নিউজ ডেস্ক: ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ইরান যে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, তাতে হতাহতের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবরও এসেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের একটি উপশহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভেঙে পড়েছে বহু বাড়িঘর ও অফিস-আদালত, উল্টে গেছে শত শত গাছ।
শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি শহরে হামলা চালায় ইসরায়েল। তারা ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীকেও হত্যা করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা অসংখ্য ছবিতে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
হামলার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তেহরানকে লক্ষ্য করে শতাধিক ড্রোন ছোঁড়ে ইরান। এরপর শুক্রবার রাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। তাতে চার ইসরায়েলির মৃত্যু হয়। আহত হয় ৬৩ জন।
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তুর তালিকায় তেল আবিবের উপকণ্ঠে অবস্থিত রিশন লে-জিওন শহরও। বিবিসি বলছে, এ শহরের শান্তিপূর্ণ একটি আবাসিক এলাকা একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সেখানে বিস্ফোরণের তীব্রতায় অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, গাছ উলটে গেছে। তেহরানের হামলায় এ শহরে দুজনের মৃত্যুও হয়েছে। ইরানের হামলায় ইসরায়েলের কয়েক সেনা আহত হয়।
শনিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী—আইডিএফ বলেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তাদের মধ্যাঞ্চলে সাত সেনা ‘হালকা’ আহত হয়েছেন। তেল আবিবের বিভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর ফায়ার ফাইটার দল পাঠানো হয়। ছবি: রয়টার্স
ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরই ইসরায়েলজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে। সাইরেনের শব্দে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছোটেন। রিশন লে-জিওন শহরের বাসিন্দা ইফাত বেনহেইম বলেন, সাইরেন শোনার পর তারা ভবনের বেইসমেন্টে গিয়ে আশ্রয় নেন।
“আমরা দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হচ্ছিল, পুরো ভবন আমাদের ওপর ভেঙে পড়বে। এরপরই সব অন্ধকার হয়ে আসে।” হামলার পর সবাই বাইরে এসে দেখতে পান, আশপাশের বাড়িঘর সব ধ্বংস হয়ে গেছে; অনেক বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ে গেছে, রাস্তাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচের টুকরো। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৩০টি গাড়ি।
ইফাত বলেন, দুই প্রতিবেশী ছিল; দেখা হলেই ভালো-মন্দ জিজ্ঞাসা করত; হামলায় দুজনই মারা গেছেন।
সুনসান জেরুজালেমের ওল্ড সিটিও
দামেস্ক ফটক—ওল্ড জেরুজালেমের ‘ওল্ড সিটিতে’ প্রবেশের অন্যতম পথ, যেখানে ইরানের হামলার মধ্য দিয়ে ব্যারিকেড পড়ে গেছে। ফটকের পাশে কয়েকজন পর্যটক ওল্ড সিটিতে ঢোকার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ফিরিয়ে দেন।
হামলার পরই আইডিএফ ওল্ড সিটি বন্ধ করে দেয়। ফলে শনিবার শহরের সব সড়কই ছিল সুনসান। নিরবতা ছিল শহরের পুরনো সরু গলিগুলোতেও। এসব গলিতে সাধারণত স্কুটার চালানো কিশোর বা দোকানদারের ঠেলাগাড়ি থেকে গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। কিন্তু এদিন প্রায় সব দোকানই ছিল বন্ধ।