মমিনুল ইসলাম রিপন: রংপুরে স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলায় গ্রেফতার আতংকে অ্যাম্বুলেন্স করে স্ট্রেচারে চড়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে আগাম জামিন নিলেন আফজালুল হক নামে এক আসামি। রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিচারক এফ এম আহসানুল হকের আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিন নেওয়ার সময় ভুক্তভোগী আফজালুল হকের ছেলে সাথে ছিলো।
এদিকে স্বামীর জামিনের খবর শুনে আদালত চত্বর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যান আকতারা বেগম। এ সময় মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। আফজালুল হকের বাড়ি রংপুর নগরীর হাজীরহাট জগদীশপুর এলাকায়।
জানা গেছে, তর্কের একপর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় দেন স্বামী আফজালুল হক (৫৩)। স্ত্রী আকতারা বেগম (৪৭) এ ঘটনা জানান ভাইদের। বোনকে থাপ্পড় মারায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে দুলাভাইকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেন শ্যালকেরা। এ ঘটনায় গত ৩১ শে মার্চ শ্যালকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আফজালুল হক। কিন্তু মামলা ও পুলিশি ধাওয়া থেকে বাঁচতে শ্যালকেরা আকতারাকে দিয়ে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা দেন। পুলিশ বার বার বাসায় তাকে গ্রেফতার করতে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রোববার স্ট্রেচারে করে রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসেন আফজালুল হক।
মামলায় জামিনের পর আফজালুল হক বলেন, শ্যালকেরা মামলা থেকে বাঁচার জন্য আমার স্ত্রীকে বাদী করে আমার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। এরপর পুলিশ গ্রেফতারের জন্য বারবার বাসায় যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে স্ট্রেচারে চড়ে আদালতে এসে হাজিরা দিলাম। জামিনও পেলাম। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে, আমার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে তার ন্যায় বিচার চাই।
স্ত্রী আকতারা বেগমের দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ৩১ বছর যাবত সংসার জীবনে নানা সময়ে যৌতুকের জন্য চাপ দেন স্বামী আফজালুল হক। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা সালিসও করেন। কিন্তু সর্বশেষ ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন স্বামী। আকতারা ভাইদের কাছ থেকে যৌতুকের টাকা এনে না দেওয়ায় লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে সম্পূর্ণ মিথ্যে ও সাজানো একটি মামলায় শয্যাশায়ী একজন মানুষ স্ট্রেচারে হাজিরা দিতে এসেছেন। আদালত সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তার জামিনের আদেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, আসামি নিজেই হামলার শিকার হয়েছেন। পরে তার বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দেওয়া হয়। মামলা রেকর্ডের আগে পুলিশের তদন্ত করা প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে আদালত চত্বরে আফজালুল হকের স্ত্রী আকতারা আসলেও সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলেননি এবং কাজ শেষে দ্রুত চলে যান তিনি।