নিউজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোও ছিল কোণঠাসা। তবে ৫ আগস্টের পর সে চিত্র বদলে যেতে থাকে। একে একে নানা ‘সুযোগসুবিধা’ পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
এই কম্পানির ৯০ শতাংশ শেয়ার গ্রামীণ সেন্টারের এবং ১০ শতাংশ শেয়ার গ্রামীণ শিক্ষার মালিকানায় রয়েছে।
ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই গ্রামীণ টেলিকমের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘সমাধান সার্ভিসেস লিমিটেড’ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডার (পিএসপি) হিসেবে কাজ করার জন্য অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ‘অনাপত্তি সনদ’ (এনওসি) পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটি পিএসপি লাইসেন্স পায়।
২০২১ সালের নভেম্বরে পিএসপি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো অনুমোদন দেয়নি।
২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ বাতিল করে নতুন করে গ্রামীণ ব্যাংক আইন ২০১৩ পাস করে।
২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বৈঠকে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য নতুন অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। বৈঠকটি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
নতুন অধ্যাদেশে শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা ৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা হয় এবং বোর্ডে নির্বাচিত ৯ জন সদস্যের মধ্য থেকে ৩ জন পরিচালক মনোনীত হবেন, যাদের মধ্য থেকে একজনকে বোর্ড চেয়ার হিসেবে নির্বাচন করা হবে। এতে সরকারের চেয়ার নিয়োগের ভূমিকা বাতিল হয়।
ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার দুই মাস পর ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেয়।
যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রামীণ ব্যাংক কর অব্যাহতি পেয়ে আসছিল, তবে ২০২০ সালে তা বাতিল করে আগের সরকার।
এই কর অব্যাহতির জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর মোহাম্মদ এনবিআর বরাবর আবেদনপত্র জমা দেন।
দেশের অন্যান্য মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের আয় থেকে কর অব্যাহতি পেয়ে আসছে।
অন্যদিকে, ড. ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিন পরই অর্থপাচার মামলায় ঢাকার একটি আদালত তাঁকে খালাস দেয়।
এ ছাড়া, শপথ নেওয়ার আগের দিনই শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালকদের যে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল, সেই মামলাতেও আদালত তাঁদের খালাস দেয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে এসব বিষয়ে বলেন, ‘যেহেতু সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে প্রধান উপদেষ্টার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এবং তিনি একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থার দিকে রূপান্তরের দায়িত্বে রয়েছেন, তাই এটা প্রত্যাশিত যে কোনো সিদ্ধান্ত যেন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয় এবং স্বার্থের সংঘাত না থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে যদি স্বার্থের সংঘাত না থেকে থাকে, তাহলে যেসব যৌক্তিক ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হয়েছে তা জনগণের সামনে প্রকাশ করাই হবে শ্রেয়।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘গ্রামীণের যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলছেন, সেইগুলোতে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত কিছু আছে কি না? এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তাঁর কোনো শেয়ার আছে? এসব প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি কোনো সুবিধা পান? আসলে কি এগুলো ড. ইউনূসের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান? গ্রামীণ নামটা না হয় ড. ইউনূস দিয়েছেন। তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের একটা শেয়ারের মালিক কি না? উনার ব্যক্তিগত কোনো সম্পত্তি আছে কোথায়? কেউ দেখাতে পারবে?’
এসব বিষয় নিয়ে চলতি মাসে একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনারা বের করে দেখান যে এসব প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা বা সরকার কোনো ভূমিকা রেখেছে কিনা। আমি সবাইকে এসব বিষয়ে তদন্ত করার অনুরোধ জানাই।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব উল্লেখ করেন, গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি ২০০৯ সালে আবেদন করেছিল। ওই সময়ে ড. ইউনূস সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে সৌদি ও জার্মানের একটা হাসপাতালের চেইন তাঁকে বলেছেন, ‘আপনি নার্স ও হাসপাতালের স্টাফ পাঠান।’ তারা বাংলাদেশের নিয়মিত কর্মী পাঠানো এজেন্সির মাধ্যমে নেবে না। কারণ ড. ইউনূসের মাধ্যমে নিলে খরচ একদম সীমিত পর্যায়ে থাকবে। সেই আলোকে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তারা অনুমোদন দেয়নি। এখন ২০২৪ সালের পর যদি লাইসেন্সের অনুমোদন পায়, তাহলে দোষ কি? বাংলাদেশে এই রকম সাড়ে ৩ হাজার এজেন্সি আছে।’
শফিকুল আলম বলেন, ‘গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় করতে চেয়েছিলেন ২০১২ সালের দিকে। ২০১৪ সালে পূর্বাচলে ২-৩ শ বিঘা জমি ক্রয় করেছিলেন। তখন যতবারই বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন, ততবারই তারা বলেছিল, ‘আবেদন জমা দিয়েন না। আমরা অনুমতি দিতে পারব না।’ এখন গত ৬ মাস অডিট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’