নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস শনাক্তে রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) থেকে রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত আরটি-পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে নমুনা বিশ্লেষণ চালু হয়নি।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপপরিচালক ডা. মো. ওয়াজেদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই দুই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে ৪০০ করে মোট ৮০০টি করোনা শনাক্তকরণ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। ধাপে ধাপে বিভাগের অন্যান্য হাসপাতালেও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য উপ-পরিচালক ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, আরটি-পিসিআর চালু করতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে কিটের মেয়াদ ও সরবরাহ সীমিত হওয়ায় ঢাকা থেকে অগ্রাধিকারে প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করছে। প্রাথমিকভাবে এই দুই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা বা সিডিসি’র তথ্য মতে, অ্যান্টিজেন টেস্ট মূলত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ও শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য ভাইরাস শনাক্তের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে বিশেষ ভাইরাস অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়, যা আসলে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এই টেস্টের মাধ্যমে মূলত একটি ভাইরাসের প্রোটিন অংশ শনাক্ত হয়। পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে যেমন ভাইরাসের নিউক্লিয়িক অংশ শনাক্ত করা হয়, ঠিক তেমন অ্যান্টিজেনের মাধ্যমে ভাইরাসের প্রোটিন অংশ শনাক্ত করা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যখন একজন মানুষ অসুস্থ থাকবেন, তখন তার নমুনা সংগ্রহের পর অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রেও নাক বা গলা থেকে সোয়াব বা নমুনা সংগ্রহ করে দেখা হয় সেখানে ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কিনা।
পিসিআর পদ্ধতিতে খুব অল্প পরিমাণ ভাইরাসও শনাক্ত করা সম্ভব। কারণ এটি ভাইরাসকে বৃদ্ধি করে বা অ্যাম্পলিফাই করে তাকে শনাক্ত করে। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে ভাইরাসের ছোট অংশ বা নিউক্লিয়িক অ্যাসিড থাকলেও সেটি শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে সেটি সম্ভব নয়। এটি ভাইরাসকে অ্যাম্পলিফাই করে না। এই টেস্টের মাধ্যমে শুধু ভাইরাসের উপস্থিতি জানা যায়। অনেক সময় কোনো রোগীর দেহে ভাইরাসের পরিমাণ কম থাকলে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে তার করোনাভাইরাস পজিটিভ হওয়ার বিষয়টি নাও জানা যেতে পারে।
অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি এর ফলাফল বা টেস্টের রেজাল্ট পাওয়া যায়। এছাড়া এই টেস্টে তেমন কোনো ধরনের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি দরকার হয় না বলে ফিল্ডে বা মাঠ পর্যায়েই এই পরীক্ষা চালানো সম্ভব। তবে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়। ফলাফল কতটা নির্ভুল হবে, তা নির্ভর করে কিট ও নমুনার মান এবং সংক্রমণের কোন পর্যায়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে তার উপর।
মানহীন কিট হলে বা নমুনার মান খারাপ হলে অ্যান্টিজেন টেস্টের ফলাফল ‘ফলস নেগেটিভ’ হতে পারে। তবে এই টেস্টে ‘ফলস পজেটিভ’ আসার আশঙ্কা কম বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
তবে অ্যান্টিজেন টেস্টে ফল পজিটিভ এলে বুঝে নিতে হবে যে ওই নমুনা সংক্রমিত। ফল যদি নেগেটিভ আসে তাহলে আরেকবার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।