স্টাফরিপোর্টার,নীলফামারী॥ প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন বাংলাদেশের লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। গত ৬ মাসে পুরোই বদলে গেছে তাঁর ক্যারিয়ারের মানচিত্র। মেগা টুর্নামেন্টটি শেষে যখন টাইগার ক্রিকেটাররা নিজেদের মতো সময় কাটাচ্ছেন, তখনই বড় সুসংবাদ দিয়েছেন ২১ বছর বয়সী তরুন লেগ স্পিনার রিশাদ। ব্যক্তিগত জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে পা দিয়েছেন তিনি, বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। তবে তার জীবনের দ্বিতীয় ইংনিসে সঙ্গী হলেন কে? তা জানতে তার করা পোস্টের কমেন্টে অভিনন্দন ও পাত্রীর মুখ দেখার এক ঝড় উঠেছে।
বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেই রিশাদ নিজ শহর নীলফামারীতে ছুটে গিয়েছিলেন। সেখানেই অবস্থান করছিলেন গেল কয়েকদিন ধরে। যেখানে তার বন্ধু-বান্ধব ও সামাজিক কিছু কাজে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এর মাঝেই বৃহস্পতিবার জানালেন নিজের বিয়ের খবর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড একাউন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেইজ একাউন্টে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এই তরুণ ক্রিকেটার।
ফেসবুক পোস্টে “গট ম্যারিড” উল্লেখ করে রিশাদ লিখেছেন, বেশ রোমাঞ্চের সঙ্গে আনন্দের সংবাদ জানাচ্ছি যে, আমি যুগলবন্দি জীবন শুরু করেছি। আমাদের ভবিষ্যৎ হোক ভালোবাসা, আনন্দ ও সীমাহীন আশীর্বাদে ভরপুর। তবে ব্যক্তিগতভাবে ইসলামী বিধান পালন করায়, এখনই স্ত্রীর ছবি কিংবা কোনো তথ্য সামনে আনেননি রিশাদ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক আয়োজনে বিয়েটা অবশ্য হয়েছিল গত বছরের(২০২৩) ১৩ জুলাইয়ে। আজ(বৃহস্পতিবার) ছিল কন্যা-সম্প্রদানের দিন। শুক্রবার(১২ জুলাই) দুপুরে নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের বাড়িতে একেবারে সীমিত আয়োজনে হবে রিশাদ-সিদরাতুলের বউ ভাত।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে বাদ আছর পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ও নিকটতম বন্ধুদের নিয়ে ১১টি মাইক্রো বাস বহরে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন রিশাদ। ধীরগতিতে প্রায় চার কিলোমিটারের পথ অতিক্রমে সময় লাগায় প্রায় ৪০ মিনিট। কনের বাড়ির আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে পরিবারের সদস্য আর বরযাত্রীসহ বউ নিয়ে ফিরেন জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের শাহপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, রিশাদের স্ত্রীর নাম সিদরাতুল মুনতাহা। তিনি নীলফামারী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান শাখার প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি নীলফামারী সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের ইলিয়াস প্রামাণিক জুয়েলের কন্যা। কনে রিশাদের মামাতো বোন বলে জানা গেছে।
এদিকে বিয়ের খবরে অযাচিতভাবে উপস্থিত হন বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বেশ কিছু সাংবাদিক। তাদের সামনে বিয়ের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ছিল অনেকটাই লুকোচুরি। বিয়ে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে অনীহা ছিল দুই পরিবারের মধ্যে। এমনকি ছবি তোলায়ও ছিল বাধা। রিশাদও বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাননি সাংবাদিকদের সঙ্গে। কেন আড়ালে রাখার চেষ্টা বিয়ের বিষয়টি, সেটিও জানা যায়নি।
এদিকে বিয়ের কাজির নাম জানা না গেলেও ১০১ টাকা দেনমোহরের কথা জানান নিকটাত্মীয়রা। আর ওই কাবিননামায় কনেপক্ষের আত্মীয় কলেজ শিক্ষক আব্দুল হাকিম শাহ স্বাক্ষর করেছেন উকিল হিসেবে। কাবিননামায় কনে পক্ষের সাক্ষী হয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য দেওয়ান বিপ্লব এবং শাহানুর আলম শানু।
জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য দেওয়ান বিপ্লব ওই বিয়েতে কনে পক্ষের সাক্ষীর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ১০১ টাকা দেনমোহরে ওই কাবিননামা স¤পন্ন হয়। ধার্যকৃত দেনমোহর নগদ পরিশোধ হয়েছে। আজকে আনুষ্ঠানিকভাবে কনে বিদায় হলো।
বিয়ের শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে নবদ¤পতির জন্য দোয়া চেয়েছেন রিশাদের বাবা মো. নূর আলম ও কনের বাবা ইলিয়াস প্রামাণিক জুয়েল।
প্রসঙ্গতঃ- ২০২৩ সালের মার্চে জাতীয় দলে ডাক পান রিশাদ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি দিয়ে অভিষেক হয়। একই বছর ডিসেম্বরে সুযোগ পান ওয়ানডে দলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। গত ছয় মাসে রিশাদের হাত ধরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ ঘুচিয়েছে একজন লেগস্পিনারের হাহাকার।
সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টাইগাররা ব্যর্থ হলেও দল পেয়ে দুর্দান্ত এক লেগস্পিনার। বিশ্বকাপের প্রথম জয়ের অন্যতম নায়ক ছিল রিশাদ হোসেন। সেই সঙ্গে ম্যাচসেরা হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচটাও রাঙিয়ে ছিলেন রিশাদ হোসেন। বিশ্বকাপের নবম আসরে সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচে ২৫ ওভার বোলিং করেছেন রিশাদ। যেখানে এই স্পিন অলরাউন্ডার ৭.৭৬ ইকোনমি রেটে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন। টাইগার জার্সিতে ২৪টি আন্তজার্তিক টি-টোয়েন্টি খেলে ১৯.৬ গড় এবং ৭.৩৬ ইকোনমিতে ২৯
উইকেট শিকার করেছেন ২১ বর্ষী অলরাউন্ডার। তিনটি ওয়ানডেতে নিয়েছেন এক উইকেট। যা কোনো বাংলাদেশি বোলার হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটের কীর্তি। ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত করছেন রিশাদ। নিজের এই সুসময়ে তিনি জীবনের আরেকটি সুখবর দিলেন ভক্তদের।