বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ও সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীতে এ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করেন তারা।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টোকিও-তে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে যৌথ বিবৃতিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেন, আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করেছি। আগামীতে এ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।
কিশিদা বলেন, আজকের বৈঠকে তারা (ফুমিও কিশিদা-শেখ হাসিনা) ‘কৌশলগত অংশীদার’ হিসেবে আইনের শাসনের ভিত্তিতে অবাধ ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সমুন্নত দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন। এখন বিশ্ব ব্যবস্থার ঐতিহাসিক ‘টার্নিং পয়েন্ট’।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর করতে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সমযোগিতা বাড়াতে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে।
গত মাসে ঘোষিত অবাধ এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক পয়েন্টের জন্য নতুন পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বৈঠকে জাপান ও বাংলাদেশ বিস্তৃত ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছে।
কিশিদা বলেন, আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জাপানের সম্ভবনা-বাংলাদেশ ইকোনোমিক অংশদারত্ব চুক্তির বিষয়ে যৌথ সমীক্ষায় ব্যাপক ভাবে এগিয়ে যেতে সম্মত হয়েছি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা বাংলাদেশ একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য। আমাদের প্রত্যাশা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফুমিও কিশিদা বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। আমরা এই ইস্যুতে সহায়তা অব্যহত রাখবো।
ঢাকা-টোকিও সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিশিদা এবং আমি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব কিছু নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আনন্দিত যে বাংলাদেশ ও জাপান সফল ভাবে বিদ্যমান সম্পর্ককে ‘ব্যাপক অংশীদারত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ উন্নীত করেছি।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন বলেন, আমি নিশ্চিত আমাদের দুই দেশের জনগণ এবং আমাদের সরকারের মধ্যেকার বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে।
প্রধানমন্ত্রীদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতির আগে দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। সহযোগিতা বাড়াতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি, শুল্ক বিষয়ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি এবং সাইবার-নিরাপত্তা, শিল্প আপগ্রেডিং, বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রোরেল বিষয়ে আমরা দুই দেশ ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছি। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক আমাদের ভবিষ্যত সহযোগিতাকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক করবে।
ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট চালু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি এই বছরের মধ্যে ঢাকা-নারিতা সরাসরি ফ্লাইট চালু হতে যাচ্ছে।
বৈঠকে বঙ্গোপসাগর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের জন্য মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্ট্রিগ্রেটেড ইনফ্রাসট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগ এবং বিগ-বি উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করার কথাও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হওয়ায় আমরা জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।