স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের পথে পথে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ান বৃদ্ধ গণি মিয়া(৫৫)। কথা বলেন কম। কখনও মসজিদের সামনে কখনও বা রাস্তার ধারে বসে থাকেন। মানুষজন এগিয়ে এসে টাকা পয়সা সহযোগীতা করেন। কেউ বা খাবার কিনে দেন। রাত হলে ঘুমিয়ে পড়তেন সৈয়দপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। গায়ে নোংরা পোশাক আর কাঁধে বড় বস্তা নিয়ে পথেই দিন কাটান ভবঘুরে গণি মিয়া। দেখলেই বোঝা যায় দীর্ঘদিন গোসল করেন না। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাবা দিবস ঘিরে বৃদ্ধ গণি মিয়াকে গোসল করাতে গিয়ে তার নোংরা বস্তা থেকে পেয়েছেন তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা।
বাবা দিবস উপলক্ষে শনিবার(১৪ জুন) হিউম্যানিটি বাংলাদেশ সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ৪ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরান। পরে ওই সন্ধ্যায় সৈয়দপুর রেলওয়ে মাঠে তারা গণি মিয়ার সন্ধান পেয়ে তাকে গোসল করাতে রাজি করান। গোসলের উদ্দেশ্যে তার গায়ের পোশাক খোলার সময় তার শার্টের হাতা, কলার ও পোশাকের বিভিন্ন জায়গায় মোড়ানো টাকা পাওয়া যায়। তার কাঁধের বড় নোংরা বস্তা থেকেও পাওয়া যায় অনেকগুলো এক হাজার, পাঁচশ ও একশ টাকার নতুন পুরাতন নোট। এছাড়া তার কাছে থাকা বস্তায় জমির একাধিক দলিল দস্তাবেজও পাওয়া গেছে।
টাকা দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকলে সংগঠনটির সেচ্ছাসেবক ময়নুল ইসলাম জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় টাকাসহ ওই ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে যান। সেখানে থানা পুলিশ ও উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তার উপস্থিতিতে টাকা গণনা করা হয়। এতে দেখা যায় তার কাছে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫২ টাকা রয়েছে। টাকাগুলো বর্তমানে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ের সমাজকর্মী রশিদুল ইসলামের কাছে গচ্ছিত রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, শহরে ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়ান গণি মিয়া। তাকে অনেকেই টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। কেউ আবার খাবারও কিনে দিতো। সেই টাকাই খরচ না করে তিনি বস্তা বা শার্টের বিভিন্ন জায়গায় গুঁজে রাখেন। লোকটি কখনো কারও ক্ষতি বা বিরক্ত করেনি।
সৈয়দপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দীন বলেন, ওই লোকটি বেশিরভাগ সময় শহরের জিআরপি এলাকায় থাকেন। প্রাথমিকভাবে জানা যায় তার বাড়ি রংপুরের আলমনগরের রবার্টসনগঞ্জ এলাকায়। তার পরিবারের লোকজনের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।