স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেছেন ওই আসনের ছয়জন প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী।
শনিবার (৩০ডিসেম্বর) দুপুরে নীলফামারী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা কাছে লিখিত অভিযোগপত্র দেন তারা।
অভিযোগকারী প্রার্থীরা হলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জাফর ইকবাল সিদ্দিকী (নোঙ্গর), স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরান কবির চৌধুরী(ট্রাক), জাতীয় পার্টির (জেপি) মখদুম আজম মাশরাফি (বাইসাইকেল), জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তসলিম উদ্দিন(লাঙ্গল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের সিরাজুল ইসলাম (টেলিভিশন) ও তৃণমূল বিএনপির অ্যাডভোকেট এন কে আলম চৌধুরী (সোনালী আঁশ)।
অভিযোগপত্রে ছয় প্রার্থী ওই আসনের নির্বাচনী এলাকায় সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ এখনও তৈরী হয় নাই বলে উল্লেখ করনে। সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণ মূলক ও নির্বাচনের লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে তাদের অভিযোগগুলো সুরাহা করতে আগামী ৩ জানুয়ারী মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। এছাড়াও অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এবং ভোট গ্রহণকালে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তারা করেছেন তা ঘটলে অন্যান্য প্রার্থীরা কী ভাবে প্রতিকার পাবে সে বিষয়ে আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে তাদেরকে লিখিত ভাবে অবগতি করার দাবি জানিয়েছে তারা।
ছয় প্রার্থী তাদের উল্লেখিত ১১টি অভিযোগে বলেন,
(এক)-বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ৩০০ ভোটারকে তৈরী রাখা। যে সকল ভোটার সারাদিন ভোটের লাইনে দাড়িয়ে থাকা ও সময় সময়ে ভোটারদের স্থান পরিবর্তন করে সামনের লোক পিছনে ও পিছনের লোক সামনে লাইনে দাড়িয়ে থেকে প্রদর্শন করা। যা একটি অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন হচ্ছে এবং ভোট কেন্দ্রের ভিতরে ভোট বাক্সে ইঞ্জিনিয়ারিং করার পরিকল্পনা করেছে যে বিষয়ে জনশ্রুতি আছে। যেমন- ভোটের দিন অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা।
(দুই)-বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক স্থানীয় ভোটার যারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ভাতার আওতায় আছে তাদের নৌকায় ভোট না দিলে ভাতা বন্ধ করার হুমকি স¤পর্কে জনশ্রুতি।
(তিন)-ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র হাতিয়ে নিয়ে নৌকায় ভোট দিতে বাধ্য করার পরিকল্পনা এবং আশপাশ ভোটারদের কেন্দ্রে থেকে নৌকায় ভোট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা পরিকল্পনা।
(চার)-বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক প্রিজাইটিং অফিসাররা অত্র এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক হওয়ায় তাদেরকে ভয়ভীতি হুমকি বা অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করার পরিকল্পনা যেন ভোট চলাকালীন সময় প্রিজাইটিং অফিসাররা অন্য প্রতিদন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদেরকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় বা পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয় যেন অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা ভয়ে চুপ করে থাকে এবং যাতে করে বর্তমান সংসদ সদস্য এর এজেন্টরা ব্যালট বই নিয়ে সিল মারতে পারে বা তাদের ছাপানো ব্যালট ভোট বাক্সে ঢুকাতে পারে। এ কারনে আমরা ডোমার ডিমলার প্রিজাইটিং অফিসারদের নীলফামারীর জেলার অন্য আসনে ডিউটি প্রদানে এবং অন্য আসনের প্রিজাইটিং অফিসারদের ডোমার-ডিমলায় ডিউটি প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানাচ্ছি।
(পাঁচ)-বাহির থেকে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে বা হুবাহু ব্যালট পেপার ছাপিয়ে নিয়ে এসে সংসদ সদস্য অনুসারী কর্তৃক কৌশলে ব্যালট বক্সে ঢুকানো। যেমন- একজন ভোটার কৃর্তক এক এর অধিক ব্যালট পেপার ০৫/১০ টি করে বাক্সে ঢুকানো।
(ছয়)-বর্তমান সংসদ সদস্য এর ব্যালট পেপারের বান্ডিলে পরিমান কম রেখে ১০০ টির ঘোষনা লেখা।
(সাত)-এক প্রার্থীর ব্যালট পেপারের বান্ডিলের উপরে ও নিচে বর্তমান সংসদ সদস্য নামে নৌকা মার্কা ব্যালট লাগিয়ে বান্ডিলের উপরে লাগানো ব্যালট মার্কায় প্রার্থীকে জেতানো। এটি নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জনশ্রুতি আছে।
(আট)-চুড়ান্ত ফলাফলে এক প্রার্থীর গননার সংখ্যা অন্য প্রার্থীর নামে প্রকাশ করা এবং এধরনের ক্ষেত্রে অন্য অন্য এজেন্টদের বের করে দিয়ে শুধু একজন এজেন্টকে ভোট গননার সময় ভিতরে উপস্থিত রাখা। সকল প্রার্থীর সকল এজেন্ট গননার সময় ভোট কেন্দ্রের ভিতরে উপস্থিত থাকতে পারে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা। কেন্দ্রের ফলাফল সকল এজেন্টের উপস্থিতিতে ঘোষণা করে সেখানে এজেন্টদের সই নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা। বর্তমান সংসদ সদস্য এই বিষয় গুলি করতে দিবে না মর্মে জনশ্রুতি।
(নয়)-এখন পর্যন্ত অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার বা তার অনুসারী কর্তৃক নানা রকম হামলা ও হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে থানায় একাধিক লিখিত অভিযোগ এবং থানা নির্বাহী অফিসারের নিকট টেলিফোনে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ওই সমস্ত হামলা, হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন বন্ধ হচ্ছে না।
(দশ)-বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার গত কয়েকদিন আগে ১৮ ডিসেম্বর ইসলামী ফাউন্ডেশনের সকল ইমামদেরকে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেছে। যা তার বর্তমান সংসদীয় পদের ক্ষমতার অপব্যবহার।
(এগারো)-বর্তমান সংসদ সদস্য ও তার অনুসারী কর্তৃক প্রচার চালানো হচ্ছে যে, একটি ভোট পেলেও বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা মার্কার প্রার্থী মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার নির্বাচিত হচ্ছেন যা পূর্ব নির্ধারিত।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী ৬ প্রার্থী উক্ত অভিযোগটি প্রদানের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগটি পেয়ে ইসি রাশেদা সুলতানা ঘটনাটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থাগ্রহনের আশ্বাস দেন।
তবে এই অভিযোগগুলির বিষয়ে নৌকার প্রার্থী আফতাব উদ্দিন সরকারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দেননি।
