স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ মহালয়ায় দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন, আজ বিজয়া দশমীর দিন আবার ঘোড়ায় করে মর্ত্যলোক ছেড়ে স্বর্গলোকে প্রস্থান করবেন। অগণিত ভক্তদের মনে তাই আজ বিদায়ের বিষাদ। দেবীর বিদায়ের কষ্ট ভুলে থাকতে এবং হাসিমুখে বিদায় জানানোর জন্য ভক্তরা মত্ত হয়েছেন সিঁদুর খেলায়। মুখ রঙিন করে হাসি মুখে মাকে বিদায় জানানোর জন্যই সিঁদুর খেলা। এছাড়া সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীদের জন্য সিঁদুর একটি গুরুতপূর্ণ অংশ। তাই মাকে বিসর্জনের আগ পর্যন্ত তারা একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে মিষ্টিমুখ করেন, নাচ, গান করেন। যেন সারাটা বছর এমন আনন্দেই কাটে।
মঙ্গলবার(২৪ অক্টোবর) জেলার পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা যায় লাল শাড়ি, সাদা শাড়ি লাল পাড় পোশাকে ছেয়ে আছে। দেবীকে সিঁদুর ছোঁয়ানোর জন্য দীর্ঘ লাইন। অনেকেই এসেছেন সিঁদুর খেলতে। বাদ্যের তালে তালে মন্ডপে মন্ডপে চলছে বিদায়ের প্রস্তুতি। বিকেলে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
নতুন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কল্পনা সাহা বলেন, দেবী দুর্গা মা পৃথিবীতে এসেছেন আমাদের মঙ্গলের জন্য। আমরা তার কাছে সবার মঙ্গল প্রার্থনা করছি। আজ দেবী দুর্গা মা স্বর্গে ফিরবেন, আমরা বড়-ছোট সবাই মিলে সিঁদুর খেলায় মেতেছি।
সুমনা চক্রবর্তী বলেন, অঞ্জনি শেষে মায়ের কাছে পরিবার ও দেশের সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করেছি। মা যেনো সকল দুঃখ কষ্ট নিজের সাথে করে নিয়ে যায় এবং সকলকে শান্তির সাথে বাঁচতে আশির্বাদ করে।
এই সিঁদুর খেলা বিবাহিত নারীর জন্য সীমাবদ্ধ থাকলেও সকলেই মন্ডপে ভিড় করেন নেচে গেয়ে এতে অংশ নেন। অবিবাহিতরা গালে আর হাতে মাখেন সিঁদুর।
পূজা দেখতে আসা তরুণী চয়নিকা দাস জানান, বিয়ে ছাড়া মাথায় সিঁদুর দেয়া যায়না। আমাদের একদিন বিয়ে হবে তখন ভালো স্বামী এবং সুখের সংসারের কামনায় আমরা সিঁদুর খেলায় আসি। বিয়ে হলে আমরাও সিঁথিতে সিঁদুর পরবো। এখন শুধু গালে ও হাতে সিঁদুর দিচ্ছি।
সধবা নারীর স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন নারীরা নিজ কপালে সিঁদুর লাগান এবং সেই সিঁদুরের কিছু অংশ দিয়ে দেবীর চরণ ¯পর্শ করে থাকেন। তারপর সবাই মিলে একে অপরকে সিঁদুর মাখেন। দুর্গা আগামী বছর আবার সাথে করে শাঁখা সিঁদুর সঙ্গে নিয়ে আসবেন এবং সেই শাঁখা সিঁদুর ধারণ করেই স্বামীর মঙ্গল হবে এই বিশ্বাসে ভক্তরা সিঁদুর নিয়ে দশমী উদযাপন করেন। এই উৎসবের নামই সিঁদুর খেলা।
কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অক্ষয় কুমার রায় বলেন,‘বেলা ১১টার মধ্যে পূজার সকল আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়েছে। বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিমা বিসর্জন মেলা। প্রতি বছরের ন্যায় শহরের আশপাশ এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি মন্দিরে প্রতিমা নিয়ে আসেন ভক্তরা। মেলা শেষে মন্দিরের দিঘীতে প্রতিমা বিসজন করা হয়’।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী জানান, জেলায় এবার ৮৮৭টি মন্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টার মধ্যে এসব মন্ডপে সমাপ্ত হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা। বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে যে যার মতো করে প্রতিমা বিসর্জন দিবেন ভক্তরা।