স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ উত্তরের জেলা নীলফামারী কনকনে শীতে কাঁপছে। দিন দিন বাড়ছে শীতের প্রকোপ। ঘন কুয়াশায় রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত আচ্ছন্ন থাকছে। এতে করে দিনের বেলায়ও যানবাহনকে লাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশ পথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগেদিন গতকাল সোমবার(১ জানুয়ারী) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা ২৪ ঘন্টায় এক লাফে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারনে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বহে যাচ্ছে। সৈয়দপুরে আজ এ বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। সকালে দৃষ্টিসীমা ছিল ৫০, দৃষ্টিসীমা কম থাকায় বিমানবন্দের বিমান ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে।
এদিকে দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাস্তায় কমেছে মানুষের চলাচল। উষ্ণতার আশায় কেউ বা আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন আবার কেউ ভিড় জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। এতে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এমন আবহাওয়ার কারণে অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষেরা কিছুটা বিপাকে পড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথগুলো। গাছের পাতা, ফসলের খেত আর ঘাসের ওপর থেকে টপটপ করে পড়ছে শিশিরবিন্দু। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছে কাজের সন্ধানে।
শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় কথা হয় ব্যাটারী চালিত রিক্সাচালক ইউনুস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রচন্ড ঠান্ডা মানুষজন বের হচ্ছে কম। কামাই নাই, আমাদের দিন রোজগার করে দিন খেতে হয়। একদিন কামাই না করলে বউ-বাচ্চা নিয়া না খেয়ে থাকতে হবে। ঠান্ডায় মানুষ রিক্সায় উঠতেও চায় না।
অপর রিক্সাচালক সোলেমান আলী বলেন, সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ভাড়া পাইনাই। রিক্সা চালাইলে হাত-পা অবশ হয়া যায়। আগে তো প্যাডেল রিক্সা ছিল চালাইলে শরীর গরম হইতো। ঠান্ডার কারনে মানুষজন রিক্সায় উঠবার চায়না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাই নাই।
ইটাখোলা এলাকার জামাল উদ্দিন বলেন, আমি কৃষি কাজ করি, মানুষের খেতেখামারে কাজ করি। গত দুইদিন ধরে যে শীত আর কুয়াশা তার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস। এগুলার কারনে কাজকামে যাইতে পারছি না। মানুষের কাজ কাম করে যা পাই তাই দিয়ে সংসার চলে কিন্তু দুই কাজকাম করতে না পারায় সংসারে অভাব দেখা দিছে। আজ যদি কাজ করতে পারি তাহলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
রামনগর এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন, এই শীতের কারনে কোন কিছু করা যাচ্ছে না। কোন প্রকার কাজ কাম নাই, এই শীতের সময় কাজ কাম পাওয়া যাচ্ছে না। কিভাবে যে সংসার চালাবো কোন বুঝতে পারতেছি না।
এদিকে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে।
নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান জানান, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছেন।
নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ৬ উপজেলা ও চার পৌরসভায় ২৫ হাজার পিচ কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনও প্রায় ৫ হাজার মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা দেওয়া হবে।