সনিয়ার সাথে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে পাওনাদারের চাপে ওই দম্পত্তিকে টাকা ফেরতের জন্য বলে সে। এর পর তারা কৌশলে এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে।

ঘটনার পর অভিযুক্তদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে ওই দম্পত্তিকে পাওয়া যায় নি। তবে অভিযুক্ত আফরোজার মুঠোফোনে  সাংবাদিক পরিচয়ে বিষয়টি জানতে পেরে মুঠোফোনটি বন্ধ করে দেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার ফারহান তানজিল জানান, বিষক্রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ওই নারী। এর মাঝে সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভবেশ চন্দ্র পাল জানান, ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে মরদেহ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপ-মৃত্যু (ইউডি) মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন


Link copied